Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

ওস্তাদের মারে মোদী সমর্থন কাড়লেন সনিয়ার

কে বলল ৫৬ ইঞ্চির ছাতি চুপসে ২৬ ইঞ্চি হয়েছে? এত দিন যে কংগ্রেস এই বলে গাল পাড়ত, তারাও এগিয়ে এসে জানিয়ে দিল— পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ভাঙার যে সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদী নিয়েছেন, তাকে তারা

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে।— নিজস্ব চিত্র।

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে।— নিজস্ব চিত্র।

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

কে বলল ৫৬ ইঞ্চির ছাতি চুপসে ২৬ ইঞ্চি হয়েছে? এত দিন যে কংগ্রেস এই বলে গাল পাড়ত, তারাও এগিয়ে এসে জানিয়ে দিল— পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ভাঙার যে সিদ্ধান্ত নরেন্দ্র মোদী নিয়েছেন, তাকে তারা

সমর্থন জানাচ্ছে।

প্রথাগত যুদ্ধে যে তিনি যাবেন না, আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু একই সঙ্গে উরিতে ১৮ সেনার বলিদানের জবাব যে দেওয়া হবে, সেটাও জানাতে ভোলেননি। আর সেটা যে কথার কথা ছিল না, এ দিন সেটাই করে দেখালেন প্রধানমন্ত্রী। আর এই এক চালেই দেশের সব রাজনৈতিক দলকে পাশে এনে ফেললেন তিনি। উত্তরপ্রদেশে নির্বাচনের আগে এই সাফল্যের পরে বিজেপির কলজের জোরও যে বাড়বে, তাতেও সন্দেহ নেই।

সকালে টেলিভিশনের পর্দায় যখন মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকের ছবি ভেসে উঠল, তখন থেকেই সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। এই বুঝি যুদ্ধ ঘোষণা হল। ঘণ্টাখানেক পর সেনা যখন ঘোষণা করল, কাল রাতেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ভারতীয় সেনা জঙ্গি দমন করে এসেছে, তার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদীর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির জোরের ডঙ্কা বাজতে শুরু করেছে। যুদ্ধ হোক বা না-হোক, অন্তত পাক নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান হবে— সরকারের কাছ থেকে এই ঘোষণাটিই শুনতে চাইছিলেন দেশবাসী।

আজ সেই কথাটিই দেশবাসীকে শুনিয়ে ছাতির জোর দেখালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এত দিন নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে দু’এক বার অভিযান হলেও তা কবুল করা হতো না। আজ সেটাই তিনি বললেন বুক বাজিয়ে। রাইসিনা পাহাড়ের উপরে সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর তার পাশেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে ডিজিএমও কাল রাতের সেনা অভিযানের কথা বলতে পারতেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই অভিযানের কথাটি সজোরেই শোনাতে চেয়েছিলেন গোটা দুনিয়াকে। আর তাই রাইসিনা পাহাড় থেকে নেমে সাংবাদিক বৈঠক হল বিদেশ মন্ত্রকের দফতর জওহরলাল নেহরু ভবনে।

সাধারণ অবস্থায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক কখন হয় টের পাওয়া যায় না। কী কথা হয়, ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ্যে বলা হয় না। কিন্তু আজ বেনজির ভাবে নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির ছবিও প্রকাশ করা হল। আর এই মেগা-ইভেন্টে যাতে কোনও ফাঁকফোকর না থাকে, সে জন্য সকাল থেকেই বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়েছেন সেনা অভিযানের সাফল্য-গাথায়। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতির পাশাপাশি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ফোন করে অভিযানের খুঁটিনাটি জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে পাঠিয়েছেন সনিয়া গাঁধীর কাছে। আর বিকেলে সর্বদল বৈঠকের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে সেনা অভিযানের কথা সবিস্তারে জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

যার ফলও মিলেছে হাতে নাতে। অরবিন্দ কেজরীবাল সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেও পিছিয়ে এসেছেন। মোদী সরকারকে দুষতে সকাল থেকে দু’দফায় সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিল কংগ্রেস। কিন্তু পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়ে সেনাদের পাশে দাঁড়াতে আজ সরকারের তারিফই করতে হল সনিয়া গাঁধীকে। মনমোহন সিংহ, প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি, আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে বৈঠক করে সনিয়া গাঁধী একটি বিবৃতিও জারি করেন। সেখানে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে সন্ত্রাসের জবাব দিতে এবং দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে এই সেনা অভিযানের বিষয়ে সরকারের পাশে আছে কংগ্রেস। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনুপ্রবেশ ও হামলার জবাবে এ’টি অবশ্যই কড়া বার্তা। এর পর পাকিস্তান নিশ্চয়ই নিজেদের জমিতে সন্ত্রাসের পরিকাঠামো ভাঙতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।

দু’বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচন তো আছেই। সামনে উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগেও এমন একটি পরিমণ্ডলই দরকার ছিল নরেন্দ্র মোদীর। ‘অচ্ছে দিন’ দু’বছরেও যে আসেনি, তা নিয়ে মানুষের হতাশা বাড়ছে। অর্থনীতিও হোঁচট খাচ্ছে পদে পদে। এই অবস্থায় পঠানকোটের পর উরির হামলা হয়ে দাঁড়িয়েছিল গোদের উপর বিষফোড়া। বিরোধী দলে থাকতে যে মোদী পাকিস্তানকে তাদের ভাষাতেই জবাব দেওয়ার হুঙ্কার দিতেন, আজ তিনিই যুদ্ধের বদলে পাকিস্তানের সঙ্গে গরিবি-হটাও নিয়ে লড়াইয়ের কথা বলছেন। অথচ আরএসএস থেকে বিজেপিতে আসা নেতা রাম মাধব উরির ঘটনার পরেই ‘দাঁতের বদলে চোয়াল’ খুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বসে আছেন।

জাতীয়তাবাদের আবেগে এই আক্রোশকে নিজের পালে টানতে সেনা অভিযান ছাড়া আর যে কোনও বিকল্প নেই, সেটি বুঝেই উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। এটাই ছিল তাঁর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ। যে সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা দু’দিন আগেই নরেন্দ্র মোদীকে ‘ঠুঁটো’ মনমোহনের সঙ্গে তুলনা করে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করছিলেন, তাদের কর্মীরাও বীর মোদীর গুণকীর্তনে নেমে পড়েছেন। সেনার পাশাপাশি তাই সকাল থেকে চলছে মোদীর জয়ধ্বনি।

কিন্তু ঘটনার পর গোটা দিন কেটে গেলেও সেনা অভিযান নিয়ে একটিও মন্তব্য করেননি মোদী। গোটা বিষয়টি যেন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন তিনি। কাল সকালে বিজ্ঞান ভবনে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার কথা তাঁর। সে অনুষ্ঠান ঘিরে তাই বাড়তি কৌতূহল তৈরি হয়েছে— কী বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Sonia Gandhi surgical strikes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE