Elon Musk reignited his rivalry with Microsoft co-founder saying Bill Gates will go bankrupt dgtl
Elon Musk vs Bill Gates
‘ভিখারি হবেন গেটস’! এ বার মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামছেন ইলন মাস্ক?
বিল গেটসকে নিয়ে এ বার বড় মন্তব্য করলেন আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্য হতে চলা ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্ক। আগামী দিনে মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দেউলিয়া হয়ে যাবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন তিনি।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:০২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এ যেন রাজনীতির ময়দানে ‘তু তু ম্যাঁয় ম্যাঁয়’ লড়াই! শিল্পপতিদের মধ্যে এই ছবি একেবারেই বিরল। উল্টে বণিকসভার অনুষ্ঠানে একে অপরকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়াই দস্তুর। সেই প্রথায় এ বার ছেদ টানলেন আমেরিকার ধনকুবের শিল্পপতি। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী টেক জায়ান্ট সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে কথার কাঁটায় রক্তাক্ত করেছেন তিনি। আর সেই ঘটনায় যথারীতি খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন দু’জন।
০২১৮
প্রথম জন ইলন মাস্ক। বর্ষশেষে সরাসরি বিল গেট্সকে নিশানা করেছেন তিনি। ব্যাটারিচালিত গাড়ি টেসলা-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক মাস্কের দাবি, কিছু দিনের মধ্যেই দেউলিয়া অবস্থা হবে টেক জায়ান্ট সংস্থা মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেট্সের। নিজেরই সমাজমাধ্যম সংস্থা এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এই সংক্রান্ত একটি পোস্টও করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের।
০৩১৮
এক্স হ্যান্ডলে মাস্ক লিখেছেন, ‘‘টেসলা যদি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থা হয়ে ওঠে, তা হলে অনেকেরই কপাল পুড়বে। এটা বিল গেট্সকেও দেউলিয়া করে দেবে।’’ উল্লেখ্য, ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা ১৬ বছর বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় প্রথম স্থানে ছিলেন মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
০৪১৮
আমেরিকার ফোর্বস ম্যাগাজ়িনে প্রকাশিত ধনকুবেরদের তালিকায় মোটামুটি ভাবে প্রথম দশেই থাকেন গেট্স। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় প্রথম স্থান দখলে ছিল তাঁর। মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা একাধিক মাধ্যম থেকে সম্পদ অর্জন করেন বলে জানা গিয়েছে।
০৫১৮
তথ্য বলছে, বাজারগত পুঁজির নিরিখে মাস্কের সংস্থা টেসলার থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে অ্যাপ্ল। আইফোন নির্মাণকারী সংস্থাটির জায়গায় পৌঁছতে হলে টেসলার অন্তত ২০০ শতাংশ উত্থানের প্রয়োজন রয়েছে। তবেই দুনিয়ার সর্বাধিক মূল্যবান সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে মাস্কের সংস্থা।
০৬১৮
চলতি বছরের নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভোটে খোলাখুলি ভাবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করেন টেসলা কর্ণধার। বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতার প্রচারে জলের মতো ডলার খরচ করেছেন তিনি। নির্বাচনে ট্রাম্প জেতায় ভাগ্য যে কিছুটা মাস্কের সুপ্রসন্ন হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। গত দু’মাসে হু হু করে বেড়েছে তাঁর সমস্ত সংস্থার স্টকের সূচক। পাশাপাশি, এক্স হ্যান্ডলের মালিককে কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্য করার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
০৭১৮
সূত্রের খবর, মাস্কের ভবিষ্যদ্বাণীর পর বিল গেট্সের লোকসান হয়েছে ১৫০ কোটি ডলার। ‘শর্ট পজ়িশনে’ টেসলার শেয়ার কিনেছিলেন তিনি। ওই স্টকের দাম চড়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে গেট্সকে। বর্তমানে টেসলার শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এই লোকসানের অঙ্ক আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। যদিও এই আর্থিক ক্ষতি নিয়ে গেট্স বা তাঁর সংস্থার তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
০৮১৮
শেয়ারে লগ্নিকারীদের একাংশ ‘শর্ট পজ়িশনে’ বিনিয়োগ করতে ভালবাসেন। বিনিয়োগকারীরা অনেক সময়ে নিজের শেয়ারের স্টক ধার নিয়ে তা খোলা বাজারে বিক্রি করে দেন। পরবর্তী কালে ওই শেয়ারের দাম কমে গেলে ফের তা কিনে নিয়ে পকেট ভরান। অর্থনীতির পরিভাষায় একেই বলে স্টকের ‘শর্ট পজ়িশন’। এ ক্ষেত্রে শেয়ারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে।
০৯১৮
এই ‘শর্ট পজ়িশন’কে ঘিরে মাস্ক এবং বিলের মধ্যে সংঘাত চরম আকার নিয়েছে। ২০২২ সালে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে গেট্স জানান, টেসলার স্টকের উপর ‘শর্ট পজ়িশনে’ বাজি ধরেছেন তিনি। মাস্কের জীবনীকার ওয়াল্টার আইজ্যাকসনের দাবি, ‘‘বিষয়টি কানে যেতেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন টেসলা কর্তা। গত বছর (পড়ুন ২০২৩) থেকেই ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থার স্টকের দর বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।’’
১০১৮
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার সূত্রে খবর, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ইস্তক টেসলার স্টক ঊর্ধ্বমুখী। মাস্কের সংস্থার শেয়ারের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠে ৪০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিলকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি নেটাগরিকদের একাংশ।
১১১৮
গত ১০ ডিসেম্বর ‘টেসলাকোনমিক্স’ নামের একটি এক্স হ্যান্ডলের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা হয় মাস্কের পুরনো পোস্ট। সেখানে বিল গেট্সকে আমেরিকার ধনকুবের শিল্পপতি ‘ভণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, মাইক্রোসফ্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টেসলার লালবাতি জ্বলার আশায় দিন গুনছেন বলেও অভিযোগ করেন মাস্ক।
১২১৮
মাস্কের দাবি, টেসলা বন্ধ হলে ‘শর্ট পজ়িশন’ থেকে ৫০ কোটি ডলার লাভ করার পরিকল্পনা ছিল গেট্সের। আর এর জন্য চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি তিনি। আত্মসচেতনতার অভাবের কারণেই বিল ডুববেন বলে সমাজমাধ্যমের পোস্টে স্পষ্ট করেছেন টেসলা কর্তা।
১৩১৮
তবে মাস্কের ওই যুক্তি মানতে নারাজ আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশ। তাঁদের দাবি, টেসলার স্টকের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় সাময়িক ভাবে বিল গেট্সের লোকসান হয়েছে, এটা সত্যি। কিন্তু, তার অর্থ এই নয় যে তিনি দেউলিয়া হতে বসেছেন। এর সপক্ষে একাধিক যুক্তির কথা বলেছেন তাঁরা।
১৪১৮
প্রথমত, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থা অ্যাপ্লের বাজারি মূলধনের পরিমাণ ৩.৭৭ লক্ষ কোটি ডলার। সেখানে টেসলা দাঁড়িয়ে রয়েছে ১.৩৫ লক্ষ কোটিতে। বাজারি মূলধনের নিরিখে দু’টি সংস্থার মধ্যে ২.৪১ লক্ষ কোটি ডলার। ফলে রাতারাতি অ্যাপ্লকে সরিয়ে টেসলার প্রথম স্থানে যাওয়া বেশ কষ্টকল্পিত।
১৫১৮
দ্বিতীয়ত, গেট্স শুধুমাত্র টেসলার শেয়ারের ‘শর্ট পজ়িশনে’ বাজি রেখেছেন এমনটা নয়, আরও একাধিক জায়গায় বিনিয়োগ রয়েছে তাঁর। বিলের নিজের সংস্থা মাইক্রোসফ্ট একটি বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থা। তথ্যপ্রযুক্তির দুনিয়াতেও নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। ফলে মাইক্রোসফ্টের স্টক থেকে তিনি আর লাভবান হবেন না, এই চিন্তা হাস্যকর।
১৬১৮
তৃতীয়ত, বর্তমানে টেসলার শেয়ারের দাম চড়েছে এটা সত্যি। কিন্তু ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব অন্য কোনও জ্বালানির গাড়ি বাজারে এলে পড়তে পারে এর স্টকের দর। সে ক্ষেত্রে ফের লাভবান হবেন গেট্স। টেসলার গাড়ি বিক্রির পরিমাণ কমলেও লোকসানের মুখ দেখবেন মাস্ক।
১৭১৮
চতুর্থত, আগামী বছর (পড়ুন ২০২৫) দুই জাপানি গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা নিসান ও হোন্ডার সংযুক্তিকরণের সম্ভাবনা রয়েছে। তখন ব্যাটারিচালিত চার চাকার বাজারে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে টেসলাকে। এর প্রভাব মাস্কের সংস্থার শেয়ারের দরেও দেখা যাবে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।
১৮১৮
আর সবশেষে চরম বিপাকে পড়লেও বিল গেট্সের দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, তখন প্রয়োজনে নিজের সংস্থা মাইক্রোসফ্ট বিক্রি করতে পারবেন এই আমেরিকার ধনকুবের। মাস্ক ‘গায়ের ঝাল’ মেটাতে ওই তত্ত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেননি বিল গেট্স।