Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ঘরের মেয়ে আর ফিরবে না, শোকের ছায়া নড়াইলে

বছর দুয়েক আগেই ডাক এসেছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু, যাই যাই করেও শেষমেশ তা আর হয়ে ওঠেনি। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠতেই চোখের জল বাঁধ মানেনি রকিবউদ্দিনের। রকিবউদ্দিন সেন্টু— কানাইলাল ঘোষের পড়শি। কে এই কানাইলাল? তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের ভাই।

স্বামী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৭৯ সাল। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

স্বামী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৭৯ সাল। পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

কুদ্দুস আফ্রাদ
ঢাকা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ১৯:৩১
Share: Save:

বছর দুয়েক আগেই ডাক এসেছিল তাঁর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু, যাই যাই করেও শেষমেশ তা আর হয়ে ওঠেনি। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠতেই চোখের জল বাঁধ মানেনি রকিবউদ্দিনের। রকিবউদ্দিন সেন্টু— কানাইলাল ঘোষের পড়শি। কে এই কানাইলাল? তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের ভাই।

বাংলাদেশের খুলনার নড়াইল জেলাতেই আদি বাড়ি শুভ্রাদেবীর। ছোটবেলায় শুভ্রাদেবী ভারতে চলে এলেও বাংলাদেশেই থেকে গিয়েছিলেন তাঁর ভাই কানাইলাল। এ দিন রকিবউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর মন ছেয়ে এসেছে দিদির নানা স্মৃতিকথায়। সপ্তাহখানেক আগেই তাঁকে দেখতে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন কানাইবাবু। অসুস্থ শুভ্রাদেবীর শেষ সময়ে তাঁর পাশেই ছিলেন কানাইবাবু। তাঁর স্ত্রী দুলালী ঘোষ বলেন, “দিদির অসুস্থতার খবরেই রাইসিনা হিল ছুটে গিয়েছিলেন আমার স্বামী।” কানাইবাবুর ছেলে প্রশান্ত ঘোষ বলেন, “পিসিমা ছিলেন আমাদের মাথার ছাদ। তাঁর ছায়াতেই বড় হয়েছি, লেখাপড়া করেছি। তিনি সব সময়ই আমাদের খোঁজ-খবর নিতেন। আজ আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম। তাঁর আত্মার চির শান্তি কামনা করি।”

মন খারাপ রকিবউদ্দিনেরও। তিনি বলেন, “প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন দিদি তখন নড়াইলে বেড়াতে এসেছিলেন। আমরা সকলেই সে সময় খুব আনন্দ করেছিলাম। আজ খুব খারাপ লাগছে।” ভারতে এসেছেন বহু বার। সজল নয়নে তাঁর সংযোজন, “পশ্চিমবঙ্গে গেলে দিদির হাতের জল না খেয়ে এক বারও ফিরে আসিনি।”

শুভ্রাদেবীর জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, নড়াইলের চিত্রাপাড়ের ভদ্রবিলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম অমরেন্দ্রনাথ ঘোষ, মা মীরারানী ঘোষ। নয় ভাই-বোনের মধ্যে শুভ্রাদেবী ছিলেন দ্বিতীয়। তুলারামপুর গ্রামের মামাবাড়ি থেকে চাচড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। সেখানেই তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি। ১৯৫৫ সালে পরিবারের সঙ্গে ভারতে আসা। বয়স তখন ১২। প্রণববাবুর সঙ্গে বিয়ে হয় মাত্র ১৪ বছর বয়সে। প্রণববাবু তখন ২২ বছরের যুবা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে নিয়ে বোড়াতে এসেছিলেন সস্ত্রীক প্রণববাবু। রাষ্ট্রপতি হিসাবে এর পর প্রণববাবু দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে আসেন ২০১৩ সালের ৫ মার্চ। সঙ্গে ছিলেন শুভ্রাদেবীও। স্বামীর সঙ্গে তিন দিনের সফরে এসে নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে নিজের ভিটেয়ও ঘুরে যান শুভ্রাদেবী।

এ দিন শুভ্রাদেবীর মৃত্যুর খবরে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি শোকবার্তা পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা। বুধবার নয়াদিল্লিতে আসছেনও তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এ কথা জানিয়েছেন তাঁর প্রচারসচিব এহসানুল আমিন। শোকজ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক শিবির থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারাও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE