সাড়ে পাঁচ মাস আগে রাজ্যের ভোটপর্ব মিটে গেলেও এখনও পর্যন্ত হরিয়ানায় বিরোধী দলনেতা ঠিক করতে পারেনি দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস! শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে বাজেট অধিবেশন। সেখানে বিরোধী দলনেতা ছাড়াই বসতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। তাদের এই বেহাল দশা নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানাতে ছাড়ছে না বিজেপি। তাদের কটাক্ষ, কংগ্রেস নেতারা কে কার পিঠে ছুরি মারবেন, তার অঙ্ক কষতেই ব্যস্ত!
গত বছর শেষ দিকে হরিয়ানা বিধানসভার উপনির্বাচনে অপ্রত্যাশিত ভাবে হারতে হয়েছে কংগ্রেসকে। হরিয়ানার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে জনমানসে তৈরি হওয়া ক্ষোভ কংগ্রেসের পক্ষে যাবে বলেই মনে করেছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। কংগ্রেস নেতৃত্বও হরিয়ানা জয় নিয়ে প্রবল ভাবে আশাবাদী ছিলেন। একাধিক বুথফেরত সমীক্ষাতেও কংগ্রেসকেই জয়ী দেখানো হয়েছিল। তার পরেও সে রাজ্যে শোচনীয় ভাবে হারে কংগ্রেস। ফের জয় পায় বিজেপি। কংগ্রেসের হারের পিছনে দলের একাধিক নেতানেত্রীর মধ্যে বিরোধকেই মূল কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়।
সেই ভোটপর্ব মেটার পর থেকে দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতরের একাধিক বৈঠক হলেও এখনও পর্যন্ত বিরোধী দলনেতা বেছে নিতে পারার জন্য রাজ্য রাজনীতির জটিল সমীকরণকেই তুলে ধরা হচ্ছে। ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা বনাম দীপেন্দ্র হুডা বনাম কুমারী শৈলজা— একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত রাজ্য কংগ্রেস। ফলে সর্বসম্মত কোনও নাম মিলছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী নয়াব সিংহ সাইনির সহযোগী প্রবীণ আত্রে বলেন, ‘‘ভূপেন্দ্র হুডা ও দীপেন্দ্র হুডা নিজেদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই কলকাঠি নেড়েছিলেন। ফলে কংগ্রেস হেরে যায়। ওরা এমনিতেই একটা দুর্বল দল। এখন বিরোধী দলনেতা না থাকায় আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।’’ রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী অনিল ভিজ-ও কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোলমাল নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধী দল আইএনএলডি-ও। দলের নেতা অর্জুন চৌটালা বলেন, ‘‘কংগ্রেসের জন্যই বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছে। হরিয়ানার ইতিহাসে বিরোধী দলনেতার জন্য পাঁচ মাস ধরে অপেক্ষা করতে হয়নি রাজ্যকে!’’
বাজেট অধিবেশন পর্বে বিরোধী দলনেতা ছাড়াই চলার সমস্যা টের পাচ্ছেন কংগ্রেসের বিধায়কেরাও। কিন্তু অপ্রত্যাশিত হারের পরে নতুন করে আর জটিলতা বাড়াতে চাইছেন না তাঁরা। বিধায়ক ভরত ভূষণ বাত্রা বলেছেন, ‘‘হরিয়ানার পরেই মহারাষ্ট্রে ভোট ছিল। সেটা নিয়ে কিছুটা সময় গেছে। তা ছাড়া দল তো তিন জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। তবে এটা ঠিক, বিরোধী দলনেতা ঠিক না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’’ কংগ্রেসের নবনির্বাচিত বিধায়ক তথা পদকজয়ী কুস্তিগির বিনেশ ফোগত বলেন, ‘‘দল যা ঠিক করবে, তা হরিয়ানার মঙ্গলের কথা ভেবেই ঠিক করবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)