All need to know about current situation of China Economy and current fall in real estate business dgtl
China Economy
ধুঁকছে চিনের নির্মাণশিল্প! ‘অবিশ্বাস্য’ জিডিপিতেও ঢাকা যাচ্ছে না বেহাল দশা
এমন অনেক নতুন শহর চিনে রয়েছে যেখানে একটিও ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি। ইট, কাঠ, পাথরে ভর্তি নির্মাণস্থল হয়েই রয়ে গিয়েছে শহরগুলি। সে রকমই এক শহরে গম-রসুনের বিনিময়ে ফ্ল্যাট কেনার বিজ্ঞাপনগুলি পড়েছে বলে খবর।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৯
চিনের অর্থনীতি ১৮.২৭ লক্ষ কোটি ডলারের। ২০২৪ সালের হিসাবে যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম। প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা। তবে কোভিডের পর থেকে খানিকটা হলেও ধুঁকছে চিনা অর্থনীতি। সেই পরিস্থিতি নাকি সম্প্রতি আরও প্রকট হয়েছে।
০২১৯
চিনের বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। সেই বিজ্ঞাপনী পোস্টারগুলিতে, ফ্ল্যাট কেনার জন্য প্রাথমিক ভাবে টাকার বদলে গম এবং রসুন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, টাকার বদলে গম-রসুন দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার প্রস্তাব দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
০৩১৯
বেজিংকে ‘আরাম’ দিতে বিগত কয়েক বছরে দেশে নতুন বেশ কয়েকটি শহর বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছিল চিনের শি জিংপিং সরকার।
০৪১৯
বেশ কয়েকটি ‘স্বপ্ননগরী’ তৈরিও হয়ে গিয়েছে। তবে তৈরির পরেও সেই শহরগুলি জনমানবহীন। আর এ রকম শহরের সংখ্যা নাকি একটি-দু’টি নয়, গোটা পঞ্চাশেক।
০৫১৯
এমনও অনেক নতুন শহর চিনে রয়েছে যেখানে একটিও ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি। ইট, কাঠ, পাথরে ভর্তি নির্মাণস্থল হয়েই রয়ে গিয়েছে শহরগুলি। সে রকমই এক শহরে ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য ওই বিজ্ঞাপনগুলি পড়েছে বলে খবর।
০৬১৯
রিয়্যাল এস্টেট বা নির্মাণশিল্প চিনের অর্থনীতির বড় ভিত্তি। চিনের অর্থনীতির প্রায় ২২ থেকে ৩১ শতাংশ আয় ওই ক্ষেত্র থেকেই হয়। কিন্তু ওই বিজ্ঞাপনগুলির ছবি প্রকাশ্যে আসার পর চিনের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
০৭১৯
মূলত, কোভিড অতিমারির পর থেকেই চিনের অর্থনীতিতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। নির্মাণশিল্প ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার প্রভাব দেখা গিয়েছে।
০৮১৯
চিনের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অন্যতম কারণ মুদ্রাসঙ্কোচন। যে কোনও দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাপেক্ষে দেশটির নিজস্ব মুদ্রার মানের উপর। মুদ্রাস্ফীতির অর্থ টাকার দাম পড়ে যাওয়া। আর তার ফলে হু হু করে বৃদ্ধি পায় জিনিসপত্রের দাম।
০৯১৯
কোনও দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক এই মুদ্রাস্ফীতি। এর ফলে সাধারণ মানুষের রোজগার নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম চলে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
১০১৯
কিন্তু চিনে সাম্প্রতিক সময়ে মুদ্রাস্ফীতি নয়, মুদ্রাসঙ্কোচন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনা ইউয়ানের দাম আচমকাই বেড়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, দেশটিতে টাকার দাম প্রয়োজনের অধিক বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির পরিবর্তে ধীরে ধীরে সেখানে জিনিসপত্রের দাম কমছে।
১১১৯
আর সেই কারণে খুব কম দামে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে চিনে। তবুও সেই সব ফ্ল্যাটের চাহিদা তৈরি হচ্ছে না বাজারে। অথচ, অতীতে চিনের তর তর করে উন্নতি হয়েছে এই রিয়্যাল এস্টেটের হাত ধরেই। কিন্তু সেই শিল্পই এ বার মন্দার মুখে।
১২১৯
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের অর্থনীতি এতটা শ্লথ হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ, সে দেশের উপর থেকে বিনিয়োগকারীদের ভরসা হারানো। অনেক বড় বড় সংস্থাই সে দেশ থেকে নিজেদের ব্যবসা গোটাতে শুরু করেছে।
১৩১৯
বিশেষজ্ঞদের দাবি, চিনের এই পরিস্থিতিতে সেখানকার সংস্থাগুলিও দেশ ছাড়তে চাইছে। বাইরের দেশে ব্যবসা করা অধিক লাভজনক বলে ধারণা তৈরি হয়েছে চিনা বণিকদের মধ্যে। আর তার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতেও।
১৪১৯
তবে অনেকেরই মনে হতে পারে চিনা অর্থনীতি যে কমছে, তা তো জিডিপি দেখে বোঝা যাচ্ছে না! তা নিয়েও যুক্তি রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের কাছে।
১৫১৯
অতীতে বার বার চিনের জিডিপি নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, চিনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হিসাব অন্য দেশের হিসাবের মতো নয়, আলাদা। সেই হিসাবে চিনের আয় সব সময় বেশি থাকে। ফলে জিডিপিও উপরের দিকে থাকে।
১৬১৯
সম্প্রতি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চিনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াংয়ের। প্রায় ১০ বছর ধরে চিনের প্রধানমন্ত্রীর পদ সামলেছেন খ্যছিয়াং। তিনি ছিলেন চিনের সপ্তম ‘প্রিমিয়ার’। তাঁর সঙ্গে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বিবাদ এক সময় সর্বজনবিদিত ছিল।
১৭১৯
উইকিলিক্সের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, খ্যছিয়াংই ২০০৭ সালে আমেরিকার তৎকালীন রাষ্ট্রদূতকে বলেছিলেন যে, চিনের জিডিপি পরিসংখ্যান ‘মানবসৃষ্ট’ এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’। বিষয়টি নিয়ে প্রভূত বিতর্কও তৈরি হয়েছিল সেই সময়।
১৮১৯
অর্থনৈতিক মন্দার মুখেও চিনের স্থিতিশীল জিডিপি সেই বিতর্ককেই উস্কে দিয়েছে। তার মধ্যেই চিনের বিভিন্ন মহল থেকে আড়ালে অভিযোগ উঠছে যে, অর্থনীতি সম্পর্কিত অনেক তথ্যই আড়াল করে যাচ্ছে বেজিং। কিছুতেই প্রকাশ্যে আনছে না।
১৯১৯
জিনপিং ক্ষমতায় আসার আগে যাঁরা চিনকে দেখেছেন, সেই নাগরিকেরাও বর্তমানের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে অত্যন্ত হতাশ। সরকারকে একেবারেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পারছেন না তাঁরা।