কল্কিকে প্রথমে সুযোগ দিতে চাননি অনুরাগ। তাঁর মনে হয়েছিল, ভারতীয় বংশোদ্ভূত না হলে ছবির সঙ্গে মানানসই হবে না। কিন্তু অডিশন টেপ দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন পরিচালক। বক্স অফিস সফল এই ছবিতে কল্কির কাজ প্রশংসিত হয়।
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১২:১৮
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৬
বড় হওয়া আধ্যাত্মিক পরিবেশে। প্রপিতামহ ছিলেন বিশ্ববিখ্য়াত স্থপতি। কিন্তু অধ্য়াত্মবাদ বা স্থাপত্য়বিদ্যা, কোনওটাই তাঁকে আকর্ষণ করেনি। ফরাসি বংশোদ্ভূত কল্কি কেঁকলা পা রাখলেন বলিউডে। নামের পাশে বসল ‘জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী’ পরিচয়।
০২২৬
পুদুচেরিতে ১৯৮৪-র ১০ জানুয়ারি জন্ম কল্কির। শ্রী অরবিন্দের আশ্রম শ্রী অরোভিলের আশ্রমিক ছিলেন তাঁর বাবা জোয়েল কেঁকলা এবং মা ফ্রাঁসোয়া আর্মান্দি। কল্কির প্রপিতামহ মরিস কেঁকলার নাম জড়িয়ে আছে আইফেল টাওয়ার নির্মাণের সঙ্গে।
০৩২৬
কল্কির শৈশবের বড় অংশ কেটেছিল শ্রী অরোভিলে। তার পর তাঁদের নতুন ঠিকানা হয় তামিলনাড়ুতে উটির কাছে কল্লাত্তি গ্রাম। এখানে নতুন ব্যবসা শুরু করেন কল্কির বাবা।
০৪২৬
কেঁকলা পরিবারের এই বাসা ভেঙে গেল কয়েক বছর পরে। কল্কি যখন পনেরো বছরের কিশোরী, তাঁর বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিয়ে করে জোয়েল চলে যান বেঙ্গালুরুতে। কল্কিকে নিয়ে ফ্রাসোঁয়া থেকে যান পুরনো ঠিকানাতেই। আশৈশব মিশ্র সংস্কৃতির পরিবেশের জন্য ইংরেজি, ফরাসির পাশাপাশি কল্কির অনায়াস গতি হিন্দিতেও।
০৫২৬
উটির আবাসিক স্কুলে পড়ার সময় থেকেই কল্কির আগ্রহ জন্মায় লেখালেখি এবং অভিনয়ের প্রতি। তবে ছাত্রী হিসেবে তিনি যে শান্ত এবং লাজুক ছিলেন, সে কথাও জানিয়েছেন তিনি। স্কুলজীবন শেষে কল্কি পাড়ি দিয়েছিলেন লন্ডন।
০৬২৬
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি কল্কি যুক্ত ছিলেন একটি থিয়েটার কোম্পানির সঙ্গেও। অভিনয়ের হাতেখড়িও সেখানে। সপ্তাহান্তে রেস্তরাঁয় ওয়েট্রেস হিসেবেও কাজ করতেন কল্কি।
০৭২৬
কোর্স শেষে ভারতে ফিরে কল্কি প্রথমে বেঙ্গালুরু, তার পর চলে আসেন মুম্বই শহরে। কিছু দিন থিয়েটার দুনিয়ায় কাজ করার পরে কল্কি পা রাখেন সিনেমার জগতে। অডিশন দেন অনুরাগ কশ্যপের ‘দেব ডি’-র জন্য।
০৮২৬
কল্কিকে প্রথমে সুযোগ দিতে চাননি অনুরাগ। তাঁর মনে হয়েছিল, ভারতীয় বংশোদ্ভূত না হলে ছবির সঙ্গে মানানসই হবে না। কিন্তু অডিশন টেপ দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন পরিচালক। বক্স অফিস সফল এই ছবিতে কল্কির কাজ প্রশংসিত হয়।
০৯২৬
এই ছবিটির আগে ‘লগা চুনরি মেঁ দাগ’-এ একটি ক্য়ামিয়ো ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কল্কি। তবে তাঁর পরিচয় তৈরি হয় ‘দেব ডি’ থেকেই। তবে ভাল অভিনয় সত্ত্বেও কল্কির সামনে সুযোগের দরজা খুলে যায়নি। কারণ প্রধান বাধা ছিল তাঁর চেহারা।
১০২৬
চেহারায় পশ্চিমী প্রভাবের জন্য তথাকথিত ভারতীয় নায়িকা হিসেবে সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না কল্কির। পরে তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কোনও কোনও প্রযোজক তাঁকে তাঁর উঁচু দাঁতকেও ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছিলেন!
১১২৬
চেহারা নিয়ে কটাক্ষকে সঙ্গী করেই কল্কি এগোচ্ছিলেন কেরিয়ারে। তাঁকে ‘রুশ যৌনকর্মী’ বলেও কটূক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু কল্কি কোনওভাবেই নিজের চেহারা বা সৌন্দর্য পাল্টাতে রাজি হননি। তাঁর পাখির চোখ ছিল অভিনয়-ই।
১২২৬
‘দেব ডি’ ছবির সময় ক্রমে গাঢ় হয় অনুরাগ-কল্কি সম্পর্ক। তখন অনুরাগ বিবাহিত এবং এক কন্যাসন্তানের বাবা। নিজের ইউনিটের সম্পাদক আরতি বজাজ ছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী। আরতিকে ছেড়ে কল্কির সঙ্গে লিভ ইন শুরু করেন অনুরাগ।
১৩২৬
নিজের চেহারা এবং অনুরাগের সঙ্গে সম্পর্ক, এই দু’টি বিতর্কের মধ্যেই কল্কি ক্রমে নিজের কেরিয়ার সাজিয়ে নিতে থাকেন। ‘দ্যাট গার্ল ইন ইয়েলো বুটস’, ‘শয়তান’, ‘জিন্দগী না মিলেগি দোবারা’, ‘মাই ফ্রেন্ড পিন্টো’, ‘সাংহাই’, ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘হ্য়াপি এন্ডিং’, ‘মার্গারিটা উইথ এ স্ট্র’-সহ বেশ কিছু ছবিতে নিজেকে মেলে ধরেন অভিনেত্রী হিসেবে।
১৪২৬
২০১১ সালে বিয়ে করেন অনুরাগ-কল্কি। দু’জনের পছন্দই ছিল অন্যধারার ছবি। ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁরা ছিলেন পাওয়ার কাপল। কিন্তু দাম্পত্য স্থায়ী হল মাত্র দু’ বছর। ২০১৩ সালে সেপারেশন হয়ে যায় অনুরাগ এবং কল্কির।
১৫২৬
প্রথমে শোনা গিয়েছিল, হুমা কুরেশির সঙ্গে অনুরাগের ঘনিষ্ঠতাই বিচ্ছেদের কারণ। আবার তাঁদের ঘনিষ্ঠরা বলেছিলেন, দু’জনের মানসিকতার মিল ছিল না। অনেকে এও মনে করেন, তাঁর পুরনো বন্ধু, ইংল্য়ান্ডনিবাসী পরিচালক আহমেদ রায়ের সঙ্গে কল্কির নতুন করে সম্পর্কই দূরত্ব বাড়িয়ে দেয় অনুরাগ-কল্কির।
১৬২৬
সেপারেশনের প্রথম পর্বে অনুরাগের বাড়ির কাছাকাছিই থাকতেন কল্কি। হয়তো ভেবেছিলেন একটু সময় দিলে সম্পর্ক আবার নতুন জীবন পাবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায় যখন অনুরাগ জানান, তিনি তাঁর ইউনিটের সহকারী পরিচালক সাব্রিনা খানের সঙ্গে ডেট করছেন। এরপর ২০১৫-এ খাতায়কলমে বিচ্ছেদ হয়ে যায় অনুরাগ-কল্কির।
১৭২৬
ব্যক্তিগত জীবনে ঝড় উঠলেও কল্কির কেরিয়ার তখনও টালমাটাল হয়নি। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্য়ায় দিওয়ানি’-র সাফল্যের পরে কল্কি ভেবেছিলেন এ বার মূলস্রোতের ছবির নায়িকা হওয়ার পথে আর বাধা থাকল না। কিন্তু তাঁর ভাবনার সঙ্গে বাস্তবের ছবির মিল ছিল না।
১৮২৬
অভিনয়ের প্রশংসার পরেও দীর্ঘদিন কর্মহীন ছিলেন কল্কি। তাঁর অভিযোগ, শুধু প্রযোজকের অশালীন প্রস্তাবে রাজি হননি বলে একটি ছবিতে অভিনয়ের কথা চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি বাদ পড়েন।
১৯২৬
হাতে কাজ না থাকলেও ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ঘটনায় কল্কি বরাবরই সক্রিয়। ‘মি টু’ এবং অন্য়ান্য প্রসঙ্গে তিনি মুখ খুলেছেন। বলেছেন, ন’ বছর বয়সে যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। বহু দিন এই দুঃসহ অভিজ্ঞতা কাউকে বলতে পারেননি। পরে বলেছিলেন নিজের প্রমিককে।
২০২৬
বলিউডে পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্য় নিয়েও কল্কি বরাবরই সরব। তাঁর প্রশ্ন, অভিনেতাদের যদি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বাতিলের খাতায় ফেলে না দেওয়া হয়, তবে অভিনেত্রীদের ক্ষেত্রে সেরকম কেন করা হবে?
২১২৬
কেরিয়ারে হাজারো প্রতিবন্ধকতার পরেও কল্কি নিজের অবস্থান থেকে সরেননি। কসমেটিক সার্জারি করে নিজের চেহারা পরিবর্তন করেননি। আঁকড়ে ধরে থেকেছেন নিজের অভিনয় ক্ষমতাকেই। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবি ‘মার্গারিটা উইথ এ স্ট্র’-এর জন্য তিনি সম্মানিত হন জাতীয় পুরস্কারে।
২২২৬
বলিউডে বলিষ্ঠ অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম কল্কি প্রতি ছবিতেই নিজের অভিনয় নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে থাকেন। নিজেকে ভেঙেচুরে তৈরি করে নেন নতুন চরিত্রের জন্য। ‘এ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’, ‘রিবন’, ‘গালি বয়’, ‘ক্য়ান্ডি ফ্লিপ’-এর মতো ছবিতে নিজেকে মেলে ধরেছেন।
২৩২৬
টেলিভিশন এবং ওয়েব সিরিজেও নিজের স্বতন্ত্র অভিনয়ধারা বজায় রেখেছেন কল্কি। কেরিয়ারের মতো ব্যক্তিগত জীবনকেও নিজের শর্তেই কাটাতে পছন্দ করেন কল্কি। অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয় পিয়ানোবাদক হার্সবার্গের সঙ্গে।
২৪২৬
তবে এই সম্পর্ক অনেক দিন গোপন রেখেছিলেন কল্কি। হঠাৎই একদিন জানিয়েছিলেন তাঁর অন্তঃস্বত্ত্বা অবস্থার কথা। সন্তানের বাবা কে, এই প্রশ্নে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হয়েছেন কল্কি। কিন্তু তাতেও ভেঙে পড়েননি।
২৫২৬
চলতি বছরেই মা হয়েছেন কল্কি। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন তাঁর কন্যাসন্তান এবং বয়ফ্রেন্ড হার্সবার্গের ছবিও। মাতৃত্বের নতুন ভূমিকা উপভোগ করছেন কল্কি।
২৬২৬
দু’ বছর আগে সোশ্য়াল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয় হয়েছিল কল্কির হেয়ারকাট। কেন এই নতুন সাজ? প্রশ্ন করেছিলেন অনেকেই। কল্কির সোজাসাপটা উত্তর, ‘হাতে কোনও কাজ নেই। তাই কাটিয়ে ফেললাম চুল। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল এরকম হেয়ারকাট। এ বার সেই ইচ্ছেও পূরণ হয়ে গেল।’