মেনু সাংমা ও গ্রাভিটা এম মারাক। নিজস্ব চিত্র।
ওঁদের দু'জনের বাড়িই উত্তর-পূর্বের অন্যতম সর্বাধিক নাশকতা প্রবণ এলাকা গারো পাহাড়ে। জঙ্গি হানা, তোলাবাজি তাঁদের নিত্যসঙ্গী। পুলিশে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেই গ্রামবাসীদের গুলি করে মারা হয় সেখানে। বাদ যায় না মেয়েরাও। তেমন এলাকা থেকে উঠে আসা মেনু সাংমা ও গ্রাভিটা এম মারাক এক ইতিহাস গড়ে ফেললেন। তাঁরাই মেঘালয় পুলিশের কম্যান্ডো বাহিনী 'স্পেশ্যাল ফোর্স-১০'' বা 'এসএফ-১০'-এর প্রথম দুই মহিলা কম্যান্ডো।
আরও পড়ুন: এলেম মেঘের দেশে
যাত্রাটা সহজ ছিল না। দারিদ্র ছিলই। ছিল পরিবার ছেড়ে থাকার কষ্ট। সবচেয়ে বড় প্রতিকূলতা ছিল পুরুষের আধিপত্য থাকা কম্যান্ডো বাহিনীতে লড়ে জায়গা করে নেওয়া। জঙ্গলে যুদ্ধ, রাতে অভিযান, পাহাড় চড়া, জলে ঝাঁপানো, মার্শাল আর্ট-কম্যান্ডো প্রশিক্ষণে এই সবেই হয়ে উঠতে হয় দক্ষ। মেনু ও গ্রাভিটাকে ওই সব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণরত পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সাফল্য।
শুক্রবার মাওইয়ংয়ে প্রথম মেঘালয় পুলিশ ব্যাটেলিয়নে ২৫২ জন কম্যান্ডোর পাসিং আউট প্যারেডে রোগা চেহারার মেয়ে দু'জনকে দেখে অবাক মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। দু'জনকে আলাদা করে উৎসাহ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: চেরাপুঞ্জি-মাওলিনং-নারটিয়াং
মেয়েরা জানায়, গত বছরেও এক প্রশিক্ষণ নিতে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু এঁটে উঠতে পারেননি। আসেনি সাফল্য। তবে হতাশা নয়, বেড়েছিল জেদ। মেনু জানান, দয়া নয়, পুরুষদের পাশাপাশি লড়ে জায়গা করে নিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। বুঝেছিলেন পুরুষদের সঙ্গে থাকতে গেলে পুরুষদের মতোই হয়ে উঠতে হবে। শুরু হয় প্রতি পদক্ষেপে আড়াইশো পুরুষ আর দুই কন্যার কম্যান্ডো হয়ে ওঠার লড়াই।
আরও পড়ুন: পোশাক যথেষ্ট ভদ্র নয়, খাবার টেবিল থেকে বিতাড়িত মহিলা
পাসিং আউট প্যারাডে সাফল্যের শংসাপত্রের সঙ্গেই এত দিন পরে গর্বিত বাবা-মার সঙ্গে দেখা হওয়াটা ছিল উপরি পাওনা। গ্রাভিটা জানান, পরিবারের সমর্থন ও উৎসাহ না পেলে এই অনিশ্চিত, ব্যতিক্রমী পথে পা রাখা সম্ভব হত না। মিনুর ছোট বোন ইতিমধ্যেই দিদির মতো হতে চেয়েছে। তাঁদের আশা, গারো পাহাড়ের আরও মেয়ে এবার পুলিশ বাহিনীতে নাম লেখাতে উৎসাহী হবে। শুধু চাপা দুঃখ, অহর্নিশ কর্তব্যরত থাকার এই পেশায় নাম লিখিয়ে আর বড়দিনের ছুটিতে আগের মতো বাড়ির লোকের সঙ্গে মেতে ওঠা সম্ভব হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy