আত্মকথা: বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
প্রণব মুখোপাধ্যায় হাসছেন। হাসছেন সনিয়া গাঁধী। গোটা প্রেক্ষাগৃহ উচ্চকিত।
জোট রাজনীতি নিয়ে প্রণববাবুর বই ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স— ১৯৯৬-২০১২’-এর প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তখন সদ্য বলেছেন, ‘‘প্রণববাবুর ক্ষোভ থাকতে পারে, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়নি বলে। তিনি যোগ্যতর প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি এটাও জানেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু করার ছিল না!’’
মঞ্চে তখন বসে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি স্বয়ং। দর্শকাসনের প্রথম সারিতে সনিয়া এবং রাহুল গাঁধী’। মনমোহন বলে চলেছেন, ‘‘প্রণববাবুর যদি কোনও ক্ষোভ থেকেও থাকে, তার জন্য আমার আর তাঁর সম্পর্কে কখনও দূরত্ব তৈরি হয়নি। আমার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে যখনই সমস্যায় পড়েছি, তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েছি। তিনি সমাধান নিয়ে এসেছেন। তিনি দেশের অন্যতম সেরা রাজনীতিবিদ।’’ আজ বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সপা-র অখিলেশ যাদব, ডিএমকে-র কানিমোজি। এক কথায় সাবেক ইউপিএ সরকারের শরিক নেতারা।
রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে রাজনীতি নিয়ে সে ভাবে বিশদে মুখ খোলেননি প্রণববাবু। বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রণববাবুর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সেগুলি নিছকই সৌজন্য-সাক্ষাৎ। বই প্রকাশের আগে, গত কাল রাতে ১০ রাজাজি মার্গে প্রণববাবুর বাসভবনে গিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রণববাবুর দফতর থেকে টুইটারে সেই সাক্ষাতের ছবি প্রকাশও করা হয়।
দেশের বর্তমান রাজনীতি এবং বিদেশনীতি নিয়ে নিজের ব্যাখ্যা এখনও ডায়েরিতে ধারাবাহিক ভাবে লিখে রাখেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। সে সবও কখনও দু’মলাটে প্রকাশ পাবে কি না, ভবিষ্যৎই বলবে। তবে নতুন বই প্রকাশের আগের দিন একটি সাক্ষাৎকারে প্রণববাবু বলেছেন, ১৩৩ বছরের পুরনো কংগ্রেস দলকে হিসেবের বাইরে রাখা ঠিক নয়। তারা আবার ফিরে আসার ক্ষমতা রাখে।
প্রণববাবুর কথায়, ‘‘গোড়ার দিকে আমার প্রতি সনিয়া গাঁধীর মনোভাবে যথেষ্ট শৈত্য ছিল। কিন্তু বাজপেয়ীজি সরকার গড়ার পরেই সমীকরণে বদল আসে।’’ তিনি মনে করেন, সনিয়া যদি ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হতেন, তা হলে দেশের মানুষ তাঁকে মেনে নিত। কারণ, সেই সময়ে মানুষ তাঁর সমর্থনেই ভোট দিয়েছিল।
তাঁর বদলে মনমোহনকে যখন সনিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন, তখন কি কিছুটা ব্যথিত হয়েছিলেন প্রণব? বিষয়টি নিয়ে আজ কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে মুখ খুলেছেন মনমোহনই। আর সাক্ষাৎকারে প্রণব বলেছেন, ‘‘না, দুঃখিত হইনি। আমি কখনওই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ভাবিনি। তার একটা কারণ, আমার রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগটাই কেটেছে রাজ্যসভায়। দ্বিতীয়ত, যদিও লোকসভা থেকে ২০০৪ সালে জিতে আসি, আমি আদৌ হিন্দি জানি না। কামরাজ এক বার বলেছিলেন— নো হিন্দি, নো পিএম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy