সাড়ে তিন বছর অপেক্ষার পর শেষে শিলচরের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদ পূরণ হল। এত দিন কেউ বলছিলেন, শিলচরে কেউ আসতে চান না। অভিযোগ ছিল, রেজিস্ট্রার পদে কেমন লোক চাই, সেই বিজ্ঞাপনটাও ঠিকঠাক দিতে পারছিল না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অবশেষে সেই সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি মিলল। গুরুচরণ কলেজের বাণিজ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জীব ভট্টাচার্যকে রেজিস্ট্রার পদে নিযুক্তি দেওয়া হল। তবে নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ঘিরে গুঞ্জনও শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ তিনি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের সভাপতি। তাই এক দিকে, পরিষদ পরিবারে খুশির হাওয়া। সোশাল মিডিয়াতেও গেরুয়া ছাত্র সংগঠনের কর্মকর্তারা নানা ভাবে তা প্রকাশ করছেন। আর অন্য দিকে, একে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে নানা গুঞ্জন। সঞ্জীববাবু অবশ্য সে সবে গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে ভালভাবে কাজ করাটাই আসল কথা। সে জায়গায় সফল হবেন বলে নতুন রেজিস্ট্রার আশাবাদী।
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পরই রেজিস্ট্রারের স্থান। তিনিই প্রশাসনিক যাবতীয় দায়দায়িত্ব সামলান। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদে, বলতে গেলে, ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিল থেকেই কেউ নেই। সে বছরের ১৯ এপ্রিল পাঁচ বছরের কার্যকাল কাটিয়ে অবসর নিয়েছিলেন সৌরী সেনগুপ্ত। সেই থেকে শুরু হয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের পালা। মাঝে ২০১০-এর ৯ অগস্ট দেবব্রত দেবকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তবে তিনি পুরো মেয়াদ থাকেননি। চলে যান ২০১১-র ৩১ ডিসেম্বর। সাড়ে তিন বছরে দু’বার কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হলেও শেষ পর্যন্ত পদ পূরণ আর হয়ে ওঠেনি। উপাচার্য সোমনাথ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর বিধিবদ্ধ সব ক’টি পদ পূরণে উদ্যোগী হয়েছেন। দু’বার রেজিস্ট্রার পদে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ইন্টারভিউ-ও নেওয়া হয়েছে। একবার ‘টেকনিক্যাল ফল্ট’-এর কারণে কাউকে নেওয়া যায়নি। আর একবার যাঁকে বাছাই করা হয়েছিল, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখে যান। কিন্তু কাজে আর যোগ দেননি।
উপাচার্য এক বারের টেকনিক্যাল ফল্টের কথা বললেও আসলে বিজ্ঞাপন-বিভ্রাটে দু’বার নতুন রেজিস্ট্রার বাছাই করেও তাঁদের নিযুক্তি পত্র দেওয়া যায়নি। বিজ্ঞাপন মোতাবেক আবেদনের পর তাদেরআবেদনপত্র গৃহীত হয়। ইন্টারভিউ হয়। কিন্তু একবার ধরা পড়ে, প্রথম স্থানাধিকারী রেজিস্ট্রার হওয়ার সব শর্ত পূরণ করতে পারেননি। নির্দিষ্ট বেতনক্রমে নির্ধারিত সময়ের অভিজ্ঞতা নেই একজনের। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রার্থীর স্নাতকোত্তরে ৫৫ শতাংশের কম নম্বর ছিল। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানাধিকারীকে নিযুক্তি-পত্র দেওয়া হয়। তিনি শিলচরে এসে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে যান। কথা ছিল, ক’দিন পর এসে কাজে যোগ দেবেন। আর শিলচরের রাস্তা মাড়াননি। নির্ধারিত সময় অপেক্ষার পর সেই নিযুক্তি বাতিল করা হয়। তবে এ বার, তৃতীয়বারে আর কোনও ভুলত্রুটি নেই। সঞ্জীববাবুকে কালই নিযুক্তিপত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রেজিস্ট্রার ছাড়াও গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ করা হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রণবেন্দ্র দেবনাথ অবসর গ্রহণের কিছুদিন আগে মারা যান। ক’মাস ধরে সে দায়িত্ব অস্থায়ী ভাবে পালন করছিলেন বিভাগীয় ডেপুটি রেজিস্ট্রার জয়ন্ত ভট্টাচার্য। এখন এই পদে কাবুগঞ্জ জনতা কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রবীর দত্তরায়কে নিয়োগ করা হয়েছে। কলেজ ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের নতুন অধিকর্তা হয়েছেন কাছাড় কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস কর। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রথম জনসংযোগ আধিকারিক পদে কাউকে নিয়োগ করা হল। আগামী পাঁচ বছর এই দায়িত্ব সামলাবেন সেকশন অফিসার দেবাশিস চক্রবর্তী। অন্য পদগুলোও পাঁচ বছর মেয়াদের। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা রয়েছে। দুটোই সহকারী উপাচার্যের। রামেন্দু ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিফু ক্যাম্পাসের সহকারী উপাচার্য পদে ছিলেন। তাঁকে শিলচর ক্যাম্পাসে নিয়ে আসার সময় ডিফুতে ওই পদে নতুন কাউকে নেওয়া হয়নি। রামেন্দুবাবু ৩১ জানুয়ারি মারা যাওয়ায় শিলচর ক্যাম্পাসেও সহকারী উপাচার্যের একটি পদ ফাঁকা। তিন সহকারী উপাচার্যের মধ্যে এই সময়ে রয়েছেন একজন, দেবাশিস
ভট্টাচার্য। এই পদ পূরণে অবশ্য বিজ্ঞাপন বা ইন্টারভিউয়ের প্রয়োজন পড়ে না। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে তাঁদের বেছে নেন। ফলে তাঁদের নিযুক্তির মেয়াদও উপাচার্যের কার্যকাল পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy