প্রিয় পার্থসারথি,
বসন্ত বাতাসের জন্য আমার মনের কুঠুরিতে নির্দিষ্ট কোনও জানলা নেই। দরজা তো নেই-ই। সমস্তটাই চিচিং ফাঁক। তবু মধুমাস আসলেই মনের ভেতর আউল বাউল উদাস হাওয়া। নীল দিগন্তে এই সময় কেমন এলোমেলো মূর্ছনা। শীতের রম্য উপভোগের পালাও শেষ। বসন্ত শুরুতেই পলাশ বনে রঙের দাঙ্গা। বসন্ত জাগ্রত দ্বারে মানেই আনমনা মলয় পবনের ফাজলামি শুরু। মনের কোণে ছন্নমতি কুহু ডাক। আসলে হয়েছে কী এমন সময়টা কেমন হু হু মনকেমন করা বাতাস বয়। তার ঘ্রাণটাই যেন আলাদা। কী বিশুদ্ধ ভাবে সত্য হয়ে উঠে শিমুল পলাশ দোল রং। উস্কানি দিচ্ছে মতিভ্রম
“চল পলায়ে যাই...”
ফাগুন মানেই কী এক আবিল সময়। ইদানীং বহুশ্রুত সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘চতুষ্কোণ’ ফিল্মের ওই গানটা গুন গুন করি—
“বসন্ত এসে গ্যাছে...”
এই রে ভাবছো তো, রাইয়ের হলটা কী। এই তো গত সপ্তাহেই মোবাইলে অতক্ষণ কথাবার্তা হল। আজ আবার অ্যাত্ত বড় একখানা ই-মেল পাঠাচ্ছে কেন। আজ মনটা বড় বেশি উতলা হয়ে গেছে। বহুদিন তোমাকে দেখিনি। সেই যে চাকরি নিয়ে ভিন প্রদেশে চলে গেলে। কিশোরীবেলায় তোমার প্রতি ক্রাশ ছিল ঠিকই, তবে কালের নিয়মে স্মৃতি কিছুটা ফেড আউট হলেও মনেও তো পড়ে তোমায় মাঝে মাঝে। আমি জানি তোমারও সেটা হয়। খুব চিঠি লিখতে ইচ্ছে হল তোমাকে। হাতে লেখা চিঠি নয়। ই-মেলে। ইদানীং কম্পিউটারে অভ্র কি-বোর্ড বাংলা টাইপটাও বেশ রপ্ত হয়ে গেছে। এই বসন্তে আস্ত একটা ই-মেল লিখছি তোমায়।
ভিজে যাচ্ছে সমস্ত বসন্ত নির্মাণ। মনটাও বড্ড বাউন্ডুলেপনা শুরু করেছে। ঋতুরঙ্গের ফাগ উড়ছে চারদিকে। হৃদয় বসন্তোবনে কোনও মাধুরী বিকশিত না হলেও আজও হৃদয়টা কেমন প্রেম প্রেম আকুলতা জুড়ে দেয়। কী বিচ্ছিরি ব্যাপার বলো দিকি। প্রেমের সঙ্গে বসন্তের এই গা ঘেঁষাঘেঁষি একাত্মতা যেন একটা থাকতেই হবে। বসন্ত ছাড়া নাকি প্রেম মিলন তেমন করে সম্ভবই নয়। যে বসন্তে নাকি শিব যে শিব, তিনিও স্বয়ং বৈরাগ্য ভুলে মুহূর্তের জন্য পার্বতীর প্রতি মাতোয়ারা হয়ে পড়েছিলেন। আবার অমন বীর চরিত্র রাজা রামচন্দ্র, তিনিও আকুল হয়েছেন সীতা বিরহে। লক্ষ্মণের কাছে বসন্ত বিলাপে অধীর হয়েছেন রাম। এই যেমন আমারও মনের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বসন্ত বিলাপ।
হাতে গোনা চার দিন পরই তো ‘বসন্তোত্সব’। কেমন শান্তিনিকেতনি কেতায় এলিট সদৃশ কায়দায় বললুম বলো তো —‘বসন্তোত্সব’। আমাদের এতকালের চেনা ‘দোল’ ‘হোলি’ ‘ফাগুয়া’ না বলে, বললুম বসন্তোত্সব শান্তিনিকেতনকে মাধ্যম করে, সেখানকার বসন্ত উত্সবকে মডেল করে ক্রেজ হয়ে ওঠা খানিক রংবেরঙের আবির খেলা। বসন্ত মানেই উত্সবের আতিশয্যে মাতোয়ারা বাঙালির কর্ণকুহরে ফাগুন পূর্ণিমার ঢাকে কাঠি পড়া। সেই হুল্লোড়ে সকলেই ব্যস্ত বাসন্তিক রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলতে। বসন্তোত্সব মানেই অনন্তকাল ধরে চলে আসা বৈতালিক, গৌরপ্রাঙ্গণ, প্রার্থনা গৃহ আর রবীন্দ্রসঙ্গীত মুখর শোভাযাত্রা। পর দিন ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই তাদের কণ্ঠে কড়া নাড়ার গান “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল”। গলায় হাতে খোঁপায় পলাশের মালা জড়ানো হলুদ শাড়িতে শোভিত নারীরা। পুরুষরাও হলুদ পাঞ্জাবি উত্তরীয়তে। তুমি বোধহয় জানবে, শান্তিনিকেতনের বসন্ত উত্সবে যে পোশাকবিধি রয়েছে তার প্রাথমিক রূপ গুরুদেবের সময়েই তৈরি করে দিয়েছিলেন শিল্পী নন্দলাল বসু ও সুরেন্দ্রনাথ কর। সময়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের রক্ষণশীলতার বাতাবরণ ভেঙে বসন্তোত্সব হয়ে উঠেছে নবীন প্রবীণ চেনা অচেনার আপাত মিলন উত্সব। যেখানে তুমি তোমার পাশে দাঁড়ানো অপরিচিতা লাজুক যুবতীটিকেও আবিরে রাঙিয়ে দিতে পারো নির্দ্বিধায়। সে দিন যে মনটার স্বাভাবিক ছন্দও বড্ড বেশি রঙিন লাগে। বলতেই পারো তুমি তোমার মতো করে “রাই এ তো জীবনের উত্সব। যৌবনের উত্সব”। আবির মাখা দিনে আগে তুমি অন্তত কয়েকশো বার ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে আমাকে। মনে পড়ে সে কথা।
রং মাখানোর অছিলায় যা দুষ্টুমিই না করতে তখন। আমি সে দিনের নিজের ব্লাশ করা লাজুকপনাটা এখনও টের পাচ্ছি। বার বার ধুলো ঝেড়ে পেছনে তাকানো কি যুক্তিযুক্ত হতে পারে না? কেন তা হলে মানুষ বার বার পেছনে ফেরে? ডাউন মেমরি লেন ধরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে যেতে থাকে। একাকী হয়ে যায়। মন জুড়ে আউলবাউল উদাস হাওয়া। একটু যেন চোখ ছলছল। যাক গে কী যেন বলছিলাম? থুড়ি লিখছিলাম—ও হ্যাঁ ওই শান্তিনিকেতনী ঢংয়ে আবির খেলা দিয়ে তেমন বিশদে বিষয়টাকে আদৌ বোঝা যাবে না। আমাদের একটু পিছোতে হবে সময়সারণির গতিপথ ধরে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানটা থেকে ফিরে যেতে হবে সেই আড়াই দশক আগে।
আমাদের সেই আড়াই দশক আগের ‘দোল’এর ঠিকঠাক প্রতিশব্দ ছিল ‘হোলি’ই। একটা বাঙালি অ-বাঙালি বিভেদ ছিল ঠিকই। তবে সেখানে কোনও সাংস্কৃতিক বিভাজন ছিল না মোটেই। তোমার মনে আছে পার্থসারথি, ভেষজ আবিরের ন্যাকামি নয়, তখন তোমরা কোথা থেকে সব জোগাড় করে আনতে বাঁদুরে রং, নাছোড়বান্দা অ্যালুমিনিয়ম পেন্ট, ম্যাজেন্টা-হলুদ-লাল-পার্পল রং ভরা অগুনতি বেলুন। আমরাও প্রথম দিকটা খেলব না খেলব না করেও বাথরুম থেকে স্নানের বালতিগুলো জুটিয়ে গুচ্ছের রং গুলে গুলে পেতলের পিচকারিতে ভরতাম আর রাস্তার দিকের বারান্দার গ্রিলের ফাঁক গলিয়ে পথচারীদের দিকে জলে গোলা রং ছিটোতাম। কেউ রাগ করতেন না। উল্টে প্রশ্রয়ের হাসি উপহার দিতেন। বয়ঃসন্ধি বয়সটাতে বাড়ির চৌকাঠ ডিঙিয়ে রং খেলতে যাওয়ার অনুমতি ছিল না বাড়ি থেকে। সদর দরজার কোলাপসিবলে আট লিভারের পেতলের গোদরেজ তালা। আর তোমরাও তো কেউ ভদ্দরলোকের মতো করে রং খেলতে না। কপালে ফেট্টি বেঁধে, কোথা থেকে ঢোল ক্যানেস্তারা জোগাড় করে অনভ্যস্ত বাঙালি হাতে দুমদাম পিটিয়ে পাড়া চক্কর দিতে। আর থেকে থেকেই কোরাসে হল্লা করতে,
“আয়া হোলি কা তেওহর
উড়ে রঙো কি বাহার
ছ র র র র র র
হোলি হ্যায়-য়-য়-য়-য়-য়...’
আমাদের বাড়ির বাইরের ক্রোম ইয়োলো রঙা দেওয়ালে তোমাদের ব্ল্যাক জাপান রঙে চোবানো আস্ত তালুর ছাপ। বেলেল্লাপনারও একটা সীমা আছে। তবু হোলির দিন বলেই সাত খুন মাপ।
তোমরা যতই ‘রং রসিয়া’ হয়ে থাকো না কেন, ভিড়ের মাঝে তোমায় আমি ঠিক চিনে নিতাম। তখন যে আমারও বসন্ত ফুটছে গায়ে গায়ে। হোলির ঠমক মেশানো তোমাদের ওই নাচা-গানায় আমিও কী প্রবল ভাবে পাগলপাড়া। তোমাদের ‘রঙো কি বাহার’ ছড়িয়ে পড়েছে চোখে চোখে। সে তো আর রং নয় তখন। রঙের আকারে প্রকারে জেগে ওঠা অনুভব। তোমার রং মাখা মুখের প্রতিটি কোনায় খেলা করছে দুষ্টুমির কাম ছবি। রঙের নিশপিশ মুখে তোমাদের চোখগুলো আরও বেশি বেশি অদ্ভুত সাদা লাগত। সে চোখেও মদনবহ্নির ঝলকানি।
বেলা বাড়লে পাড়াতুতো কাকুদের দেখতাম রঙে ভূত হয়ে রকের চাতালে বসে দল বেঁধে তাস পেটাচ্ছেন। আর পাশে রাখা কোল্ড ড্রিংকসের বোতল কাড়াকাড়ি করে গলায় ঢালচ্ছেন। আসলে ওগুলো তো আর নেহাত্ কোকাকোলার বোতল ছিল না। ওতে যে দারু মেশানো আছে আর অমুক কাকু তমুক কাকু সবাই এঁটো করেই চুমুক দিয়ে তাই খেয়ে যাচ্ছেনএটাও কিছু পরেই বুঝেছিলাম। যাকে তখন ‘তাস’ বলে জানতাম সেটাও যে জুয়া খেলা এটাও পরে জেনেছিলাম। আসলে হোলির দিন ‘জুয়া’ খেলতেই হয়। ওই কয়েক দান আর কী। হোলির দিন একটু আধটু জুয়া খেলাটা নাকি হোলির রেওয়াজ। আরও দু’এক বছর পর যখন পাড়াতুতো কোনও বৌদি এসে আচম্বিতে মাথায় চুলে দলা লাল আবির ঢেলে ঘেঁটে দিত তখন সাময়িক গুস্সা দেখাতাম। তার পরই আমিও জুটে যেতাম ওই বৌদি কাকিমাদের মহিলা মহলে। বেলা শেষে স্নান ও চুলে শ্যাম্পু করতে গিয়ে বাথরুমের আয়নায় ওই লাল গুলাল মাখা নিজের সিঁথিটাই কত বার নানান অ্যাঙ্গেলে দেখতাম আর কেমন এক অজানা পুলকে লজ্জা পেতাম। এখন হয়তো সে দিনের কথা ভেবে একটু বোকা বোকা লাগছে, কিন্তু তখন ওই সদ্য কৈশোর পেরোনো বয়সে ওটাই স্বাভাবিক ছিল নাকি। তখন তো রঙের কোরাস সর্বাঙ্গে। অকারণ বেজে যেত ফাগুনের স্বরলিপি।
‘দোল’ আর ‘হোলি’-র মধ্যে পার্থক্য, সেটা যে কী তা বুঝতেও তো পারি না। ক্যালেন্ডারের পাতায় দু’দিন ছুটি বরাদ্দ এ পর্যন্ত ঠিক আছে। দোল মানে কেবল বাঙালিদের রঙের মাতন আর হোলি মানে সর্বভারতীয় রং খেলা—কেবল এক দিন আগে বা এক দিন পরের পার্থক্য নয়। এই পার্থক্যর মধ্যে থেকে গেছে আরও অনেক কিছুই। ‘দোল’ কখনওই ‘হোলি’ হয়ে উপচে ওঠেনি সে সময়ের মধ্যবিত্ত বঙ্গজন পরিসরে। হোলি তো একটা সামাজিক উত্সব। প্রাচীন বাংলায় দোল উত্সব একটা বিশেষ সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল যা সর্বসাধারণের মিলনোত্সব হিসেবে পরিণত হয়েছিল। তোমাদের বাড়ির ঠাকুরদালানে তো দোলপূর্ণিমার দিনে ম্যারাপ বেঁধে আত্মীয় পরিজনদের খাওয়াদাওয়া আর সত্যনারায়ণের সিন্নি দেওয়া হত শুনেছি। কী বলো তো, আমাদের সব উত্সব পালনের মধ্যেই একটা সংস্কার-শুদ্ধি থাকে।
এই যে বসন্তোত্সবের অনুষঙ্গে দোলনা রয়েছে, যেখানে কৃষ্ণ প্রিয়সখি শ্রীমতীর সঙ্গে দোলারোহণ করেন। লাজুক ও সালঙ্কারা রাধার পাশটিতে গোলীবল্লভ কৃষ্ণের যুগলমূর্তি কল্পনা করে হোলি যাত্রা, সেখানে ওতপ্রোত হয়ে থাকে প্রকৃতি, স্থানীয় মানুষ, বসন্তের গুঞ্জরন, ভিড় হট্টগোল, মদ্যপান, গান, উদ্দাম নৃত্য, কিছুটা লালসা, গুলাল-আবির এবং শেষে কিছুটা ধর্মের অনুষঙ্গ। সেই যে রং অনুরাগী রাধা তবু কপট ভঙ্গিমায় তার কানাইয়াকে দোষারোপও যেমন করে আবার আহ্লাদে গদগদ হয়ে মুরলীধরকে প্ররোচিতও করে। রাধা চায় কৃষ্ণ তাকে পিচকিরির রঙে ভিজিয়ে চুপ্পুস করে দিক। বসন্ত ফুল্লকুসুমের হোরি খেলায় আমোদ উল্লাস সামান্য ছেরছার গালিগালাজ তখন সহজাত। দোলের দৃশ্যকল্পে নিজস্ব লিবিডো চরিতার্থ করার খুল্লামখুল্লা ছঁুই-ছঁুই খেলা। এ তো ‘রং রসিয়াকে’ চতুর মায়াজালে বেঁধে খেলার এক অমোঘ ছলনা মাত্র।
ইনস্টাগ্রাম হোয়াটস অ্যাপ ফেসবুকের যুগে দাঁড়িয়ে ফেলে আসা কিশোর পেরিয়ে তরুণ হতে থাকা বয়সের সেই সব দিনলিপিকে জন্মান্তরের সবজে মখমল স্মৃতি মনে হয় না? মেয়েবেলার হোলি মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি হারিয়ে ফেলা মনকেমন কথা। চোখের কোণ চিক চিক করে ওঠে। তোমার কি মনে হয় না, আমাদের ফেলে আসা জীবনটাও মাঝে মাঝে গল্প হয়ে ওঠে। আর গল্পগুলো জীবন। আমাদের যাপন থেকে উঠে আসা কয়েক টুকরো মুগ্ধতা, দু’এক টুকরো বিচ্ছেদ কিংবা সময়ের স্বরলিপি।
ফাগের জৌলুসে রঙে ভরে ওঠে লোকপ্রিয় হোরি উত্সব
“খেলত হরি সঙ্গ সকল
রং ভরি হোরি সখি...
গো-বলয়ের রমণীকুলও হোলির দিন কিছু কম যান না। রাধা ললিতা বিশাখার মতো কোমল স্বভাবা মেয়েরাও সে দিন দাপটের সঙ্গে ধুন্ধুমার হোলির ধামাকায় মেতে থাকেন। মাতোয়ারা মথুরা বৃন্দাবন বরসানাও। হোলির দিন কৃষ্ণের জন্মস্থান নন্দগাঁও থেকে রাধার জন্মস্থান বরসানা গ্রামে। মেতে ওঠে তামাশা মস্করা চটুলতা। সবাই যেন সে দিন এক একটা ‘কলির কেষ্ট’। টিভি-তে আজকাল মথুরা বৃন্দাবনের লাইভ টেলিকাস্টও দেখায় ব্রেকিং নিউজে সেলিব্রিটিদের হোলি বাইট। কাড়া-নাকাড়া ঢাক ঢোল বাদ্যে হল্লা-গুল্লা আমোদ খেউড় নাচ-গানায় ছয়লাপ সমস্ত চরাচর। মাঝে মাঝে টিভি স্ক্রিনে ফাগুয়ার ছিটে। ফাগ উড়ছে। ও দিকে শান্তিনিকেতন পৌষমেলার মাঠ-উত্সবের বর্ণবাহার। এ দিকে কিছুটা দেহাতি আরবান ফাগুয়া। ফাগ উড়ছে...ফাগ উড়ছে।
দোল মানে রাধাকৃষ্ণের দোলায় আরোহণ। দোল মানে দোল মঞ্চ, মঠ মন্দির, দোলনায় আসীন রাধাকৃষ্ণের শ্রীঅঙ্গে আবির-কুমকুমের প্রলেপ লাগিয়ে ‘জয় গোপীমুখাম্ভোজ-মধুপান-মধুব্রত’ মন্ত্র তিন বার উচ্চারণ। কিংবা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর জন্মতিথি পালন পর্ব—এ সব তুমিও জানো, আমিও জানি। জানি মানে, ওই আর কী এতদিনের সংস্কার, উত্সব, ছুটি, ধর্ম এসবই জেনে এসেছি। ওই দিন সমাজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দের রীতিগত ভাবেই এড়িয়ে গেছি। সন্ধেবেলা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাকে গুরুজনদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেছি। মিষ্টি খেয়েছি। বড় বয়সে ভাং মেশানো শরবত খেয়েছি বাদামবাটা কেশর সহযোগে। আহা কী উপাদেয় পানীয়টি।
আমরা এখন অত সব ঠুনকো ধর্মতত্ত্বে বিশ্বাসী নই বাপু। বুঝিও না। আমাদের কাছে এখন হোলি মানে—
“থোরি সি মস্তি থোরি সি প্যায়ার” আমাদের কাছে ‘হোলি’ মানে মোচ্ছবের দিন। ‘দোল’ মানে ঝিঙ্কু ঝিঙ্কু ‘বসন্ত উত্সব’।
অনেক ছাইপাশ লিখে ফেললাম, জানি বিরক্ত হবে না। খুব চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছিল যে তোমায় এই মধুমাসে। দোলের অনেক অনেক শুভেচ্ছা তোমায়। সঙ্গে, মনে মনে এক মুঠো আবির পাঠালাম। মেখো তোমার কপালে গালে মাথায়। তার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে না হয় আমার কথা কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও স্মৃতিকে রিওয়াইন্ড কোরো।
অনেক ভাল লাগা
আবির শুভেচ্ছা
তোমার রাই
আমরা এই শহরে এসেছি ১৯৮৬ সালে। দীর্ঘদিন প্রবাসে খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই বদলে গেছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাঙালি হিসেবে জাত্যভিমান থাকবেই। আমাদের আর একটা পরিচয় ভোজনরসিক বাঙালি। বিভিন্ন ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন পদের রান্না। আমাদের পূর্বপুরুষরা এ ভাবে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করেছিলেন। বসন্ত ঋতুতে নিম-বেগুন, সজনে ফুলের বড়া, সজনে উচ্ছে, কাঁচকলার শুক্তো। গ্রীষ্মে কচি আমের টকডাল, মৌরলা মাছের পাতলা ঝোল। বর্ষায় ইলিশ, ভুনি খিচুড়ি আর আনারসের চাটনি। শীতে ফুলকপি-বাঁধাকপির নানাবিধ তরকারি, নলেন গুড়ের পিঠে-পুলি, পায়েস। এর সব ক’টাই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এই সব চিন্তা করে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, এই অঞ্চলের বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা পদের তৈরি খাবার পরিবেশন করার। এখন আপনার সহযোগিতাই আমাদের সাফল্যের পাথেয়। শুধু মুনাফা উপার্জনের লক্ষ্য নিয়ে এই কাজে হাত লাগাইনি। রুচি ফেরাতে চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy