ইন্ডাস্ট্রিই কি তারকাদের বিলাসিতা শেখাচ্ছে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য পড়েছি। ওঁর যুক্তিগুলো একেবারে অগ্রাহ্য করা যায় না। পাশাপাশি এটাও মনে ঠিক, ভেঙে পড়া, বিপর্যস্তের কাছে এই যুক্তি খাটে না। রচনা আসলে খুব দুঃখ, রাগ থেকে কথাগুলো বলে ফেলেছেন। ওঁর আফসোস হয়েছে, কত সম্ভাবনা ছিল ওঁদের মধ্যে। জীবনে আরও কত কিছু করার ছিল। পাওয়ার ছিল। সে সব না দেখেই চলে গেলেন পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার, মঞ্জুষা নিয়োগী! তার পরেও বলব, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার আগের মুহূর্ত বড় ভয়ানক। তখন যুক্তি, বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা কিচ্ছু কাজ করে না।
কোনও ভাবে ওই ব্যক্তি যদি সময়টাকে পেরিয়ে যেতে পারেন তা হলে তিনিই পরে নিজের ভাবনা নিয়ে লজ্জিত হন। তাঁরও মনে হয়, ‘‘এ বাবা! আমি কী করতে যাচ্ছিলাম?’’ এখনকার বড় সমস্যা কী জানেন? আমরা সবাই খুব একা। পুরোটাই সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে। আমাদের সত্যিকারের বন্ধুর সংখ্যা কমে গিয়েছে। আমরা এখন ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাসিন্দা। আমাদের যে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো ছিল সে সব ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। আগে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়ের আনাগোনা লেগেই থাকত। এখন আর কেউ কারওর বাড়ি যান না! বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা নেই। প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরনো বন্ধুত্ব ফিরে এসেছে। ফোন দিয়ে এখন অনেক কাজ করা যায়। কিন্তু এ সবের জন্য আমরা কতটা তৈরি ছিলাম? তথাকথিত শিক্ষিতরাও কি এর যথাযথ ব্যবহার করে উঠতে পারছেন?
এখনকার মানুষজনেরা যেন বড্ড ভোঁতা, অনুভূতিহীন। আমি যে লিখেছি, মৃত্যুর কথা শুনেও ‘হা হা’ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন! সেখানেও কিছু জন ওই হাসির ইমোজিই ব্যবহার করেছেন। ঈশ্বর না করুন, আজ যাঁরা হা হা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তাঁদের বাড়িতে যদি এ রকম কিছু ঘটে? তখনও তাঁরা হা হা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন তো? একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকেও কিছু অংশে দায়ী করব। নাম না করেই বলছি, বিক্রি, পাঠকসংখ্যা বাড়াতে কিছু এমন মুখরোচক খবর তৈরি করা হয় যা মানুষের মনে কিন্তু গভীর ছাপ ফেলে। এই ধরনের খবর পড়তে পড়তেও মানুষের মনুষ্যত্ব যেন কমে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি খবর একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। তাই শুধুই যাঁরা আত্মহত্যা করছেন তাঁদের দায়ী করলে চলবে না। আমাদের সমাজব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। যাঁরা কিছু না জেনে মন্তব্য করেন তাঁরা দায়ী।
নিজের মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে আরও একটি উপলব্ধি হয়েছে। এখন আর আগের মতো কড়া শাসন করলে চলবে না। সময় বদলেছে। শাসনের ধারাও বদলাতে হবে। কখনও কড়া তো কখনও নরম হতে হবে। সবার আগে ছেলে-মেয়ের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। অভিভাবক কোনও ভুল করলে বা সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে তাদের কাছে নত হতে হবে। বলতে হবে এটা আমার ভুল। তবেই সন্তান মা-বাবাকে ভরসা করতে পারবে। বাবা কঠোর হলে মাকে নমনীয় হতে হবে। আমি তো কিছু ভুল করে ফেললে আমার মেয়ে মাইয়্যাকে বলি, তোর হাত ধরেই আমার প্রথম মা হওয়া। তোর সঙ্গেই তাই আমিও বড় হচ্ছি। ভুল তো আমারও হতেই পারে।
আমরা ধাপে ধাপে অভিনয় দুনিয়ায় বড় হয়েছি। ধীরে ধীরে পারিশ্রমিক বেড়েছে। আমরা তাতেই অভ্যস্ত। এখনকার ছেলেমেয়েরা প্রথম ধারাবাহিকেই ৭০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। রাস্তা জুড়ে তাঁদের কাটআউট। বিজ্ঞাপনী প্রচারে রাতারাতি তারকা। যার জৌলুসে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। সে গুলো তো রক্ষা করতে হবে! সেই চাপ কিন্তু প্রবল। ফলে, ওঁরা শুরু থেকেই না চাইতে পেয়ে অভ্যস্ত। এতে কি ওঁরা দায়ী?
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy