সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
আরও গভীর সঙ্কটের দিকে ক্রমশ ঢলে পড়ছে গ্রিস। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ঋণের টাকা যে শোধ করতে পারবে না তা মঙ্গলবারই জানিয়ে দিয়েছে এথেন্স। আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যা অবস্থা, তাতে মোদ্দা অর্থ হল, ব্যাঙ্কে কোনও টাকা কার্যত অবশিষ্ট নেই। এমনকী, পেনশনভোগীদেরও টাকা দিতে পারছে না সরকার!
উদ্বেগ হল, এর আঁচ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে কি নয়াদিল্লি! গ্রিস সঙ্কটের সিঁদুরে মেঘ দেখে সোমবারই এক প্রস্ত সেনসেক্স পড়েছিল ঠিকই, তবে প্রাথমিক আশঙ্কা কাটিয়ে আপাতত স্থিতাবস্থা ফিরেছে। তার পর পশ্চিমের এই ঝঞ্ঝা নিয়ে আজ অর্থমন্ত্রকের কর্তাদের জরুরি বৈঠক ডাকেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যমও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের সঙ্গে অর্থসচিব রাজীব মহর্ষির গত কাল দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতামত আজ জেটলিকে জানান তিনি। পরে অর্থমন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অর্থসচিব তথা সামগ্রিক ভাবে অর্থমন্ত্রকের মতে, গ্রিসের সঙ্কটের সরাসরি কোনও প্রভাব ভারতে পড়ার কথা নয়। ইউরোপের সঙ্গে ভারতের বিপুল আমদানি-রফতানি বাণিজ্য রয়েছে। দেখার বিষয় হল, এথেন্সের এ ভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার প্রভাব ইউরোপের উপর কতটা পড়ে! সে ক্ষেত্রে পরোক্ষে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে নয়াদিল্লির। তা ছাড়া ইউরো ঋণপত্র থেকে পাওয়া রিটার্ন (বন্ড ইল্ড) বাড়তে থাকলে ভারত থেকে বিদেশি লগ্নি বেরিয়ে যেতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তবে মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম জেটলিকে জানিয়েছেন, গ্রিসের সঙ্কটের খুব বড় ধাক্কা ভারতে লাগবে না বলে তিনি মনে করছেন। রফতানিতেও বিশেষ প্রভাব পড়বে না বলেই বাণিজ্য মন্ত্রকের মত। তাঁদের যুক্তি, গ্রিসে খুব একটা ভারতীয় পণ্য রফতানি হয় না। তবে গ্রিসের সঙ্কটের জেরে সামগ্রিক ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানি কিছুটা কমতে পারে।
আজকের বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, এটা ঘটমান পরিস্থিতি। শেষে কী হবে, তা কারও পক্ষেই আগাম বলে দেওয়া মুশকিল। সেই কারণেই প্রতিনিয়ত নজর রাখা জরুরি। এ-ও দেখতে হবে, ইউরো বন্ডের গতিবিধি কোন দিকে। তা থেকে লাভ বেশি হলে যেমন ভারত থেকে পুঁজি বিদায় নিতে পারে, একই ভাবে মার্কিন সরকারি ঋণপত্র থেকে রিটার্নের উপরেও নির্ভর করছে এ দেশে পুঁজি আসবে না বেরিয়ে যাবে। তবে এটা ঠিক যে এখনও পর্যন্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ অন্যান্য এশীয় বাজারের মতোই এ দেশের বাজার আচরণ করছে।
অর্থমন্ত্রকের সূত্র অবশ্য বলছে, গ্রিস যদি ইউরো ছেড়ে বেরিয়ে যায় তা হলে ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমতে পারে। কারণ ইউরো মুদ্রা নিয়ে কেউই ঝুঁকি নেবেন না। ফলে ডলারের চাহিদা বাড়বে। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক ডলারের বিনিময় মূল্য ৬৫ বা ৬৬ টাকার নীচে নামতে দেবে না বলেই নর্থ ব্লকের কর্তারা মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ডলার বেচা শুরু করবে। ফলে ডলারের দাম দেশের বাজারে কমে আসবে। ইউরোর দাম পড়লে ইউরোপে পণ্য রফতানিকারীদের প্রাথমিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। সামগ্রিক ভাবে ইউরোপেও টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হলে রফতানি কমতে পারে। কারণ ইউরোপ ভারতের সব থেকে বড় বাণিজ্য সহযোগী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy