কিরেন রিজিজু ও গজপতি রাজু
কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না বিতর্ক। সুষমা-বসুন্ধরা নিয়ে জেরবার বিজেপি সরকারে এ বার অস্বস্তি বাড়ালেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
গত ২৪ জুন লেহ্ থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে রিজিজু উঠবেন বলে শিশু-সহ তিন যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রিজিজুর সঙ্গে ছিলেন আরও এক ভিআইপি-সহ দুই ব্যক্তি— রিজিজুর আপ্ত-সহায়ক এবং জম্মু ও কাশ্মীরের উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহ। শুধু তিন জনকে নামিয়ে ভিআইপি যাত্রীদের জায়গা দেওয়াই নয়, এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, এই ঘটনায় বিমান ছাড়তেও যথেষ্ট দেরি হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। বিমান মন্ত্রকের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও তলব করেছে কেন্দ্র। এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিমান মন্ত্রকও। আপাতত এ ব্যাপারে এয়ার ইন্ডিয়া কুলুপ আঁটলেও আজ বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু সে দিন দেরির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন যাত্রীদের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘যে সব যাত্রীর অসুবিধে হয়েছে, তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি। নিয়ম লঙ্ঘন করে কিছু হয়ে থাকলে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, দেখা হবে সেটাও।’’
মজার কথা হল, এ সপ্তাহের গোড়াতে একই ভাবে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দেরি করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফ়ডণবীসের বিরুদ্ধে। ২৯ জুন মুম্বই থেকে নেওয়ার্কগামী ওই বিমানটি ছাড়তে প্রায় এক ঘণ্টা দেরি হয়েছিল। পরে জানা যায়, ফডণবীস-ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নিজের পাসপোর্ট আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। যদিও ফডণবীস অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
বিমান ছাড়তে দেরি এবং তিন যাত্রীকে নামিয়ে তাঁদের জায়গা দেওয়া হয়েছিল জানতে পেরে রিজিজু আজ ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, যাত্রী নামিয়ে তাঁদের নেওয়া হয়েছিল— এই তথ্য তাঁর কাছে ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও যাত্রীর যদি অসুবিধে হয়ে থাকে তা হলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে এয়ার ইন্ডিয়া এবং মন্ত্রী হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের তরফে তাঁর কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সেটাও নিশ্চিত করা উচিত।’’
তবে সে দিন দেরি হওয়ার ব্যাপারে রিজিজুর বক্তব্য, বিমান ছাড়ার সময় লেখা ছিল, সকাল সওয়া এগারোটা। বিমানে ওঠার সময় লেখা ছিল, পৌনে এগারোটা। এ ব্যাপারে তাঁর সহযাত্রী জম্মু ও কাশ্মীরের উপমুখ্যমন্ত্রী নির্মল সিংহের টিকিট প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেন রিজিজু। যদিও অন্য যাত্রীদের দাবি, বিমান ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১০টা ২০মিনিট।
রিজিজু ক্ষমা চাইলেও নির্মল সিংহ কিন্তু দায় চাপিয়েছেন এয়ার ইন্ডিয়ার উপরে। বলেন, ক্ষমা চাওয়া উচিত বিমান সংস্থারই। উপমুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বিমানের চালক তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি পদের অপব্যবহার করিনি। সংবাদমাধ্যমই যেন সব কিছুর বিচার করছে। আমাদের আক্রমণ করা হচ্ছে কারণ আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।’’ বিমান থেকে যাত্রী নামানোর প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কাউকে নামিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা এমন কিছু করিওনি। যা জিজ্ঞেস করার এয়ার ইন্ডিয়াকেই করুন।’’
সে দিনের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে নির্মল সিংহ বলেছেন, ‘‘নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছেছিলাম। কিন্তু প্লেনের দরজা তার আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরেই পাইলট আমার সঙ্গে অভদ্রতা করেন।’’ তিনি জানান, জরুরি বৈঠকের জন্য মন্ত্রীদের অনেক সময়েই এ ভাবে বিমানে নেওয়া হয়। এটা সরকারি নিয়মের মধ্যেই পড়ে। কিন্ত কোনও যাত্রীকে নামিয়ে সেটা হয় না। রিজিজুর মতোই তিনি বলেন, ওই ভাবে তাঁদের জায়গা করে দেওয়া হয়েছে, তা জানা ছিল না। এ বিষয়ে বিজেপির তরফে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy