গত শতাব্দীতে তালিবানের জন্মের নেপথ্যে প্রত্যক্ষ মদত ছিল ইসলামাবাদের। পাক ফৌজ এবং সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের থেকে প্রশিক্ষণ এবং হাতিয়ার পায় আফগানিস্তানের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী। কিন্তু সময়ের ফেরে কেন সেই জন্মদাতাকেই ‘খুন’ করতে চাইছে তালিবান? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের পর আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা দফতরের মুখপাত্রের দেওয়া বিবৃতিতে।
কী বলেছেন কাবুল সরকারের মুখপাত্র? পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ডুরান্ড লাইনকে কাল্পনিক রেখা বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাশাপাশি, পাক প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার উপর ইসলামাবাদের অধিকার অস্বীকার করেছে তালিবান। অর্থাৎ বকলমে ওই প্রদেশকে স্বাধীন দেশ বা আফগানিস্তানে মিশিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন হিন্দুকুশের কোলের দেশটির বর্তমান শাসকগোষ্ঠী।
১৯ শতকে দ্রুত গতিতে মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু করে জ়ার (রাজা বা সম্রাট) শাসিত রাশিয়া। তত দিনে ব্রিটেনের হাতের মুঠোয় চলে গিয়েছে গোটা ভারত। এ দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে সরাসরি শাসন শুরু করেছে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট। কাস্পিয়ান সাগরের তীর ধরে মস্কো পায়ে পায়ে ভারতের দিকে এগিয়ে আসতে থাকায় প্রমাদ গোনেন তাঁরা।
১৮৭৮ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধের পর এলাকা দখলের আশা ছেড়ে দিয়ে সীমানা নির্ধারণে জোর দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। কাবুলে যান মর্টিমার ডুরান্ড। পরবর্তী কালে ইংরেজ সৈন্যদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ডুরান্ড লাইন তৈরি করেন তিনি। এই সীমান্তরেখাটির দু’পারেই রয়েছে পাশতুন জনজাতির বাস। আফগানিস্তানে এই জাতিগোষ্ঠীর রয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্ম হলে ডুরান্ড লাইনকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বলে মেনে নেয় ইসলামাবাদ। ওই রেখা বরাবর কিছু জায়গায় বসে কাঁটাতারের বেড়া। ফলে বিপাকে পড়েন পাশতুনরা। আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হতে শুরু করে তাঁদের। এই বিষয়টি একেবারেই মেনে নিতে পারেনি কাবুল। ফলে সীমান্তকে নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেড়ে চলে সংঘাত।
কিন্তু ২০০১ সালে নেটোর যৌথবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা হিন্দুকুশে ঘেরা দেশটিকে আক্রমণ করলে অবস্থান বদল করে পাকিস্তান। তালিবানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে খোলাখুলি ভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করতে শুরু করে ইসলামাবাদ। আইএসআইয়ের থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী খুঁজে খুঁজে তালিবানের শীর্ষনেতাদের নিকেশ করতে থাকে ওয়াশিংটন।
এই ভাবে আমেরিকানদের হাতে আফগানদের মরতে দেখে হাতে অস্ত্র তুলে নেন স্বাধীনচেতা পাশতুনেরা। ২০০৭ সালে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান নামে জন্ম হয় একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর। প্রাথমিক ভাবে তাদের লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তানের তালিবানকে যুদ্ধে সাহায্য করা। সর্বাত্মক জেহাদের প্রবল সমর্থক হিসাবে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেছে এই সন্ত্রাসী সংগঠন।
ওই ঘটনার পরই সীমান্তে ১৫ হাজার যোদ্ধা পাঠায় তালিবান। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে টিটিপির জঙ্গিরা। সূত্রের খবর, সীমান্তের পাক পোস্ট দখল করেছে তারা। এদের হামলায় প্রাণ গিয়েছে ১৯ জন পাকিস্তানি সৈনিকের। সমাজমাধ্যমে পাক পোস্ট দখলের ছবি প্রকাশ করেছে টিটিপি। অন্য দিকে ইসলামাবাদের দাবি, আগেই ওই পোস্ট খালি করা হয়েছিল।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওয়াজিরিস্তানকে টিটিপির গড় বলা হয়। বর্তমানে সেখানে একরকম স্বাধীন সরকার তৈরি করে ফেলেছে এই জঙ্গি গোষ্ঠী। রয়েছে মন্ত্রীমণ্ডলী, চলছে শরিয়া আদালত। এই সংগঠন এবং আফগানিস্তানের তালিবান কাশ্মীরকে ভারতেরই অংশ বলে মনে করে। ফলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁরা একরকম যুদ্ধ শুরু করায় আপাতদৃষ্টিতে তাতে ভারতের লাভ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও তালিবান বা টিটিপির উপর কতটা ভরসা করা যাবে, তা কোটি টাকার প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy