নারী স্বাধীনতার অর্থ কী? ঠিক কতখানি স্বাধীনতা পাওনা হয় এক জন মহিলার? প্রশ্ন উঠছে অনন্তকাল ধরে। আর সে সব প্রশ্ন আরও বেশি করে উস্কে দেয় ছোট পর্দার ধারাবাহিকগুলি। ঠিক যেমন নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে ‘চিরসখা’ ধারাবাহিক। একজন তরুণীর কি অধিকার নেই বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে একলা বেড়াতে যাওয়ার, একান্তে খানিকটা সময় কাটানোর?
ছোট পর্দায় মনোরঞ্জনের প্রধান অবলম্বন ধারাবাহিক। গত কয়েক বছরে মহিলা প্রধান কাহিনিই রাজত্ব করেছে বাংলার ছোট পর্দায়। সেখানে নানা সামাজিক প্রেক্ষাপটে মহিলাদের লড়াইয়ের কাহিনি উঠে আসে পারিবারিক আবহে। ধারাবাহিকের দুনিয়ায় সে পথেই ‘চিরসখা’ হাঁটছে, একেবারে নতুন আলো নিয়ে। কাহিনি বয়নের একের পর এক মোচড়ে ভেঙে যাচ্ছে চিরাচরিত ধ্যান ধারণা।
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাহিনি মানেই পরিবার মুখ্য, যৌথতার নিটোল ছবি। সেখানে থাকতে পারে কোনও সর্বংসহা নারী, যার জীবনকাহিনি অনুপ্রেরণা জোগায়। ‘চিরসখা’র কমলিনীও তা-ই। তবে কমলিনীর নায়ক এবং তার চরিত্র আক্ষরিক অর্থেই ‘স্বতন্ত্র’। স্বামীর মৃত্যুর পর এই স্বতন্ত্রই আগলে রেখেছে তার কমলিনীর পুরো পরিবারকে, তার শাশুড়ি, ননদ, দুই ছেলে, এক মেয়েকে। কিন্তু প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও কমলিনী-স্বতন্ত্রের সম্পর্ক কোনও নাম পায়নি। হয়তো তাই তারা ‘চিরসখা’।
আরও পড়ুন:
নারী দিবসের রাতে পর্দায় দেখা যাবে কমলিনীর বড় ছেলের বিয়ে। এক প্রতিক্রিয়াশীল পরিবারে বিয়ে হচ্ছে তার। মাকে নাকি ছেলের বিয়ে দেখতে নেই। তাই বরযাত্রী হিসাবে যেতে পারবে না কমলিনী! অন্তত তেমনই দাবি পাত্রীপক্ষের। তা নিয়ে বিরোধিতার সুর চড়া হয়েছে। আগের পর্বেই দেখা গিয়েছে, মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে কমলিনীর মেয়ে, ছোট ছেলে এবং ছোট ছেলের হবু স্ত্রী। কমলিনী পাশে পাবে স্বতন্ত্রকেও। ভেঙে যাবে প্রথা! সে উত্তর দেবে পরবর্তী পর্বগুলি।
শুধু তা-ই নয়, এই বিয়ের আভ্যুদয়িক কাজও করছে কমলিনীর ‘নতুন ঠাকুরপো’ স্বতন্ত্র। পরিবারের, গোত্রের কেউ না হয়েও এই কাজ করার অধিকার সে পেয়েছে শুধুমাত্র ভালবেসে। এ বিষয়ে কমলিনী বা তার ছেলেমেয়েদের কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি নেই কমলিনীর ভাইয়েরও।
কিন্তু এরই পাশে উঠে আসে আরও এক ছবি। হবু বৌদিকে কমলিনীর ছোট ছেলে আর মেয়ে প্রশ্ন করে দাদার সঙ্গে বৌদি কি মধুচন্দ্রিমায় একাই যাবে? কেন নিয়ে যাবে না গোটা পরিবারকে? এমনকি পেশায় মনোবিদ ছোট ছেলের প্রেমিকাও এ বিষয়ে হবু বৌ-কে কটাক্ষ করতে ছাড়ে না। তাদের সকলেরই মত, বেড়াতে গেলে পরিবারের সকলকে নিয়েই যাওয়া উচিত। কিন্তু তা হলে আর এক জন মহিলার শখ-আহ্লাদের গুরুত্ব কোথায় রইল?
আনন্দবাজার ডট কম এই প্রশ্ন রেখেছিল কমলিনীর ছোট ছেলের প্রেমিকা, মিঠিলরূপী লাভলি মৈত্রর কাছে। সত্যিই কি এই বিতর্কের কোনও প্রয়োজন ছিল? লাভলির কথায়, “চিত্রনাট্য অনুযায়ী কমলিনীর পরিবার এমনই। তারা সবাই বেঁধে বেঁধে থাকতে চায়। এ ধারাবাহিক শুরুই হয়েছিল পারিবারিক পুরী ভ্রমণের দৃশ্য দিয়ে। সেখানে ছেলের অবিবাহিত বান্ধবীকেও নিয়ে গিয়েছিল কমলিনী-স্বতন্ত্র, শুধু ভালবাসার খাতিরে। তাই পরিবারের ছোটদের প্রত্যাশা, বড়দার বিয়ের পরও এমন একটা জমজমাট ভ্রমণ হবে।”
সত্যিই কি এই বিষয়টি বাস্তবায়িত হবে, না কি ফের দ্বন্দ্ব তৈরি হবে মধুচন্দ্রিমা ঘিরে? কমলিনী কি বুঝবে সন্তানসম পুত্রবধূর চাওয়া-পাওয়ার হিসেব? লাভলি বলেন, “সেটা তো আমরাও জানি না এখনও। ধারাবাহিকের কাহিনিক্রম বলে দেবে সে কথা।”
এই মধুচন্দ্রিমা বিতর্কের কোনও প্রয়োজন ছিল কি না প্রশ্ন করা হয়েছিল কাহিনিকার লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কেও। তাঁর সাফ কথা, “মধুচন্দ্রিমায় পরিবার নিয়ে যাওয়া যায় না, এটা আমি মনেই করি না। এক সময় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে চিনতেন না। সম্বন্ধ করে বিয়ে হত। তখন তাদের খানিকটা সময় একান্তে কাটানোর প্রয়োজন হতেও পারত, একে অপরকে চিনে নেওয়ার জন্য। এখন সকলেই একসঙ্গে সময় কাটিয়ে বিয়ের কথা ভাবেন। ফলে সে রকম যৌথ পরিবারে বিয়ের পর ভ্রমণের ক্ষেত্রে সকলকে নিয়ে যাওয়াই তো ভাল!”
তবে প্রশ্ন উঠছেই, ভাল-মন্দ বা সাদা-কালোর এই সীমারেখা নিয়ে।