শ্রীধন্যা সুরেশ। ছবি টুইটার থেকে সংগৃহীত।
তিন বছর আগের ঘটনা। সতীর্থদের সঙ্গে একটি আবেদন নিয়ে জেলাশাসকের দফতরে গিয়েছিলেন কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ, আধা-সরকারি সংস্থায় কর্মরত তরুণী। সামনে দাঁড়িয়ে জেলাশাসকের প্রতাপ, তাঁর প্রতি অন্যদের সম্ভ্রম নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিল তাঁকে। জেলাশাসকের দফতর থেকে বেরিয়েই ঠিক করে ফেলেছিলেন, আইএএস-এর জন্য তৈরি হবেন।
ওয়েনাড জেলার পঝুতানার বাড়িতে বসে শনিবার সকালে ফোন পেলেন সেই তরুণী। ও’পারে রাহুল গাঁধী। যিনি বলছেন, ‘‘অভিনন্দন! আপনি তো কালেক্টর হয়ে গেলেন। আপনার লড়াই বহু মানুষকে প্রেরণা দেবে।’’ ঘটনাচক্রে, ওয়েনাডের বর্তমান জেলাশাসক এ আর অজয়কুমারের দফতরে দু’দিন আগেই মনোনয়ন জমা দিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল। সেই ওয়েনাড থেকেই কেরলের প্রথম জনজাতি তরুণী শ্রীধন্যা সুরেশ ইউপিএসসি-র মেধাতালিকায় নাম তুলেছেন জেনে ভোটের মরসুমে আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেননি কংগ্রেস সভাপতি!
শ্রীধন্যা অবশ্য এখনও কালেক্টর বা কোনও পদে নিয়োগ পাননি। তবে দিল্লিতে ইন্টারভিউ হয়ে যাওয়ার পরে নিয়োগ এখন সময়ের অপেক্ষা। মোট ৭৫৯ জনের তালিকায় তাঁর র্যাঙ্ক ৪১০। ওয়েনাডের জনজাতি গ্রাম থেকে দিল্লিতে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার সংস্থান করাও বেশ কষ্টসাধ্য ছিল শ্রীধন্যাদের পরিবারের কাছে। বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্বপ্নপূরণের উড়ানের টিকিট কেটেছিলেন ২৬ বছরের তরুণী।
দিনমজুরির সামান্য আয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন সুরেশ ও কমলা। মালয়ালম মাধ্যমের সরকারি স্কুলেই আগাগোড়া পড়েছেন শ্রীধন্যা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কোঝিকোড় শহরে গিয়ে। চাকরি ছেড়ে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য মেয়ে যখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন, বাড়িতে খবরের কাগজ রাখার মতো পয়সা খরচের সামর্থও বাবা-মায়ের ছিল না। স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছে শ্রীধন্যা বলছেন, ‘‘আমাদের জনগোষ্ঠীর নাম কুরিচ্যা। রাজ্যের সব চেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলার বাসিন্দা আমরা। জনজাতি মানুষের সংখ্যা অনেক হলেও এই রাজ্য থেকে তাঁদের কোনও প্রতিনিধি কখনও সিভিল সার্ভিসে যায়নি। অনেক কষ্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি। আশা করব, আমার লড়াই আমার মতো আরও অনেককে উৎসাহ দেবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ঠিক সেই কথাই বলেছেন রাহুল। পরে টুইটেও কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্য, ‘‘শ্রীধন্যার কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় তাঁর স্বপ্নকে বাস্তব করতে সাহায্য করেছে। তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে অভিনন্দন। শ্রীধন্যা যাতে তাঁর বেছে নেওয়া কেরিয়ারে সাফল্য পান, তার জন্য শুভেচ্ছা থাকল।’’
ভোটের মরসুমে পিছিয়ে নেই রাজ্যের শাসক দল সিপিএমও। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও শ্রীধন্যাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘সামাজিক অনগ্রসরতার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে ওঁকে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর এই সাফল্য অনেককে প্রেরণা দেবে।’’ কেরল থেকে এ বার ২৯ জনের নাম উঠেছে ইউপিএসসি-র মেধা তালিকায়। তাঁদেরও অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি থাকায় কোনও প্রতিশ্রুতি সরকার দেয়নি।
বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছেছে শ্রীধন্যাদের জনজাতি গ্রামে। তবে বাড়িতে বিদ্যুতের তার এখনও আ-ঢাকা। ল্যাপটপ চার্জ করাতে গিয়ে খোলা তারের ‘শক’ কয়েক দিন আগে ছিটকে ফেলেছিল শ্রীধন্যাকে। এখনও হাতে ব্যান্ডেজ। তবে নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি মিলে গিয়েছে তাঁর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy