নারী দিবসের প্রাক্কালে উপহারের দোকানে উপচে পড়া ভিড়। ৮ মার্চ সকাল থেকে গোলাপ, অর্কিডের চড়া দাম। সবই নারী দিবসকে কেন্দ্র করে। সাধারণ থেকে খ্যাতনামী— আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কমবেশি সকলেই নারীর জয়গান করেন। নারীশক্তির সমর্থনে তুখোড় বক্তব্য রাখেন। বাকি ৩৬৪ দিন কোনও স্বামী তাঁর স্ত্রীকে সমর্থন করলে, ভদ্র ভাবে কথা বললে তাঁর কপালে ‘স্ত্রৈণ’ তকমা জোটে। পাশাপাশি, এই ধরনের মন্তব্য আদতে নারী-পুরুষ সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
সত্যিই কি নারীদের সঙ্গে জোরালো আচরণ না করলে পুরুষালি ভাব প্রকাশ পায় না? একুশের পুরুষ আগের যুগের তুলনায় মানসিক দিক থেকে অনেক উন্নত। তাঁরা কি এই ধরনের নেতিবাচকতাকেও ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন? অথচ কোনও পুত্রসন্তান তাঁর মায়ের বাধ্য হলে এই কথা ওঠে না! কেন?
জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল সুরকার-গায়ক অনুপম রায়ের সঙ্গে। এই ধরনের অশিক্ষিত মানসিকতা আজকের যুগেও বর্তমান, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “কোমলতা বা নম্রতার সঙ্গে নারীকে জুড়ে দেওয়ার মতো চিরাচরিত ভাবনা এ যুগেও রয়ে গিয়েছে। অথচ, এই আমরাই দেবী দুর্গার হাতে ত্রিশূল, দেবী কালিকার হাতে রক্তমাখা খড়্গ দেখে অভ্যস্ত!” ভাবনার এই দ্বিচারিতা অনুপমকেও নাড়া দেয়। তাঁর ধারণা, সমাজ সকলকে একটি পঙ্ক্তিতে ফেলতে পারলেই দারুণ খুশি। কেউ ব্যতিক্রম হলেই নানা কটাক্ষ।
আরও পড়ুন:
গায়ক-সুরকারের এখানেই আপত্তি। বললেন, “আমরা সকলকে খুশি করে চলতে পারি না। এটা সম্ভবও নয়। তাই ভদ্র আচরণও এক সময় ‘মেয়েলি’ আখ্যা পায়। পুরুষের কাছে আবার এই শব্দ প্রচণ্ড অপমানসূচক, গালাগালির সমান।” অধিকাংশ মানুষ জানেন, অনুপম সকলের সঙ্গেই অত্যন্ত ভদ্র আচরণ করেন। নম্র ভাবে কথা বলেন। তিনিও কি তা হলে আগামী দিনে তাঁর আচরণ বদলে ফেলবেন? গায়ক-সুরকারের দাবি, তিনি কোনও দিন তথাকথিত ‘স্টিরিওটাইপ্ড’ হতে পারবেন না। হতে চানও না। যেমন আছেন, তেমনই থাকবেন।
নারী দিবসে তাঁর আক্ষেপ, “প্রত্যেকে যদি প্রতি দিন অন্তত মিনিট পাঁচেক তাঁদের জীবনে নারীর ভূমিকা নিয়ে ভাবেন তা হলেই আর আলাদা করে নারী দিবসের প্রয়োজন পড়ে না।”