Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

যোগীর নিশানায় প্রতিবাদী শিক্ষাবিদ

লখনউ থেকে ফোনে রূপরেখা বলেন, ‘‘হাইকোর্টে আমার নাম করে অভিযোগ জানিয়েছে পুলিশ। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে। আমি বরাবরই গেরুয়াপন্থীদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে। সেই কারণেই আমাকে এবং আমার মতো মানুষকে ওরা ভয় দেখাতে চাইছে।’’

রূপরেখা বর্মা।

রূপরেখা বর্মা।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:২০
Share: Save:

সরস্বতী পুজো দিয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়। এই কারণে তিনি উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষায় গৈরিকীকরণের অভিযোগ তুলেছিলেন। তার পরেই যোগী সরকারের নিশানা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রূপরেখা বর্মা।

৭৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি অনশনরত ছাত্রছাত্রীদের কাছে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি ছড়াতে মদত দিয়েছেন। লখনউ থেকে ফোনে রূপরেখা বলেন, ‘‘হাইকোর্টে আমার নাম করে অভিযোগ জানিয়েছে পুলিশ। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, আমার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে। আমি বরাবরই গেরুয়াপন্থীদের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে। সেই কারণেই আমাকে এবং আমার মতো মানুষকে ওরা ভয় দেখাতে চাইছে।’’

শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মোট ২৫ জন ছাত্রছাত্রীকে স্নাতকোত্তর স্তরে ভর্তির অনুমতি দেয়নি লখনউ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে পূজা শুক্ল ও গৌরব ত্রিপাঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন। ভর্তি না নেওয়ার প্রতিবাদেই সোমবার থেকে অনশনে বসেন পূজা ও গৌরব। মঙ্গলবার সেখানে যান রূপরেখা। আরও বিশিষ্ট জনেরাও গিয়েছিলেন সেখানে। পুলিশের অভিযোগ, রূপরেখারা যাওয়ার পরের দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্তি ছড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: ২০১৯-এ অনিশ্চিত বিজেপির দেড়শো-ও!

রূপরেখা বলেন, ‘‘বিক্ষোভ-অনশন গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের অঙ্গ। কালো পতাকা দেখানোটাও হিংসা নয়। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের কথা বলা উচিত ছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হাইকোর্টের লিখিত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি। তবে আমি নিশ্চিত, সরস্বতী পুজো দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রতিবাদ করাতেই ওদের রাগ।’’

লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেছেন রূপরেখা। দর্শন বিভাগের প্রধান, কলা বিভাগের ডিন, তার পরে উপাচার্যের দায়িত্ব সামলেছেন। অবসর নিয়েছেন ১৫ বছর আগে। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সরস্বতী পুজোর সিদ্ধান্তে রূপরেখার প্রশ্ন, ‘‘এ তো হিন্দু আচার। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ পুজো করতেই পারেন। করদাতাদের টাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান কেন হবে?’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এন কে পাণ্ডের যুক্তি, সরস্বতী বিদ্যার দেবী। তাই কারও সমস্যা থাকা উচিত নয়। রূপরেখার যুক্তি, ‘‘শুধু হিন্দুরাই সরস্বতীকে বিদ্যার দেবী বলে ভাবেন। আর কোনও ধর্মে কি তা রয়েছে?’’ এ বিষয়ে রূপরেখার পাশে দাঁড়াচ্ছেন সমাজবাদী পার্টির নেতারা। দলের মুখপাত্র সুনীল সিংহ সাজনের যুক্তি, ‘‘লখনউ ক্যাম্পাসে সব ধর্মের ছেলেমেয়েরা আসে। উপাচার্য আসলে নাগপুরের কথায় চলছেন। আরএসএস-এর কর্মসূচি মেনে চলছেন।’’ উপাচার্য এস পি সিংহের যুক্তি, পুজোর মতো পবিত্র কাজ ভুল নয়। তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস রাষ্ট্র গঠনে কাজ করে এবং সেখানে তরুণ প্রজন্ম যাতে যোগ দেয়, তা-ও নিশ্চিত করে। বিরোধীরা নিজেদের অভ্যাসে বিরোধিতা করছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Roop Rekha Verma Yogi Adityanath Lucknow University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE