সোনিকা
ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সোনিকা সিংহ চৌহানের মা শারন সিংহ চৌহান,“তিন বছর হয়ে গেল। আমরা আমাদের সোনুকে হারিয়েছি। যারা ওকে চিনত তারা সবাই জানে সোনিকা ছিল ম্যাজিকের মতো। ওরকম সুন্দর মনের মানুষ সত্যি বিরল! আজ লকডাউনে আমরা ওর কাছে যেতে পারছি না। কিন্তু ওর কথা ভেবে আমরা মোমবাতি জ্বালাব।”
তিন বছর আগে শেষ রাতের কলকাতায় এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মডেল সনিকা সিংহ চৌহান। ঠিক কেমন করে মৃত্যু হলতাঁর? সেই তথ্য পরিষ্কার হয়ে আসেনি আজও। কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় মানুষ। কিন্তু এই দিনকে ভুলতে পারেননি সনিকার বন্ধুরা আর পরিবার।
সনিকার বন্ধু, ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য যেমন বললেন, “গতকাল সন্ধেবেলা থেকেই সনুর কথা ভাবছি। ’১৭ সালে ওর চলে যাওয়ার আগের দিন সন্ধেবেলা আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়। সেটাই শেষ! ভাবছিলাম সময়ের ঘড়িটা যদি ফিরিয়ে দেওয়া যেত? তাহলে ওকে সে দিন আমার সঙ্গেই রেখে দিতাম। আর কোথাও যেতে দিতাম না!তাহলে ওর আর কিছু হত না।”
সোনিকা চলে যাওয়ার পর সাহেবই সোনিকার বাবা-মায়ের ছেলে
দেশ-বিদেশে ফ্যাশন শুট। নামী চ্যানেলের হয়ে স্পোর্টস্ শো হোস্ট করা। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াতেন কলকাতার এই মেয়ে। মডেলিং দুনিয়ায় রাজ করতেন নিজের যোগ্যতায়। একটানা ১২-১৪ ঘণ্টার শুট হলেও কেউ কখনও সোনিকাকে বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখেননি। কাজই ছিল ওঁর প্রাণ। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন কেউ নেই যে সোনিকার স্বভাব নিয়ে অন্য রকম মন্তব্য করবেন। এমনই মিশুকে, খোলামেলা স্বভাবের মেয়ে ছিল সোনু। মুহূর্তের জন্য বাঁচতেন সোনিকা। আর মুহূর্তই ওঁকে নিয়ে গেল। সকলের মধ্যেও হঠাৎ একা হয়ে যেতেন তিনি।মৃত্যুর বেশ কিছু দিন আগে যেমন ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘কেউ কারও নয়। ‘হিউম্যান রেস’ মাত্রই স্বার্থপর। আমাদের সকলকে নিজেদের খুঁজে বের করতে হবে। নিজেদের আনন্দ। নিজেদের শান্তি…’’
মডেল অভিনেত্রী রোজা বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভাবছেন সনিকার সঙ্গে প্রথম দেখার দিন। একটা শুটে প্রথম দু’জনের আলাপ। “আমি একেবারেই মিশুকে নই। কিন্তু ওকে দেখেই বলেছিলাম,‘তোমার হাসিটা কী ভাল!’ আসলে ও কথা বলিয়ে নিতে পারত, এটাই ওর ম্যাজিক!” রোজা খুলে বসেছেন সনিকার সঙ্গে তাঁর প্রথম শুটের ছবি। সে দিন রুবিতে পৌঁছতে পারেননি তিনি। “আমি পৌঁছনর আগেই ওকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। ওকে আর দেখিনি। সেই কারণে আমার দেখা সেই প্রাণবন্ত সুন্দর সনিকা আজও বেঁচে। হাত বাড়ালেই পাব।”
২০১৭-র মে মাসে অনেক দিনের জন্য মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল, তাই প্রাণের শহর কলকাতায় বন্ধুদের নিয়ে পার্টিতে মেতেছিলেন তিনি। সঙ্গে বন্ধু বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। সে দিন বন্ধু সাহেব ভট্টাচার্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। শুক্রবারের পার্টিতেও হাসিতে, নাচে বরাবরের মতো সোনিকা উচ্ছ্বল, বর্ণিল। সোনিকার বাবা-মা মেয়ের কাজ নিয়ে বরাবরই খুশি ছিলেন। সোনিকাও নিজেকে বলতেন, তিনি ‘লাকি চাইল্ড’। ইন্ডাস্ট্রিতে সকলেই জানতেন, অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে সোনিকার বিয়ে হবে। কিন্তু সোনিকার মৃত্যু বদলে দিল সব!
বিক্রমের সঙ্গে
এখন সোনিকার শূন্যতা স্মৃতির মধ্যে দিয়ে পূর্ণ করছেন তাঁর বন্ধুরা। সোনিকার চলে যাওয়া যেমন আজও মেনে নিতে পারছেন না মডেল-অভিনেত্রী রেচেল হোয়াইট। “ওরকম প্রাণবন্ত মেয়ে! ভাল কাজ করছিল। সকলের সঙ্গে হইহই করে বাঁচত। সে যে দুম করে এভাবে চলে যাবে, সত্যি আজও মনে হয় না আমার।”
“একজন মা তার মেয়ের এই যাওয়াকে কোনও দিন ভুলতে পারবে না। কিন্তু আমি দেখেছি, আন্টি সোনিকার সুন্দর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে। যেমন বেঁচে আছে সাহেব। সোনিকা চলে যাওয়ার পর সাহেবই সোনিকার বাবা-মায়ের ছেলে। ওদের সময় দেওয়া, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, দেখাশোনা— সব সাহেব করে।কী প্রবল ভাবে বাঁচছে ওঁরা!” বললেন প্রণয় বৈদ্য।
অনেক বেঠিকের মাঝেই একমাত্র মেয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছে চৌহান পরিবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy