সংশয়প্রবণ সেই কূটনীতিবিদদের আশঙ্কাই সত্যি হল। যাঁরা বলেছিলেন, সার্ক সম্মেলনের নেমন্তন্ন গ্রহণ করা এবং পাকিস্তানে পৌঁছে মোদীর সেই সম্মেলনে অংশ নেওয়া— দুটো এক জিনিস নয়! কারণ, দেশটির নাম পাকিস্তান। না আঁচানো অবধি তাদের কোনও কথাতেই বিশ্বাস নেই। সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সরতাজ আজিজের একটি মন্তব্যই ফের সে কথা ফের প্রমাণ করল। আজিজ জানিয়েছেন, আলোচ্য সূচিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গটি না রাখলে ভারতের সঙ্গে কোনও আলোচনাতেই যাবে না পাকিস্তান। বোঝা গেল, সন্ত্রাস নিয়ে দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মধ্যে বৈঠক আপাতত বিশ বাঁও জলে। একই সঙ্গে ২৬/১১-র হামলার বিচার দ্রুত শেষ করার পথ খোঁজার যৌথ অঙ্গীকারের ভবিষ্যত্ও যে অন্ধকার তারও ইঙ্গিত মিলেছে আজিজের মন্তব্যে। তিনি বলেছেন, মুম্বই হামলা সম্পর্কে ভারতের কাছ থেকেও এখনও অনেক তথ্য পাওয়া বাকি রয়েছে। এই অবস্থায়, ঘোষণা সত্ত্বেও সার্ক উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদীর পাকিস্তান সফর আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়ে গেল।
রাশিয়ার উফায় গত সপ্তাহেই সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর সম্মেলনে ঘণ্টাখানেকের একান্ত বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদী এবং নওয়াজ শরিফ। সেখানে ঠিক হয়, সার্ক সম্মেলন উপলক্ষে আগামী বছরে পাকিস্তান যাবেন নরেন্দ্র মোদী। এবং তার আগে নয়াদিল্লিতে সন্ত্রাস নিয়ে বৈঠকে বসবেন দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। যদিও নওয়াজের সদিচ্ছা নিয়ে ভারতের কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু, পাকিস্তানের মতো একটি দেশে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব আর এ দেশে মোদীর কর্তৃত্ব— দুটো যে এক জিনিস নয়, সেটাও ভারত বোঝে। কেন না, সে দেশে প্রধানমন্ত্রীর সমান্তরালে আরও কয়েকটি শক্তিকেন্দ্র কাজ করে। তারা কোনও গণতন্ত্রের ধার ধারে না। তাদের কাছে এই সব আলাপ-আলোচনার কোনও গুরুত্ব নেই। সেই শক্তিকেন্দ্রগুলি যে কাশ্মীরকে বাদ দিয়ে কোনও আলোচনায় বসতে দেবে না নওয়াজকে, সেটাও ভারতের ভাবনায় ছিল। কাজেই উফার ওই বৈঠকের পর দু’দেশের সম্পর্ক একেবারে জলবত তরলং হয়ে যাবে, খুশির বাতাবরণে দু’দেশ মুড়ে যাবে এমনটা বোধহয় কোনও পক্ষই ভাবেনি। আজিজের এ দিনের মন্তব্য তাই ভারতকে খুব একটা আশ্চর্য করেনি।
এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে পাকিস্তান যে ভারতের দিকে সন্ত্রাসের আঙুল তুলবে সে কথাও জানত নয়াদিল্লি। বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে আসছে। তাদের অভিযোগ, সে দেশের বালুচিস্তান-সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে সন্ত্রাসের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে তো বটেই অস্ত্রপাতি দিয়েও নাকি সাহায্য করা হয়। পাকিস্তানের সেই ধারাবাহিক অভিযোগ যে দিল্লিতে এসে বদলে যাবে, এমনটা ভাবেনি দিল্লিও। কাজেই, কাশ্মীর-ইটের প্রসঙ্গে বালুচিস্তানের পাটকেল যে খেতেই হবে সে কথা দিল্লি বিলক্ষণ জানত।
মোদীর শপথে শরিফ দিল্লি এসেছিলেন। গত বছর মে মাসে দিল্লিতে দু’জনের সেই শেষ বৈঠক। তার পর সময় গড়িয়েছে, পাকিস্তান সম্পর্কে কড়া হয়েছে ভারত। এমন একটা তপ্ত বাতাবরণে সে দিনের বৈঠকের পর কূটনীতিবিদদের অনেকে বলেছিলেন, ভারত-পাক সম্পর্কে নয়া মোড় এল। কিন্তু, পথ যে আদৌ মোড় নেয়নি, সম্পর্ক যে একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে তার প্রমাণ এ দিনের পাক মন্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy