মডেলদের একের পর এক রহস্যমৃত্যু প্রসঙ্গে এটাই প্রথম কথা রূপটান শিল্পী হেমা মুন্সীর। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
দুই প্রজন্মের মধ্যে বিস্তর ফারাক। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মডেলদের একের পর এক রহস্যমৃত্যু প্রসঙ্গে এটাই প্রথম কথা রূপটান শিল্পী হেমা মুন্সীর। পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার, মঞ্জুষা নিয়োগীর পরে রবিবার একই ভাবে ঝুলন্ত দেহ মিলেছে সরস্বতী দাসেরও। সরস্বতী পেশায় মডেল এবং রূপটান শিল্পী। হেমা কয়েক দশক ধরে ছোট এবং বড় পর্দার জনপ্রিয় রূপটান শিল্পী। যদিও তিনি তাঁর নাম শোনেননি। তাঁর মতে, ‘‘এখন সবাই মডেল। কলকাতার অলিতেগলিতে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো মডেলিং, অভিনয় শেখানোর স্কুল। সেখান থেকে যাঁরাই পাশ করে বেরোচ্ছেন, তাঁরাই নাকি মডেল-অভিনেত্রী! ইদানীং ইনস্টাগ্রামের রিল ভিডিয়োতে যাঁরা যুক্ত, তাঁরাও নাকি মডেল!’’
পরপর উঠতি মডেলদের আত্মহত্যার ঘটনা বিচলিত করেছে তাঁকে। হেমার দাবি, ‘‘এঁরা নেশার ঘোরে কী যে করে বসছেন! এতে ইন্ডাস্ট্রির বদনাম হচ্ছে।’’ সত্যিই কি অভিনয় বা মডেলিং দুনিয়া এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে? নষ্ট হয়ে গিয়েছে পরিবেশ, পরিস্থিতি? সে কথা সরাসরি না বললেও সুপার মডেল মাধবীলতা, নয়নিকা চট্টোপাধ্যায়দের সময়ের সঙ্গে যে অনেকটাই ফারাক, তা স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন হেমা। বলেছেন, ‘‘মাধবীলতা, নয়নিকারা প্রচণ্ড নিয়ম মেনে চলতেন। নিজেদের যত্ন নিতেন। পেশার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। এই প্রজন্মের মধ্যে সেই মানসিকতা দেখতে পাই না।’’
সম্প্রতি একটি বড় বাজেটের বিজ্ঞাপন-ছবিতে রূপটানের কাজ করেছেন হেমা। বিজ্ঞাপনের মধ্যমণি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে মডেল দুনিয়ার ভাষায় এক ঝাঁক ‘ক্রাউড মডেল’। ‘ভিড়’ বাড়াতে সাধারণত যাঁদের ব্যবহার করা হয়। হেমার কথায়, ‘‘এঁদের দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, এত ভিড়ের মধ্যে ক’জন নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন? বেশির ভাগ একটা, দুটো কাজের পরেই হারিয়ে যান।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ বেশির ভাগেরই কাজে একেবারে মন নেই। হয় হাতের দামি ফোনেই সারা ক্ষণ ব্যস্ত। নয়তো এসেই বলতে থাকেন যাব যাব। ওমুক সময়ে ছেড়ে দিতে হবে। কাজ আছে।’’ রূপটান শিল্পীর কৌতূহল, ‘‘এঁরা কি জৌলুসের লোভে মডেলিংয়ে এসেছেন? মডেলিং এঁদের ধ্যান-জ্ঞান নয়। কথা শুনে মনে হয়, এঁরা একাধিক বিষয়ে যুক্ত।’’
এই প্রজন্মের মডেলদের বিরুদ্ধে হেমার অনুযোগ আরও। তাঁর বক্তব্য, অবসরে এঁদের বেশির ভাগের হাতে সারা ক্ষণ হয় জ্বলন্ত সিগারেট, নয়তো গাঁজা! এ ব্যাপারে তিনি মূলত আঙুল তুলেছেন শহরতলি থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের দিকে। হেমার কথায়, ‘‘শহরে যাঁরা পরিবারের সঙ্গে থাকেন, তাঁরা কিন্তু এত নেশা করেন না। এতটা বিশৃঙ্খলও নন। কারণ, তাঁদের শাসন করার জন্য তাঁদের পরিবার থাকেন। যাঁরা বাইরে থেকে শহরে কাজ করতে আসছেন, তাঁরাই ভেসে যাচ্ছেন। শেষে সব দিক সামলাতে না পেরে ফুরিয়ে যাচ্ছেন।’’
অভিজ্ঞ রূপটান শিল্পী অভিযোগের আঙুল তুলেছেন আর এক বিশেষ শ্রেণির মানুষের দিকে। যাঁরা নাকি স্বপ্ন দেখিয়ে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে আসছেন এই পেশায়। হয়তো কাজও জুটিয়ে দিচ্ছেন। প্রথম প্রথম বেশ কাজ। আস্তে আস্তে তাতে ভাটা। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হতাশ হয়ে পড়ছেন উঠতি ‘ক্রাউড মডেল’রা। তখন কিন্তু তাঁদের সামলাতে সেই স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা আর নেই!
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy