গঙ্গেশানন্দ তিথাপাদম ওরফে হরি স্বামী
খোদ কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘কোনও সন্দেহ নেই, বীরের মতো কাজ করেছে মেয়েটা।’’ আর ‘ওই’ লোকটা? হাসতে হাসতে পিনারাই বিজয়ন বলছেন, ‘‘এর চেয়ে বড় শাস্তি কী হতে পারে!’’
নিজেকে ‘সাধু’ বলা বছর চুয়ান্নর লোকটা আপাতত হাসপাতালে। প্লাস্টিক সার্জারি করে তার প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পুরুষাঙ্গ জোড়া দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। আর ২৩ বছরের একটি মেয়ে নির্ভয়ে পুলিশকে বলেছেন, ‘‘সাত বছর ধরে আমায় ধর্ষণ করছে ওই সাধু। এত দিন ভয় পেতাম। শুক্রবার সহ্য করতে না পেরে ওর পুরুষাঙ্গটাই কেটে দিয়েছি।’’
তিরুঅনন্তপুরমের পেট্টা এলাকায় এই ঘটনা তোলপাড় ফেলেছে দেশ জুড়ে। তরুণীটি পুলিশকে জানিয়েছেন, গঙ্গেশানন্দ তিথাপাদম ওরফে হরি স্বামী নামে ওই সাধুকে প্রথম বার বাড়িতে এনেছিলেন তাঁর মা। বাবা পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী। তাঁকে সারিয়ে তুলতে পুজোআর্চা করার জন্যই নাকি আনা হয় হরিকে। তরুণী জানাচ্ছেন, সেই থেকেই শুরু হয় তাঁদের বাড়িতে ওই সাধুর নিয়মিত যাতায়াত। আর কখনও পুজোর নামে, কখনও অন্য ছুতোয় তাঁকে ধর্ষণ। মেয়েটির বয়স তখন ১৬।
সাত বছর বিনা বাধায় চলে নির্যাতন। গত রাতেও ওই তরুণীর উপরে চড়াও হয়েছিল হরি। কিন্তু জানত না, এ বার নিজের বালিশের নীচেই একটি ধারালো ছুরি লুকিয়ে রেখেছে তার ‘শিকার’। হরি কাছে আসতেই তার নিম্নাঙ্গে ছুরি চালিয়ে দেন তরুণী। চিৎকারে ছুটে আসে বাড়ির অন্যরা। তাঁরাই রক্তাক্ত, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হরিকে নিয়ে যান তিরুঅনন্তপুরম মেডিক্যাল কলেজে। অস্ত্রোপচারের পরে তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
পুলিশ জানিয়েছে, নিজেকে কোল্লমের চাত্তাম্বি স্বামী আশ্রমের আবাসিক বলে দাবি করেছে অভিযুক্ত। যদিও ওই আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১৫ বছর আগে সেখানে ব্রহ্মচারী ছিল হরি। এখন আশ্রমের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে হরির বিরুদ্ধে শিশু-যৌন নিগ্রহ প্রতিরোধ আইন ‘পকসো’-য় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। রেহাই পাচ্ছেন না তরুণীর মা-ও। পুলিশ মনে করছে, মেয়ের উপরে লাগাতার এমন নির্যাতন দেখেও মুখ বুজে ছিলেন তিনি। কাজেই মামলা হয়েছে মায়ের বিরুদ্ধেও। তবে আইন মোতাবেক ওই তরুণীর ক্ষেত্রেও আত্মরক্ষায় পাল্টা আক্রমণ সংক্রান্ত ধারা প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তরুণীর সাহসের প্রশংসা করেছেন কেরলের মহিলা কমিশনের সদস্যা প্রমীলা দেবী। তিনি বলেছেন, ধর্মের নামে এ সব ভণ্ডামি বরদাস্ত করা হবে না। এই রকম ‘সাহসী’ মেয়ে সকলেরই আদর্শ হওয়া উচিত। যদিও মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন যে ভাবে আগেভাগেই মেয়েটির কাজকে সমর্থন ও অভিযুক্তের পরিণামকে ‘উপযুক্ত সাজা’ বলে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে কারও কারও।
হাসপাতালে শুয়ে হরি অবশ্য দাবি করেছে, নিজেই নিজের পুরুষাঙ্গ কেটেছে সে। কারণ তার নাকি সেটির আর প্রয়োজন ছিল না। পুলিশ বলছে, ধর্ষণের দায় এড়াতেই গল্প ফাঁদছে ‘সাবধান সাধু’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy