Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

নিহত ছেলের স্মৃতিতে ইফতার পার্টি যশপালের

পুত্রহারা যশপাল মনে করিয়ে দেন, বন্ধু অঙ্কিতের শেষকৃত্যে যাবতীয় আচার পালন করেছিলেন আজ়হারই। আর এই বাস্তবকেই ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। যশপাল হৃদরোগী, তাঁর স্ত্রী কমলেশেরও একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু শরীর তাঁদের স্বপ্নকে দুর্বল করতে পারেনি।

মিলনমেলা: একটি অনুষ্ঠানে বাবা-মা ও আত্মীয়দের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

মিলনমেলা: একটি অনুষ্ঠানে বাবা-মা ও আত্মীয়দের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৮ ০৫:০০
Share: Save:

ছেলে নেই। তবে তাঁর স্মৃতি যেন থাকে। তাঁর নাম যেন ছড়িয়ে যায় ছড়িয়ে যায় সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে। এই আশায় ৩ জুন ইফতার পার্টির আয়োজন করছেন দিল্লিতে নিহত অঙ্কিত সাক্সেনার বাবা যশপাল। মঙ্গলবার তিনি ফোনে বলেন, ‘‘অঙ্কিতের নামে ট্রাস্ট তৈরি করছি আমরা। এই অনুষ্ঠানেই সেটির পথ চলা শুরু হবে।’’

গত ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিম দিল্লির রঘুবরনগরে নিজের বাড়ির কাছেই গলা কেটে খুন করা হয় বছর তেইশের তরুণ ফটোগ্রাফার অঙ্কিতকে। দু’জনের মধ্যেকার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি মুসলিম প্রেমিকার পরিজনেরা। তার জেরেই একদিন বচসা চলাকালীন অঙ্কিতের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় মেয়েটির বাবা। গ্রেফতার করা হয় বাবা-মা-কাকাকে। আটক করে হোমে পাঠানো হয় তরুণীর নাবালক ভাইকে।

এই খুনের সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টাও কম হয়নি। তখনও রুখে দাঁড়িয়েছিলেন যশপাল। ক্ষোভ জানিয়ে বলেছিলেন, তাঁর ছেলের খুনের ঘটনায় যেন সাম্প্রদায়িক রং না লাগানো হয়। এ বার নিজে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চান ছেলের নামে তৈরি ট্রাস্ট থেকে। যশপালের কথায়, ‘‘আমার ছেলেকে খুনে যারা দোষী, তাদের ধর্মের জন্য ওই ধর্মের অন্যদের কেন দায়ী করা হবে? আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনেই অসুস্থ। আমাদের দু’জনকে তো রোজ সঙ্গ দেন, খাবার খাওয়ান আশপাশের বহু মুসলিম পড়শি। আমাদের পাশের বাড়ির ইজ়হার আলম এবং ওঁর ছেলে আজ়হারই আমাদের ইফতার পার্টির প্রস্তাবটা দেন। ওঁরা তো আমাদের পরিবারেই অংশ।’’

পুত্রহারা যশপাল মনে করিয়ে দেন, বন্ধু অঙ্কিতের শেষকৃত্যে যাবতীয় আচার পালন করেছিলেন আজ়হারই। আর এই বাস্তবকেই ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। যশপাল হৃদরোগী, তাঁর স্ত্রী কমলেশেরও একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু শরীর তাঁদের স্বপ্নকে দুর্বল করতে পারেনি। যশপাল বলেন, ‘‘আমরা চাই, আমাদের ছেলের নাম সবার মনে থাকুক। সেটা কোনও ভাল কাজের মধ্যে দিয়েই সম্ভব। আর এ জন্য তো আমাদের শক্ত হতেই হবে।’’ কিছুদিন আগে এলাকার দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের হস্টেলের অনুষ্ঠানেও তিনি ছেলের নাম লেখা টি-শার্ট বিলি করেন। তিনি জানান, ‘অঙ্কিত সাক্সেনা ট্রাস্ট’ নানা শুভকাজে জড়িত হবে। এরপরে ইদ, রাখিবন্ধন, গণেশ বিসর্জনের মতো অনুষ্ঠানেও তাঁরা এমন আয়োজন করবেন।

এই কাজে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছেন বলে জানালেন যশপাল। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম ছোট আয়োজন হবে। কিন্তু এত ভাল সাড়া পাচ্ছি যে ঠিক করেছি, এলাকার কোনও পার্কেই ইফতার পার্টি হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ankit Saxena Yashpal Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE