চৌকিদার চোর হ্যায়— পর্ব ২।
প্রযোজনা, পরিচালনা ও অভিনয়ে— নরেন্দ্র মোদী ও কোম্পানি।
অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতিতে ধৃত ক্রিশ্চিয়ান মিশেলের মুখে ‘মিসেস গাঁধী’ নিয়ে বিজেপির কটাক্ষকে আজ এ ভাবেই ফিরিয়ে দিল রাহুল গাঁধীর দল। তাদের দাবি, মোদীর ইশারাতেই কাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কোনও প্রমাণ ছাড়াই ‘মিসেস গাঁধী’র নাম ভাসিয়েছে। সঙ্গে ‘ইটালীয় মহিলার ছেলে’ আর ‘বিগ ম্যান আর’ বলে দু’টি নাম জুড়ে তদন্তকারী সংস্থাও এখন মোদীর ইশারায় রাজনীতি করছে। কিন্তু অগুস্তার উপর কংগ্রেস জমানায় জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে তাদের আসল ‘রক্ষাকর্তা’ হয়ে উঠেছে মোদী সরকারই। এখন নিজেদের চুরি ঢাকতে উল্টো অভিযোগ আনছে। রাফালের পর এটি আসলে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়— পর্ব ২’। কেন্দ্রে নতুন সরকার মোদীর সঙ্গে অগুস্তার যোগসাজসের তদন্ত করবে।
শুধু কংগ্রেস নয়। শরদ পওয়ার, শরদ যাদব, তেজস্বী যাদব, ডি রাজা— একের পর এক বিরোধী দলের নেতাও এ দিন অগুস্তা-কাণ্ডে কংগ্রেসের পাশেই দাঁড়িয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তুলে মোদীকেই নিশানা করেছে।
আরও পড়ুন: সৌজন্যে ভুতুড়ে টুইট, সিবিআই-আরবিআইয়ের পর এ বার প্রকাশ্যে রেলের কোন্দল
মিশেলকে ভারতে আনার পরের দিনই রাজস্থানের ভোটসভায় সনিয়া গাঁধীর নাম নিয়েছিলেন মোদী। মিশেল মুখ খুললে কার নাম নেবেন, জল কত দূর গড়াবে— এ সব বলে প্রধানমন্ত্রী আগাম বার্তা দিয়েই রেখেছিলেন। কংগ্রেস আজ পাল্টা তথ্য সামনে এনে বলল, ‘‘অগুস্তার ‘রক্ষক’-এর ভূমিকা নিয়েছেন খোদ মোদী। আজ ইডি তাঁর পকেটে, তাই এখন তিনি পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু সামনের বছর নতুন সরকার এলে মোদীর সঙ্গে এই সংস্থার যোগসাজসের তদন্ত করতে কংগ্রেস বদ্ধপরিকর।’’
কী সেই যোগসাজস?
কংগ্রেসের অভিযোগ, ইউপিএ জমানায় দুর্নীতি সামনে আসতেই অগুস্তার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তদন্ত শুরু হয়। বিনিয়োগের তিনগুণ টাকাও আদায় করে সরকার। কিন্তু মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই অগুস্তা এবং তার ‘পেরেন্ট’ সংস্থা ফিনমেকেনিকার উপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এমনকি তাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’য় সামিল করা হয়। নতুন কপ্টারের বরাতও দেওয়া হয়। ইটালির আদালতে ভারত সরকার হেরে গেলেও নতুন করে আবেদন করে না। আর ক’দিন আগেই মিশেলের আইনজীবীরা বলেছেন, গাঁধী পরিবারের নাম নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যোগীর ‘ঠোক দো’ নীতিতে মরছে পুলিশ: অখিলেশ
আদালতে ইডির দাবি করা ‘মিসেস গাঁধী’ ইন্দিরা না সনিয়া? কোন প্রশ্নে, কোন প্রেক্ষিতে, কোন সূত্রে মিশেল এমন বলেছেন, আদৌ কী বলেছেন, ইডি কিছুই জানায়নি। প্রমাণ দেওয়া তো দূর অস্ত্। অথচ তাই নিয়েই কাল থেকে স্মৃতি ইরানি, রবিশঙ্কর প্রসাদ, প্রকাশ জাভড়েকরের মতো মন্ত্রীরা গাঁধী পরিবারকে বিঁধতে নেমে পড়েছেন। পি চিদম্বরমরে কটাক্ষ, ‘‘আইন মানার কোনও বালাই নেই! ইডি যা মুখে বলবে, সেটাই মৌখিক প্রমাণ! আর টেলিভিশন চ্যানেল যা বলবে, সেটাই রায়!’’ কপিল সিব্বলের কথায়, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর ইশারায় কাজ করছে ইডি। ইডি-সিবিআইয়ের আইনজীবীরাও আদালতে কী করে রাজনীতি করতে পারেন? গোয়েন্দা সংস্থার উপরে আর আমাদের ভরসা নেই।’’
কংগ্রেসের অভিযোগের জবাবে বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, ‘‘এত ভয় কেন? তদন্ত হলেই তো সত্য বেরোবে! গত কয়েক দশকের দুর্নীতিতে যত বার কোনও বিদেশির ভূমিকা দেখা গিয়েছে, তাতে শুধু গাঁধী পরিবারের নাম জুড়ে যায় কেন?’’ এরই মধ্যে আজ প্রধানমন্ত্রী আন্দামান-নিকোবরে সেলুলার জেল ঘুরে দেখেন। টেলিভিশনের পর্দায় তা দেখে এক কংগ্রেস নেতার মন্তব্য, ‘‘সঠিক জায়গা! চৌকিদার চুরি করে জেলেই যাবেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy