ডান্স বার নিয়ন্ত্রণে মহারাষ্ট্র সরকারের কঠোর বিধি শিথিল করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এখন থেকে একই জায়গায় মদ্যপান এবং নাচ চলতে পারে বলে জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। তবে, কোনও ধর্মীয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ডান্স বার করা যাবে না, মহারাষ্ট্র সরকারের এই আইন মুম্বইয়ের মতো শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে না বলেও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই নির্দেশে খুশি মহারাষ্ট্রের হোটেল ও রেস্তরাঁ সংগঠনগুলি। খুশি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্যরাও।
ডান্স বার তুলে দিতে গত ১৫ বছর ধরেই মহারাষ্ট্রে সক্রিয় একের পর এক রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, এই ডান্সবারগুলি অশালীনতা ছড়ায় এবং প্রকারান্তরে যৌন ব্যবসাকেই মদত দেয়। অন্য দিকে রেস্তরাঁ এবং বার মালিক সংগঠনগুলির দাবি ছিল, বারগুলিকে নিষিদ্ধ করলে যৌন ব্যবসায় মদত দেওয়া তো কমবেই না, উল্টে বার নর্তকীদেরই পরোক্ষে যৌন পেশায় ঠেলে দেওয়া হবে। এক সময়, রাজ্য জুড়ে প্রায় সাতশো ডান্স বারে পঁচাত্তর হাজার মহিলা কাজ করতেন। মহারাষ্ট্র সরকার এই বারগুলি নিষিদ্ধ করায় সংসার চালাতে অনেকেই দেহ ব্যবসায়ে নেমেছেন বলে আদালতে জানান তাঁরা।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অবশ্য ধাক্কা খেল মহারাষ্ট্র সরকার। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নাচের জায়গা এবং মদ্যপানের জায়গার মধ্যে কোনও ব্যবধান থাকার দরকার নেই। এর ফলে একই জায়গায় নাচ করা এবং মদ্যপানে আর কোনও বাধা থাকল না। পাশাপাশি কোনও ডান্স বারে নর্তকীর নাচে খুশি হয়ে টিপস বা উপহার দেওয়াও চলতে পারে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।কিন্তু নর্তকীদের দিকে বা উদ্দেশে টাকা ওড়ানো যাবে না বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ডান্স বার করা যাবে না, মহারাষ্ট্র সরকারের এই আইনের বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল হোটেল এবং রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠন। তাঁদের দাবি ছিল, মুম্বইয়ের মতো বড় এবং ঘনবসতিপূর্ণ শহরে এই বিধি মেনে ডান্স বারের অনুমতি পাওয়া কার্যত অসম্ভব। হোটেল এবং বারমালিকদের এই দাবি মেনে নিয়ে পুরনো বিধি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে ডান্স বারে সিসিসিটিভি বসানো বাধ্যতামূলক—এই আইনও শিথিল করেছে শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন: চার দশক আগে তোয়ালে পরে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছিলেন সাবলীল সুচিত্রা!
ডান্স বার বন্ধ করতে ২০০৫ সালে প্রথম বম্বে পুলিশ আইনে সংশোধনী এনেছিল মহারাষ্ট্রের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার। তার পর কখনও বম্বে হাইকোর্ট, কখনও সুপ্রিম কোর্ট, ডান্স নিয়ে আইনি লড়াই ছিল অব্যাহত। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ডান্স বার চালু করার নির্দেশ দিলে ২০১৬ সালে রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে ‘ডান্স বার নিয়ন্ত্রণ বিল’ পাশ করার মহারাষ্ট্র সরকার। সেই আইনে কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মদ্যপান এবং নাচ চলতে পারে না বলে জানানো হয়েছিল। পাশাপাশি, রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে সমস্ত বার বন্ধ করে দিতে হবে বলেও কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। আইন না মানলে রেস্তোরাঁ মালিকদের উপর চড়া হারে জরিমানাও লাগু করত মহারাষ্ট্র সরকার। এই আইনের জেরে মুম্বইতে কার্যত বন্ধ হয়েছিল অধিকাংশ ডান্স বার। বাধ্য হয়েই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বার, হোটেল এবং রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠনগুলি। শীর্ষ আদালতের এই রায়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন তাঁরা। স্বস্তিতে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অসংখ্য মানুষও।
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে মন্দিরের ভিতর উদ্ধার প্রযোজকের ঝুলন্ত দেহ
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy