চোখে স্ট্রোক হলে এক দিকের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
স্ট্রোক! কথাটি শুনলেই প্রথমে মস্তিষ্কের কথাই মনে হয়। স্ট্রোকের সঙ্গে যোগ রয়েছে হার্টেরও। বাড়তে থাকা গরম, আপেক্ষিক আর্দ্রতাজনিত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে দিন কয়েক আগে অভিনেতা শাহরুখ খানও হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। সেই খবরও সাধারণ মানুষের মনে বেশ ভয় ধরিয়েছে। কিন্তু গরমের দাপটে কিংবা শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়লে একই ভাবে স্ট্রোক যে চোখেও হতে পারে, সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেরই ধারণা নেই।
চোখের চিকিৎসকেরা বলছেন, চোখ হল শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইন্দ্রিয়। ঘুমের সময়টুকু বাদ দিলে দিনের বেশির ভাগ সময়ে চোখ খোলা থাকে। বাতাসে মিশে থাকা ধুলো, ময়লা, জীবাণুর সঙ্গে ঝলসানো গরম হাওয়ার আঁচ সরাসরি চোখে এসে লাগে। সেখান থেকেই শুরু হয় ইনফ্লেমেশন অর্থাৎ প্রদাহ। চোখে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে চোখের প্রেশার বেড়ে যায়। রেটিনা রক্তবর্ণ হয়ে ওঠে। স্ট্রোক কিন্তু একই সঙ্গে দু’টি চোখে হয় না। তবে, রোগ নির্ণয়ে বা চিকিৎসায় গাফিলতি করলে দু’টি চোখেরই দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে। তা ছাড়া চোখের সঙ্গে মস্তিষ্কেরও সরাসরি যোগ রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপ বা শর্করা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও কিন্তু তার প্রভাব চোখের উপর এসে পড়তে পারে। সেই সব কারণেও চোখে স্ট্রোক হয়।
আপাত ভাবে চোখে কী কী লক্ষণ ফুটে উঠতে পারে?
১) চোখ লাল হয়ে ফুলে সমানে জল পড়তে পারে।
২) রেটিনার উপর রক্তজালিকা ভেসে উঠতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধতেও দেখা যায়।
৩) চোখে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। ফলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়।
চোখে স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণগুলি কী কী?
১) ফ্লোটার্স:
সাদা দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে হতে পারে তার গায়ে যেন ধূসর ধূলিকণা ঘুরে বেড়াচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ফ্লোটার্স’ বলা হয়।
২) ঝাপসা দৃষ্টি:
চোখে স্ট্রোক হলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। কারও ক্ষেত্রে চোখের নির্দিষ্ট একটি অংশ ঝাপসা হয়ে যেতে পারে। আবার কারও ক্ষেত্রে পুরো দৃষ্টিশক্তিই ঝাপসা হয়ে যায়। পরিস্থিতি জটিল হলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কাও থাকে।
৩) চোখের অতিরিক্ত চাপ:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চোখে স্ট্রোক হলে তা রোগী বুঝতে পারেন না। কারণ চোখের মধ্যে বিশেষ কোনও কষ্ট বা যন্ত্রণা হয় না। তবে, চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। একটু সচেতন থাকলে সেই অস্বস্তি টের পাওয়া যায়। অনেক সময়ে রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে রেটিনা উপর তা ছড়িয়ে পড়ে। তাই চোখ রক্তবর্ণ হয়ে যায়।
চোখের স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব?
১) নিয়মিত প্রাণায়াম করলে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে চোখের উপরেও চাপ কম পড়ে। চোখের স্ট্রোক এড়ানোর একটি অন্যতম পন্থা হল প্রাণায়াম।
২) চোখ ভাল রাখতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ বাদাম এবং বীজ খাওয়া প্রয়োজন। সঙ্গে যদি কিশমিশ, শুকনো ডুমুর খাওয়া যায় তা হলে আরও ভাল।
৩) রোজের ডায়েটে বিটা-ক্যারোটিন যুক্ত খাবার যেমন গাজর, পালং শাক, ব্রকলি, মিষ্টি আলু, স্ট্রবেরি রাখা যেতে পারে। একান্ত না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
৪) চোখে সরাসরি রোদ লাগলেও সেখান থেকে ক্ষতি হতে পারে। তাই রোদ থেকে চোখ দুটি বাঁচিয়ে রাখতে রোদচশমা ব্যবহার করার পরামর্শও দেওয়া হয়। তবে, সস্তার রোদচশমা পরলে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।
৫) চোখকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিতে হবে। দিনের যেটুকু সময়ে চোখ দু’টিকে কাজ না করালেই নয়, সেইটুকু সময় ছাড়া বাকি সময় চোখ বন্ধ করে রাখতে পারলেই ভাল। প্রয়োজনে চোখের হালকা কিছু ব্যায়াম করা যেতে পারে। বাজার থেকে ভাল মানের ‘আইমাস্ক’ কিনে মাখতে পারেন। না হলে ঘরোয়া টোটকা হিসাবে দিনের শেষে চোখের উপর দু’টুকরো শসা রাখলেও কাজ দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy