Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

নামছে জল, টানছে ভিটে

কেমন আছে কেরল! জল-মাঠে পড়ে থেকে যাঁরা ত্রাণের কাজ করছেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, কোঝিকোড়ে জল নামছে। জেগে উঠছে এর্নাকুলমেরও একটা বড় অংশ। এখানকার কোঙ্গরপিলি সরকারি হাইস্কুলটা এত দিন ত্রাণশিবির ছিল। রবিবার বিকেল থেকে সেটা খালি। বাড়ি ফিরছেন দুর্গতেরা।

এমনই তকতকে অবস্থায় রেখে শিবির ছাড়ছেন দুর্গতেরা। ছবি: ফেসবুক।

এমনই তকতকে অবস্থায় রেখে শিবির ছাড়ছেন দুর্গতেরা। ছবি: ফেসবুক।

স্নেহাংশু অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০০
Share: Save:

স্বস্তি এল ডারহ্যামে। ওমানেও।

উদ্বেগের টানা চার দিন পরে দেশের বাড়ির খবর পেলেন মধ্য তিরিশের ধন্যা জয়রাম। বাড়ির একতলাটা ভেসে গিয়েছে। সে যাক, লোকগুলো তো বেঁচে আছে! নর্থ ক্যারোলাইনার ডিউক ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি-পরবর্তী গবেষণা করছেন ধন্যা। কিন্তু তাঁর মন পড়ে কেরলেই। কাজ ফেলে এখন ঘাড় গুঁজে ছুটির দরখাস্ত লিখছেন।

বুকে খানিক বল পেয়েছেন ফেবিন ম্যাথুও। মধ্য চল্লিশের ম্যাথু কাজের সূত্রে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ওমান শহরে থাকেন। চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার। চেঙ্গান্নুরে তাঁরও বাবা-মা-বৌ-ছেলে-মেয়ে-শাশুড়ি— গোটা পরিবারটাই ভেসে গিয়েছিল। দিন চারেক খোঁজ না-পেয়ে প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। সোমবার জানালেন, ফোনে কথা হয়েছে। সবাই নিরাপদে আছেন।

বৃষ্টি একটু কমতেই গতি বেড়েছে ত্রাণে। এ বার শিবির ছেড়ে ঘরে ফেরার পালা। আর ধন্যা-ম্যাথুরা চাইছেন, মাঝখানের এই কটা দিন যেন চিরতরে মুছে যায় তাঁদের স্মৃতি থেকে। ম্যাথুর কথায়, ‘‘এই চারটে দিনের কথা ভুলতে পারলে বাঁচি। এমন অভিজ্ঞতা যেন কারও না হয়।’’

আলুভা জেলার চোয়ারায় সেন্ট মেরি গির্জার কাছেই বাড়ি ধন্যাদের। স্বাধীনতা দিবসের দিন জানতে পারেন, বাড়ি জলের নীচে। আর পরিবার? এই ক’দিন খবর না পেয়ে পাগলের মতো ফেসবুকে পোস্ট করছিলেন ধন্যা। রবিবার বিকেলে হঠাৎ বেজে ওঠে তাঁর ফোন। কেরলের নম্বর। ও-পারে বাবার গলা। ধন্যা জানতে পারেন, ত্রাণ শিবির থেকে তাঁর পরিবার ফিরে যাচ্ছেন সেই ভেসে যাওয়া বাড়িতেই।

আরও পড়ুন: রান্না মাদ্রাসায়, খাওয়া গির্জায়, বিশ্রাম মন্দিরে

ধন্যার কথায়, ‘‘কাগজ-পত্র জামাকাপড়, আসবাব, অ্যালবাম— কিচ্ছু নেই। নীচের তলাটায় এখন শুনলাম শুধু কাদা, আবর্জনা। তবে সবাই যে সুস্থ আছে, সেটাই অনেক।’’ ফেসবুক মেসেঞ্জারে ঝড়ের গতিতে টাইপ করছিলেন ধন্যা। আর থেকে থেকেই বলছিলেন, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ।’’

কেমন আছে কেরল! জল-মাঠে পড়ে থেকে যাঁরা ত্রাণের কাজ করছেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, কোঝিকোড়ে জল নামছে। জেগে উঠছে এর্নাকুলমেরও একটা বড় অংশ। এখানকার কোঙ্গরপিলি সরকারি হাইস্কুলটা এত দিন ত্রাণশিবির ছিল। রবিবার বিকেল থেকে সেটা খালি। বাড়ি ফিরছেন দুর্গতেরা। কিছু দিনের মধ্যে ফের ক্লাসও শুরু হবে। কিন্তু কেমন চেহারা এখন সেই স্কুলের! শিবির ছেড়ে বেরোনোর আগে শেষ জন যে ছবি তুলেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে— স্কুলের সেই লম্বা হলঘরটা এখন আগের মতোই তকতকে। কে বলবে যে ১২০০টা লোক এখানে চার-চারটে দিন কাটিয়ে গিয়েছে! যাওয়ার আগে অস্থায়ী বাড়িটারও হাল ফিরিয়ে দিয়েছেন সবাই হাতে হাত মিলিয়ে।

ব্লিচিং, ক্লোরিনের গন্ধ মেখেই শিবির ছাড়ছেন সব প্রাণপণে। কেরল অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ক্লাবের বেশ কয়েকটি দল জেলায় জেলায় জিপ নিয়ে ত্রাণের কাজ করছেন। সেই দলের এক জন, অ্যালবি বললেন, ‘‘প্রাণ যায় যাক, তবু বাড়ি ছাড়ব না— এমন ছবিও দেখলাম। ডোবা-বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে লোকজন বলছেন ‘না, যাব না কোথাও। পারলে বরং দুটো বিস্কুটের প্যাকেট দিয়ে যাও। জল তো এমনিই নেমে যাবে।’

জল নামছে ইদুক্কি জেলাতেও। সাঁতারু সজন প্রকাশ কিন্তু তাঁর স্বজনদের খোঁজ পাননি। এখন তিনি জাকার্তায়। এশিয়ান গেমসের ২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে দেশকে সোনা এনে দিতে রবিবার ঝাঁপ দিয়েছিলেন পুলে। পারেননি। জাতীয় রেকর্ড গড়েও আটকে গিয়েছেন পঞ্চম স্থানে। ফাইনালের আগের দিন, শনিবার রাতে সজন জানতে পারেন, গ্রামে তাঁর পৈতৃক ভিটেটা ভেসে গিয়েছে। নিখোঁজ ঠাকুরদা, কাকা-সহ ৪ জন। সোমবারও সজনের শিকে ছেঁড়েনি ৪০০ মিটারের রিলেতে। এ বার বুধবার— ১০০ মিটারের বাটারফ্লাই। ‘ফাইট’ করেই ফিরবেন সজন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE