Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

পর পর কন্যাসন্তান, তিন মেয়েকে ট্রেন থেকে ফেলে দিল বাবা-ই!

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনও শিউরে উঠছে বছর নয়েকের মেয়েটি। ভাঙা পা নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে সে জানাল, ওই রাতে তার বাবা-ই তাকে ও তার বোনেদের চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাতে মারা গিয়েছে তার এক বোন। মা-ই ফিরে তাকে এ কথা জানিয়েছে।

সংবাদ সংস্থা
লখনউ শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে এখনও শিউরে উঠছে বছর নয়েকের মেয়েটি। ভাঙা পা নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে সে জানাল, ওই রাতে তার বাবা-ই তাকে ও তার বোনেদের চলন্ত ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাতে মারা গিয়েছে তার এক বোন। মা-ই ফিরে তাকে এ কথা জানিয়েছে। পায়ের যন্ত্রণার থেকেও জন্মদাতার এই আচরণই কুরে কুরে খাচ্ছে ছোট্ট আলগুন খাতুনকে।

গত ২৩ অক্টোবর মাঝরাতে সীতাপুরের কাছে চলন্ত ট্রেন থেকে আলগুন ও তার তিন বোন এবং মা আফরিনা খাতুনকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। তারা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল নাকি তাদের ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এই নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। তবে আলগুনের মা সামনে এসে দাবি করেছেন, একের পর এক মেয়ে হচ্ছিল তাঁর। তা মেনে নিতে পারেনি তাঁর স্বামী ইদ্দু মিঞা। তাই চলন্ত ট্রেন থেকে মেয়েদের ঠেলে ফেলে দিয়েছে সে। এই ঘটনাতেই প্রমাণ হয়ে যায় কন্যাসন্তান নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার সত্ত্বেও বিশেষ কাজ হয়নি।

ঘটনার তদন্তে নেমে আতান্তরে পড়েছিল পুলিশ। কারণ আলগুনের বয়ান অনুযায়ী পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিল তার এক মামা ও তার বন্ধু। কিন্তু তদন্ত যত এগিয়েছে, বদলেছে পুলিশের সেই ধারণা। তার পরে রেললাইনে পড়ে থাকা এক মহিলার দেহ দেখে পুলিশ ভেবেছিল, মৃত ওই মহিলাই শিশুগুলির মা। এমনকী আলগুনও দেহটি শনাক্ত করায় পুলিশ আরও নিশ্চিত হয়।

কিন্তু পাঁচ দিন পরেই দু’বছরের মেয়ে শাহজাদীকে নিয়ে বিহারের পশ্চিম চম্পারণে বাপের বাড়িতে ফেরেন আফরিনা। সেখানেই জানতে পারেন, বাকি সন্তানদের অবস্থা। তার পরেই সীতাপুর রওনা হন।

এ দিন হাসপাতালের বিছানায় মেয়ের মাথার কাছে বসে আফরিনা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘মেয়ের জন্ম দেওয়ার মাসুল দিতে হচ্ছে। মেয়ের মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।’’

সেই সঙ্গে তিনি সেই রাতের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকে। তাঁর দাবি, ‘‘ইদ্দুর কর্মক্ষেত্র জম্মুতে যাওয়ার সময়েই এই ঘটনা। ট্রেনে আমি ছোট মেয়েকে নিয়ে অন্য সিটে শুয়েছিলাম। তাই কখন এ সব হয়েছে কিছুই জানতে পারিনি। সম্ভবত মাঝরাতেই ইদ্দু আমার চার মেয়েকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাই সহযাত্রীরাও কিছুই টের পাননি।’’

এর কিছুক্ষণ পরে ঘুম ভেঙে মেয়েদের দেখতে পাননি আফরিনা। ইদ্দুর কাছে জানতে চাইলে সে বলে, ‘‘ওদের ফেলে দিয়েছি।’’ আফরিনা বিপদঘন্টি বাজানোর কথা বললে তাঁকে আর শাহজাদীকেও ছুড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় ইদ্দু।

আফরিন জানান, ইদ্দুর হুমকির জেরে গোটা রাস্তা চুপ ছিলেন। এর পর ট্রেন জম্মু পৌঁছলে তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে ছেড়ে পালায় ইদ্দু। তার পর কোনও রকমে মেয়েকে নিয়ে তিনি বিহার ফেরেন। তখনও জানতেন না বাকি সন্তানেরা কী অবস্থায় রয়েছেন।

পাঁচ মেয়ের মা আফরিনা জানিয়েছেন, ইদ্দু জম্মুতে শ্রমিকের কাজ করত। কিন্তু মেয়েদের নিয়ে নিজের মায়ের গ্রামে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আফরিনা। তাঁর কথায়, ‘‘ইদ্দু কখনওই স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেনি। এ বার সে এসেছিল আমাদের নিয়ে যেতে। আমার মা রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু ইদ্দু জোর করায় রাজি হয়েছিল মা।’’

তাই এখন আফরিনার আফসোস, কেন যে মা রাজি হলো। কেন যে মা বাধা দিল না এক বারও! তা হলে এ ভাবে সন্তানকে হারাতে হতো না।

অন্য বিষয়গুলি:

Father Daughters train Save Girl Child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE