জেএনইউ-কে ঘিরে যখন জাতীয় রাজনীতি উত্তাল, ঠিক সেই সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এক সাক্ষাৎকারে জানালেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জানা উচিত যে তিনি সমগ্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী।’’ অর্থাৎ শুধু বিজেপি বা সংঘ সমর্থক ভারতবাসী নয়, যে ভারতবাসী তার মতাদর্শের বিরুদ্ধে তিনি তাদেরও প্রধানমন্ত্রী।
মনমোহন সিংহ এ কথা বললেও বিজেপি সূত্র বলছে, জেএনএউ-র ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী এখনও কোনও মন্তব্য না করলেও এ ব্যাপারে কিন্তু সমগ্র মন্ত্রিসভা এবং বিজেপি–আরএসএস–বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সকলেরই এক রা-- জেএনইউ-তে কানহাইয়া কুমারকে গ্রেফতার করা একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। উল্টে বিজেপি মুখপাত্ররা বলছেন, এ ব্যাপারে গোটা দেশজুড়ে বির্তক হোক এটাই তাঁরা চাইছেন।
মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দু’বছর হতে চলল। বিজেপি সূত্রে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে বহুত্ববাদের নেহরু মডেল অনুসরণ করতে সচেতনভাবেই তাঁরা অগ্রহী নন। অটলবিহারি বাজপেয়ীও এই মডেলের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু তখন ছিল জোটনির্ভর বিজেপি শাসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ফলে আরএসএস তথা সংঘের রাজনৈতিক লাইন হল ‘মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা’ এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের নামে ‘জাতীয়তাবাদ বিরোধী প্রগতিশীলতা’র মুখোশ খুলে দেওয়াই হবে মোদী সরকারের অন্যতম কর্তব্য। ফলে এতদিন ধরে যে রাজনৈতিক পরম্পরা চলেছে সেটার আমূল পরিবর্তন করে এক নতুন রাষ্ট্রবাদের মডেল তুলে ধরতে মরিয়া বিজেপি।
আর এই কারণেই জেএনইউ সম্পর্কে অরুণ জেটলির বক্তব্য, ‘‘কমিউনিস্ট এবং কংগ্রেস- এরা দেশবিরোধিতার প্রশ্নে সহিষ্ণু। আমরা জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু। জরুরি অবস্থা করেছিল কংগ্রেস। বিজেপি তার বিরোধিতা করেছে। সিপিআই জরুরি অবস্থা সমর্থন করেছিল। প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি জরুরি অবস্থার সময় কী করছিলেন? আমি তো জেলে ছিলাম।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দাবি, ‘‘যারা আন্দোলন করছেন তাদের বক্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে হাফিজ সইদ। এর থেকেই বোঝা যায় এই আন্দোলনের চরিত্র।’’ এক কথায় মন্ত্রিসভা এবং দল কানহাইয়া কুমারের গ্রেফতারের ঘটনায় কোনওভাবেই অনুতপ্ত নয়। এমনও মনে করা হচ্ছে না যে পুলিশ পাঠিয়ে সরকার ভুল করেছে। উল্টে জেএনইউ-তে যে অতিবিপ্লবের চাষ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শ্লোগান উঠছে সেগুলিকেই তারা সামনে তুলে ধরতে চাইছেন।
আরও পড়ুন- জেএনইউয়ের ঘটনায় লস্কর যোগ দেখছেন রাজনাথ
দিল্লিতে সিপিএম অফিস আক্রান্ত, অভিযোগ বিজেপির দিকে
বিজেপি সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, দাদরির ঘটনা যখন হয়েছিল এই কারণেই বিজেপি কোনও অনুতাপ প্রকাশ করেনি। প্রধানমন্ত্রীও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন অনেক পরে এবং সেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাটাও কিন্তু বিজেপি-র রণকৌশলের অঙ্গ ছিল না। উল্টে উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের সময় মুজফফরনগরের ঘটনা বিজেপি-কে সাহায্য করেছিল। বিহারে দাদরি কান্ডের ফল না পাওয়াই যে পরাজয়ের কারণ- এমনটা কিন্তু আজও বিজেপি মনে করছে না। বিজেপি নেতারা এখনও মনে করেন লালু নীতীশের জোট অঙ্কের হিসাবে সাফল্য দিয়েছে। বরং মেরুকরণের রাজনীতি বিজেপি-র শতকরা ভোট অনেকটাই ধরে রাখতে সাহা্য্য করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের বেশ কয়েকটি আসনে শনিবার উপনির্বাচন ছিল। কর্নাটকে জেলাপরিষদেরও ভোট ছিল শনিবার। অসম, ত্রিপুরা, কেরলে নির্বাচন আসছে। এই পরিস্থিতিতে দলের সভাপতি অমিত শাহ মনে করেন অমর্ত্য সেন যতই সহিষ্ণুতার উপদেশ দিন না কেন, বিজেপি তার ভোট পাওয়ার এই সাবেকি রাজনীতি কখনই পরিত্যাগ করতে পারে না। এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গেও বর্ধমান কাণ্ড থেকে মালদহ- এখনও দলের সজীব প্রচারের বিষয়।
কাজেই হায়দরাবাদ থেকে জেএনইউ- এই ঘটনাগুলিতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং পরিস্থিতির সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলায় ব্যর্থতা থাকতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ঘটনাবলী সম্পর্কে বিজেপি মনে করছে, কংগ্রেস সিপিএম আরও কাছাকাছি আসতে পারে, মোদী বিরোধী মঞ্চ গঠনের প্রয়াস হতে পারে, কিন্তু এই কট্টর লাইনেই বিজেপি-র দলীয় নির্বাচনী শ্রীবৃদ্ধির চাবিকাঠি লুক্কায়িত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy