কপ্টার কাণ্ড নিয়ে বিরোধী শিবিরে একেবারে দলছুট তৃণমূল।
আত্মপক্ষ সমর্থনে সনিয়া গাঁধী আজ দলের গোটা ফৌজ নামিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন মুলায়ম, মায়াবতী ও নীতীশ কুমারের দল। কিন্তু কংগ্রেস সভানেত্রীর বিরুদ্ধে ‘রণং দেহি’ রূপ নিয়ে আজও বিজেপির হাত শক্ত করতে দেখা গিয়েছে তৃণমুল সাংসদদের।
দু’দিন আগেই রাজ্যসভায় বারবার ‘গাঁধী’ নাম নিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তৃণমূলের সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাতেও দমেননি তিনি। আজ সনিয়ার নাম না নিলেও আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল আরও তীব্র। বারবার ‘চোর মাচায়ে শোর’ বলে সুখেন্দু পরোক্ষ আক্রমণ করেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে। টেনে আনেন সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের নামও।
অথচ রাজ্যসভায় আজ কপ্টার দুর্নীতি নিয়ে আলোচনায় মায়াবতী, মুলায়মের দলের রামগোপাল যাদব, নীতীশ কুমারের দলের সাংসদ শরদ যাদব, এমনকী বামেদের পক্ষ থেকে তপন সেনরাও বিজেপির বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখে সনিয়ার পাশে দাঁড়ান।
সংসদ চত্বরে আজ সনিয়া গাঁধী বলেন, এই সব অভিযোগে কোনও সত্যতা নেই। তাঁর সুরেই সুর মিলিয়ে রামগোপাল বলেন, দু’বছর মোদী সরকার কেন ঠুঁটো হয়ে বসে ছিল? শরদ যাদবও একই ভাষায় বলেছেন, সরকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই বিরোধী দলের কিছু নেতাকে বদনাম করতে নেমেছে। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত করার দাবি তুলেছেন মায়াবতী ও তপন সেনও।
বিভিন্ন দল থেকে এই সমর্থন পেয়ে আরও জোর পেয়ে যান কংগ্রেস নেতারা। সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও তোপ দাগেন, অপবাদ না ছড়িয়ে সরকার তদন্ত করুক। দোষীদের শাস্তি দিক। এর আগে দলের পক্ষ থেকে আইনজীবী সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দাবি করেছিলেন, ইতালির আদালতে কোথাও সনিয়া গাঁধীকে দোষী বলা হয়নি।
এই ডামাডোলের মধ্যে একদম উল্টো সুর ছিল তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের গলায়। তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘ইতালির আদালতের রায়ে এক পরিবারের কথা বলা আছে। সেটি এ দেশের কোনও পরিবার নয় তো?’’ আহমেদ পটেলের নাম না করে সুখেন্দুর দাবি, ‘‘বয়ানে দু’টি সাঙ্কেতিক অক্ষর রয়েছে— ‘এ পি’। এই ‘আত্মানন্দ পরমানন্দটি’ কে?’’ তারপরেই কংগ্রেস বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে তিনি স্লোগান তোলেন, ‘‘চোর মাচায়ে শোর।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারে গিয়ে সনিয়া মমতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তার পরেই গাঁধী পরিবারের প্রতি সৌজন্যে ইতি টানার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু বাম ও কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের ভোটে তৃণমূল ও বিজেপির যে আঁতাঁত হয়েছে, সংসদে তারই প্রতিফলন ঘটছে। বিরোধী শিবির থেকে তৃণমূলের সমর্থন পেয়ে খুশি বিজেপিও। সুখেন্দুর বহিষ্কারের দিনও বিজেপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে তাঁর সমর্থনে রাজ্যসভায় লড়েছিলেন।
তবে তারা যে গাঁধী পরিবারকে রেয়াত করবে না, আজ ফের তা স্পষ্ট করে দিয়েছে মোদী সরকার। আজ রাজ্যসভায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আলোচনার পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর কারও নাম না করেই বলেন, ইতালির আদালতের রায়ে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের নিয়ে তদন্ত হবেই। যাঁরা এই দুর্নীতির পিছনে রয়েছেন, যাঁরা সমর্থন করেছেন এবং যাঁরা মুনাফা লুটেছেন, কেউই ছাড় পাবেন না।
এর আগে বিজেপির পক্ষ থেকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, সিবিআইয়ের উচিত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে আগে জেরা করা। কারণ, তিনি নিজে সৎ হয়েও ‘সুপার পিএম’ (সনিয়া গাঁধী)-র থেকে নির্দেশ নিতেন। সরকারি পদে না থেকেও সনিয়া যে চুক্তির নেপথ্যে ছিলেন, সেটি ইতালির আদালতের রায়ে স্পষ্ট, আজ ফের দাবি করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy