সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে মুম্বইয়ে এক নর্তকী। এএফপি
নিয়ন্ত্রণ থাকুক, কিন্তু ‘পুরোপুরি নিষিদ্ধ’ করা যাবে না— মহারাষ্ট্রে ডান্সবার ফের খোলার নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার এমন মন্তব্যই করল সুপ্রিম কোর্ট।
হোটেল-রেস্তরাঁ-বারে ‘অশালীন নাচ নিষিদ্ধকরণ ও মহিলাদের সম্মান রক্ষার্থে’ ২০১৬ সালে একটি আইন এনেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। সেই আইনের বেশ কিছু ধারা এ দিন বাতিল করে দিয়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, মুম্বই-সহ মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ফের ডান্সবার খোলা যাবে। বিচারপতি এ কে সিক্রি মন্তব্য করেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিকতার মাপকাঠিও পাল্টাচ্ছে। নৈতিকতার কোনও একটি বিশেষ ধারণা আরোপ করে সরকার সমাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’’
২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন আইন এনে নানা ভাবে ডান্সবার নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য সরকার। কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার নর্তকী। সুপ্রিম কোর্টের মতে, ‘‘অযৌক্তিক শর্ত চাপিয়ে ডান্সবার এ ভাবে নিষিদ্ধ করা যায় না। এখন রাজ্যে কোনও ডান্সবারের অস্তিত্বই নেই। এটা হতে পারে না। নিয়ন্ত্রণ থাকুক। কিন্তু পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চলতে পারে না।’’
রায় কী বলছে • ধর্মস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যেও ডান্সবার তৈরি করা যাবে • টাকা ওড়ানো যাবে না, দেওয়া যাবে বকশিশ • ডান্সবার খোলা থাকবে সন্ধে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা • বার ও নাচের জায়গা আলাদা নয় • থাকবে না সিসিটিভি, কারণ তা গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে ক্ষুব্ধ শিবসেনা বলেছে, রাজ্য সরকারের তৈরি ডান্সবার নিয়ন্ত্রণ আইনে ফাঁকফোকর থাকার জন্য এমনটা হল। এটা রাজ্যেরই ব্যর্থতা। এনসিপি-র দাবি, বিজেপির নেতা, সরকার এবং ডান্সবার মালিকদের মধ্যে আঁতাঁত রয়েছে। আর সে জন্য সুপ্রিম কোর্টে লড়াইয়ে হেরে গিয়েছে রাজ্য।
২০১৬ সালের ওই আইনে ডান্সবারে নাচের জায়গায় মদ পরিবেশনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আইনে ছিল, ‘সচ্চরিত্র’ এবং পুলিশের খাতায় নাম নেই, এ রকম ব্যক্তিদেরই শুধু ডান্সবার খোলার অনুমোদন দেওয়া হবে। এই ধারা নিয়েও প্রশ্ন তুলে শীর্ষ আদালত বলেছে, ভাল চরিত্রের সংজ্ঞা ঠিক করা কঠিন কাজ।
ধর্মীয় স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে ডান্সবার তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্যের যে আপত্তি ছিল, তাকে ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে বিচারপতি এ কে সিক্রির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, কোথাও ডান্সবার তৈরিতে বাধা নেই। ‘টাকা ওড়ানোর’ যে চল ডান্সবারে ছিল, তাতে সায় না দিলেও নর্তকীদের আলাদা করে ‘বকশিশ’ দেওয়ায় কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। ডান্সবারে সিসিটিভি লাগানোও বাধ্যতামূলক নয়, জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতির মন্তব্য, তা হলে গোপনীয়তা লঙ্ঘন হবে। সন্ধে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ডান্সবার খোলা রাখা যাবে বলে জানিয়েছে আদালত।
২০১৬ সালের আইন চ্যালেঞ্জ করে গত বছর অগস্টে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের হোটেল এবং রেস্তরাঁ মালিকরা। সে সময়ে শীর্ষ আদালত রায় স্থগিত রাখে। আবেদনকারীরা বলেছিলেন, ২০০৫ সালে মহারাষ্ট্র সরকারের আইনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল বম্বে হাইকোর্ট। সেই রায় বহাল রেখেছিল শীর্ষ আদালতও। এর পর ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে ফের নতুন আইন এনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উড়িয়ে দিতে চেয়েছে রাজ্য সরকার।
গত বছর ১১ জানুয়ারি শীর্ষ আদালত রাজ্যকে বলেছিল, যে সব ডান্সবার মালিককে অনুমোদন দেওয়া এখনও বাকি রয়েছে, পুরনো আইন মেনে এবং সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে যা যা নির্দেশ এত দিন দিয়ে এসেছে, তা অনুসরণ করে সেগুলির ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে। ‘‘রাজ্যে নীতি পুলিশের রমরমা চলছে’’, তখনও মহারাষ্ট্র সরকার সম্পর্কে এ রকম মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। মহারাষ্ট্র সরকার আবার এক হলফনামায় তাদের নয়া আইনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলে, ‘‘এই ধরনের অশালীন নাচে মহিলাদের সম্মানহানি হয়। মানুষের নৈতিকতাও নষ্ট হয়। এ সব জায়গায় নাচের আড়ালে বহু অনেক অনৈতিক কাজকর্ম চলে। যৌনব্যবসাও ফুলে ফেঁপে ওঠে। প্রকাশ্য স্থানে অশালীনতা চলতে দেওয়া ভারতের জননীতির মধ্যে পড়ে না। মহারাষ্ট্র আইন সেই জননীতি রক্ষা করে।’’ সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের সেই আইনের অনেকগুলি ধারা বাতিল করে দেওয়ায় মুখ পুড়ল রাজ্যেরই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy