এ দেশে ট্রেন নাকি গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে সময়ের আগেই!
লোকাল থেকে দূরপাল্লা, এক্সপ্রেস থেকে রাজধানী-শতাব্দী— ট্রেন দেরিতে চলায় যাত্রীরা যখন নাজেহাল, তখন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের ওই দাবি শুনে রাজ্যসভার আসন থেকে প্রায় ছিটকে পড়ার দশা শাসক-বিরোধী সব দলের সাংসদেরই। হতবাক প্রশ্নকর্তা সমাজবাদী পার্টির নেতা নীরজ শেখরও। প্রথমে নীরবতা। তার পর চাপা গুঞ্জনের মধ্যেই নীরজ চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর কাছে জানতে চান, উত্তরটা তাঁর ঠিক বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না। মন্ত্রী ভুল উত্তর দিলে তিনি কার দ্বারস্থ হবেন? গোটা কক্ষ জুড়ে চাপা হাসির আওয়াজ। দীর্ঘ সাংসদ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে দক্ষ হাতে রাশ ধরার চেষ্টায় বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘দরকারে আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আমি বুঝিয়ে দেব।’’
কী উত্তর দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী?
উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার সাংসদ নীরজের এক প্রশ্নের উত্তরে পীযূষ জানান, এ বছর ১ অগস্ট থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে চলা ১৬৭৮টি মেল/এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে ১১৪০টি ট্রেন সময়ে বা তার আগেই গন্তব্যে পৌঁছেছে। যে উত্তর মানতে পারেননি কেউই। নীরজ বলেন, ‘‘বালিয়া থেকে দিল্লিতে রাজধানী এক্সপ্রেসে ফিরছিলাম। সঙ্গে রেল প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিন্হা। ভেবেছিলাম, রেলমন্ত্রী সঙ্গে থাকায় নিশ্চয়ই সময়ে পৌঁছব। কিন্তু রাজধানী পৌঁছল দেরিতেই।’’ গয়ালের উদ্দেশে নীরজের কটাক্ষ, ‘‘ভাল লাগছে এই ভেবে যে রেলমন্ত্রী ট্রেনে না চেপেই, ভারতীয় রেল সম্পর্কে বেশ ভাল-ভাল কথা বলছেন।’’
প্রশ্নোত্তরে নিজের নাম উঠে আসায় বলার জন্য এগিয়ে আসেন মনোজ। হাওড়া-দিল্লি রুটে ট্রেন দেরিতে চলার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘ওই সব রুটে লাইনের ক্ষমতার চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি গাড়ি চলছে। ফলে লাইনে ভিড় রয়েছে। আবার পুরনো ট্র্যাক পাল্টে নতুন ট্র্যাক বসানো হচ্ছে। লাইন রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য গাড়ি ধীরে চালানো হচ্ছে।’’ কটাক্ষ শোনা যায়, তা হলে তো ওই লাইনে বুলেট ট্রেন চালানো উচিত প্রধানমন্ত্রীর। মনোজ বলেন, ‘‘বুলেট ট্রেনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই!’’
মনোজ যখন পরিস্থিতি প্রায় সামলে ফেলেছেন, তখন হঠাৎ জবাব দিতে দাঁড়িয়ে পড়েন গয়াল। নীরজের উদ্দেশে বলেন, ‘‘ভুলে যাবেন না মুম্বইয়ে সিএ পড়ার সময় আট বছর আমি ট্রেনে যাতায়াত করেছি।’’ তার পরেই নীরজের দলীয় পরিচয়কে তুলে ধরে বলেন, ‘‘আপনি সমাজবাদী মানসিকতা থেকে এ সব কথা বলছেন।’’ নীরজের পাল্টা, ‘‘আরে আমি তো সত্যিই সমাজবাদী বাড়ির ছেলে।’’ পরে গয়াল দাবি করেন, সিএ পড়ার সময় তিনি যত না পড়াশুনা করেছিলেন, রেলমন্ত্রী হয়ে তার থেকে বেশি করতে হচ্ছে। শুধু নীরজই নন, রেলের বেহাল দশা নিয়ে আজ প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের যোগেন চৌধুরীও। হাওড়া-বোলপুরের মধ্যে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের হাল নিয়ে সরব হন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy