কালো রঙের ধান, কালো রঙের চাল! দেখে অবাক কাছাড় জেলার দক্ষিণ সঈদপুরের মানুষ।
কৃষকরা জানতে চাইছেন, কোথায় এর বীজ পাওয়া যায়। কত ধানে কত চাল হয়। লাভের হিসেবও করে নিতে চাইছেন অনেকে।
সাধারণ মানুষের আগ্রহের জায়গাটা ভিন্ন। তাঁদের জিজ্ঞাসা— কালো চালে কি কালো ভাতই হয়। কিলোগ্রাম প্রতি দাম কত, তা-ও জানতে চাইছেন কেউ কেউ।
বরাক উপত্যকায় কালো চালের ফলন এই প্রথম। সে জন্য অনেকেই এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানেন না। তবে চিকিৎসক, অধ্যাপকের মধ্যে যাঁরা কালো চালের উপকারিতা জানেন, তাঁরা খোঁজ করছেন কোথায় গেলে তা পেতে পারেন।
প্রথম বছর অবশ্য বাজারে বিক্রির মতো উৎপাদন হয়নি। সিনিয়র এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার রঞ্জিত সরকার জানিয়েছেন, ফিরদৌস আহমেদ লস্করের (ওরফে লিপু) আধ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন করা হয়েছিল। ৫০০ গ্রাম বীজে ৩ কুইন্টাল ধান হয়েছে। বেশিরভাগটাই বীজের জন্য রাখা হচ্ছে। এলাকার কৃষকরা আগ্রহী, আগামী বছর তাঁরাও কালো ধান ফলানোর চেষ্টা করবেন।
লিপুবাবুর অবশ্য তাতে আপত্তি নেই। তাঁর একটাই কথা, ‘‘রঞ্জিত স্যারের পরামর্শে কালোধান লাগিয়েছি। তিনিই বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। তাই এই ধানে তাঁরই অধিকার। বীজ পেতে হলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’’ আগামী বছর তিনি নিজেও যে দু’বিঘা জমিতে কালো ধানের বীজ লাগাবেন, সে কথাও জানিয়ে রেখেছেন লিপু আহমেদ।
কী এমন রয়েছে কালো ধানে যে এক বছরে তিনি চার গুণ জমিতে এই বীজ লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন।
জেলা কৃষি অফিসার জাকির হোসেন চৌধুরী জানান, এই চালের খাদ্যগুণ প্রচুর। রয়েছে ওষধিগুণও। ১৬টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে। কপার, জিঙ্ক, ফাইবারের মাত্রাও বেশ। কার্বোহাইড্রেট অন্তত কম বলে ডায়াবেটিক রোগীরাও তা খেতে পারেন। চিন-সহ অন্যান্য দেশে এই চালে কিডনি, লিভারের সমস্যা-সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা হয়। রঞ্জিতবাবুর কথায়, ‘‘চিকিৎসা সংক্রান্ত গুণাগুণের জন্য একে ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড বলা হয়। তাই এর কিলোগ্রাম প্রতি দাম অনেক বেশি। বিদেশে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় রফতানি করা যায়।’’
রঞ্জিতবাবু নিজেও সঈদপুরের কালো চালের ভাত খেয়েছেন। কালো চাল রান্না হয়েছে লিপু আহমেদের ঘরেও। দু’জনেই জানিয়েছেন, রান্নার সময় ঘর সুগন্ধে ভরে যায়। ধান, চাল কালো হলেও ভাত হয় অনেকটা বেগুনি। খেতে বিন্নি চালের মত।
কালো ধান অসমে প্রথম উৎপাদিত হয় মেঘালয় সীমানাঘেঁষা গোয়ালপাড়ায়। উপেন্দ্র রাভা নামে এক কৃষক এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছিলেন। তাই সেখানে এই চালের নাম উপেন্দ্র রাভা চাল। কাছাড়ে তার নাম রাল করার পরিকল্পনা। সিনিয়র এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার রঞ্জিত সরকার, সোনাইয়ের এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার আলোক মালি ও কৃষক লিপু আহমেদের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে। বৈজ্ঞানিক নাম ‘অরাইজাসেটিভা’।
কালো ধানের আরও উপকারিতার জায়গা হল, বীজ লাগে খুব কম। অন্য ধানে আধ বিঘায় অন্তত ৩ কিলোগ্রাম বীজের প্রয়োজন ছিল। এখানে লেগেছে ৫০০ গ্রাম। সময়ও লাগে অন্য ধানের চেয়ে কম। ১৩০ দিনের জায়গায় ১১০ দিনে ফসল কাটা যায়। গাছ সামান্য বড় হয়। তবে অল্প দিনেই বেশি নুইয়ে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy