গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলছেন অমিত শাহ। সোমবার জম্মুর আর এস পুরায়। ছবি: পিটিআই
বুলেটের জবাব বুলেট সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে পাকিস্তানকে রবিবারই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত। তার পর কয়েক ঘণ্টাও কাটেনি, আক্রমণের তীব্রতা বহু গুণ বাড়িয়ে দিল পাক রেঞ্জার্স। কাল সারা রাত ধরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ৪০টি সেনা ছাউনি ও ২৪টি গ্রামের দিকে গুলিগোলা ও মর্টার ছুড়েছে তারা। একই ক্ষমতার অস্ত্র দিয়ে প্রতি-আক্রমণ করেছে ভারতও। গুলির লড়াইয়ে আহত হয়েছেন তিন জন। কুপওয়ারায় শনিবার রাতে জঙ্গি দমন অভিযান শুরু করেছিল সেনা। আজ সেখানকার কেরন ও কালারুসে দুটি পৃথক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে এক জঙ্গি। মৃত্যু হয়েছে এক জওয়ানেরও।
কাল বিএসএফকে একই রকম বা আরও বেশি আঘাত সীমান্তের ওপারে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। রাতভর সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আজ গোয়েন্দা সংস্থা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন তিনি। বিএসএফের ডিজি ডি কে পাঠক পরে জানান, “কী কারণে লাগাতার এ ভাবে হামলা চলছে তা ব্যাখ্যা করা মুশকিল। কিন্তু বাস্তব হল আক্রমণ থামছেই না।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলির পর পাকিস্তান প্রসঙ্গে আজ সুর চড়িয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ-ও। দলের প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই প্রথম কাশ্মীরে গেলেন শাহ। জম্মুর কাঠুয়ার এক সভায় এ দিন তিনি বলেন, “আমরা মোটেই এ সব সহ্য করব না।”
আর তিন মাস পরেই জম্মু-কাশ্মীরে ভোট। নির্বাচনকে নজরে রেখেই আজ সেখানে সভা করলেন অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ-সহ দলের আরও কয়েক জন নেতা। ওমর আবদুল্লা সরকারকে সোমবার কড়া ভাষায় আক্রমণ করে শাহ বলেন, “লড়াইয়ের জন্য ঘরছাড়া যাঁরা, তাঁদের হয়ে রাজ্য সরকার কিছুই করেনি। তাঁদের লড়াইকে সম্মান জানিয়ে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে কেন্দ্র।” সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলি থেকে সরিয়ে আনা মানুষদের দুটি শিবিরও ঘুরে দেখেন তিনি।
কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে পাক হাইকমিশনারের বৈঠকের ফলে দুই দেশের বিদেশ সচিব পর্যায়ের আলোচনা সম্প্রতি বাতিল করে দেয় ভারত। সন্ত্রাস চললে আলোচনা নয়, কেন্দ্রের এই অবস্থানের সমালোচনায় গতকাল মুখ খুলেছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর। বৈঠকই সমাধানের একমাত্র রাস্তা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আজ তাঁর প্রতি অমিত শাহের কটাক্ষ, “দেশের আঘাতে অপমান করছেন। অথচ ঘরছাড়াদের এক বারও দেখতে আসতে পারলেন না।”
ভোটের আগে উপত্যকায় রাজনীতির আঁচ যেমন বাড়ছে, তেমনই চড়ছে সীমান্ত উত্তেজনার পারদও। গত পনেরো দিনে এ নিয়ে ২১ বার সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করল পাকিস্তান। এত দিন জম্মুর আন্তর্জাতিক সীমানা ও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর হামলা চালাচ্ছিল পাক বাহিনী। কাল রাত থেকে তাদের নতুন নিশানা হয়েছে কাশ্মীরের সাম্বা জেলাও।
গতকাল রাত সাড়ে ৯টা থেকে মর্টার শেল ও গুলি বর্ষণ শুরু হয়। চলেছে আজ সকাল ৭টা পর্যন্ত। বিএসএফ সূত্রে খবর, হামলা হয়েছে জম্মুর আরনিয়া, আর এস পুরা, কনচক, আখনুর সাব-সেক্টরে এবং সাম্বা জেলার রামগড় সেক্টরে। ছোট ও স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলির পাশাপাশি মর্টার শেল এসে পড়েছে প্রায় ৪০টি সেনাঘাঁটি ও ২৪টি গ্রামে। প্রাণহানি না হলেও পাক গোলায় আহত হন তিন গ্রামবাসী। সংঘর্ষ থামার লক্ষণ না থাকায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন সকলে। নিশানা হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে গ্রামের সব আলো নিভিয়ে রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকায়, আজ আচমকাই সীমান্ত এলাকার ছাউনিগুলি পরিদর্শনে যান সেনার ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে জে সিংহ। আগামীকাল যাবেন বিএসএফের ডিজি ডি কে পাঠকও।
পরিস্থিতি কেন ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে তা খতিয়ে দেখতে ও ভারতের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করতে আজ রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী, ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আই বি), রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইঙ্গ (র’), মিলিটারি ইনটেলিজেন্স (এম আই) এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, একটানা হামলার পিছনে পাক জঙ্গি ও আইএসআইয়ের মদত রয়েছে।
প্রতি বছরই এই সময়ে জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলে সীমান্তের ও-পার থেকে। সীমান্তে গুলি চালিয়ে ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যস্ত রাখলে সেই কাজ অনেক সহজে হয়। কিন্তু সাধারণ ভাবে দু’-তিন দিন পরই এই হামলা থেমে যেত। এই বার সেই নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ায় চিন্তায় ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী। তারা মনে করছে, আগামী দিনে সম্ভবত এ দেশে বড়সড় নাশকতার পরিকল্পনা করেছে জঙ্গিরা। হামলা ঠেকাতে গোয়েন্দাবাহিনীর সব শাখার মধ্যে তথ্য আদানপ্রদানের উপরই জোর দেওয়া হয়েছে আজকের বৈঠকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy