সন্দেহের কোনও কারণ থাক বা না থাক তাতে কিছুই যায় আসে না। সে ক্ষেত্রে আদালতের রায়, নির্দেশও পুলিশের সন্দেহের মুখে ভেসে যায় খড়কুটোর মতোই।
অন্তত পুলিশি সন্দেহের পক্ষে তেমন যুক্তিই খাড়া করেছেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার রাকেশ রৌশন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জাল নথির সাহায্যেও তো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে কেউ নিজেকে ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে পারে! কিন্তু তাতে কী! পুলিশের নথিপত্র নিয়ে সন্দেহ হলেই ফের মামলা করা যেতে পারে।’’
বরাকের বাঙালিদের কাছে বিভীষিকার অপর নাম ‘ডাউটফুল (ডি)-ভোটার’। পুলিশের যদি সন্দেহ হয় যে অমুকবাবু ভারতীয় নন, বাংলাদেশি, তাহলেই তাঁর নামে বিদেশি চিহ্নিতকরণ ট্রাইব্যুনালে দায়ের হচ্ছে অভিযোগ। এরপরেও তিনি যে ভারতীয় নন তা প্রমাণের দায়িত্ব কিন্তু পুলিশের বা রাষ্ট্রের নয়। ওই ব্যক্তিকেই যাবতীয় নথিপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হবে তিনি ভারতীয়। বাংলাদেশের ছিন্নমূল মানুষ হলে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে তিনি বা তাঁর পিতা, পিতামহ ১৯৭১-এর আগে ভারতে এসেছেন। এ পর্যন্তও এক রকম।
কিন্তু কোনও ব্যক্তি সমস্ত কিছু প্রমাণ করে নিজেকে ‘ডি-মুক্ত’ করার পরেও তো রেহাই মিলবে! কিন্তু তাও মিলছে না। পুলিশি সন্দেহ তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
কাছাড় জেলার কাটিগড়ার বাসিন্দা রবীন্দ্রচন্দ্র ও যতীন্দ্রচন্দ্র দাসরা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। পুলিশ তাঁদের প্রথম বিদেশি বলে সন্দেহ করে ২০০৬-এ। ৫ বছর পর, ট্রাইব্যুনাল কাগজপত্র দেখে যতীন্দ্রবাবুকে ভারতীয় বলে মেনে নেয়। কিন্তু কিছুদিন পরই তার দাদা রবীন্দ্রবাবুকে এক তরফা রায়ে বিদেশি ঘোষণা করে ওই ট্রাইব্যুনালই। সঙ্গে সঙ্গেই জেলে পোরা হয়েছিল তাঁকে। ২০১৫-র ১৯ নভেম্বর গৌহাটি হাইকোর্ট রবীন্দ্রচন্দ্র দাসকেও ভারতীয় বলে স্বীকৃতি দেয়। ততদিনে রবীন্দ্রবাবুর অবশ্য চার বছর জেল খাটা হয়ে গিয়েছে।
এ বার আবার পুলিশি সন্দেহ গিয়ে পড়েছে যতীন্দ্রবাবুর উপর। ফের মিলেছে সমন। ট্রাইব্যুনালে কাগজপত্র দেখাতে বলা হয়েছে। সন্দেহের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন যতীন্দ্রবাবুর স্ত্রী, চার ছেলে এবং দুই মেয়েও। গত কালই সবাই মিলে শিলচরের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে জামিন নিয়েছেন।
যতীন্দ্রবাবুদের অবশ্য ১৯৬৪-র ‘রিলিফ এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট’, ১৯৬৫-র জমির কাগজ দেখাতেও কোন আপত্তি নেই। ১৯৬৬-র ভোটার তালিকায় যে বাবার নাম ছিল, তার প্রমাণপত্রও হাতেই রয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে দেখাতে গেলেই যে কয়েক বছরের ধাক্কা। প্রচুর খরচ, হয়রানি।
রবীন্দ্র-যতীন্দ্রবাবুরা বিস্মিত, বার বার তাঁদেরই কেন সন্দেহ করা হচ্ছে! পুলিশি এক সূত্রের ইঙ্গিত, এমন ঘটনা আরও আছে। কেন? অমোঘ উত্তরটি তো পুলিশ সুপার দিয়েই দিয়েছেন। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির প্রধান সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, ‘‘বাঙালি বলেই একজন ভারতীয়কে বারবার তাঁর নাগরিকত্বের পরীক্ষা দিতে হবে!’’ কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদ বা আইনি লড়াইয়ের চিন্তাভাবনা এখনই কিছু নেই তাঁদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy