Advertisement
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
Christmas Release 2024

অভিনয় নিয়ে ঘোর আপত্তি ছিল, ‘চালচিত্র’ দেখে বাবা ফোন করলে বুঝব, অনেকটা পেলাম

‘চালচিত্র’ দেখে এক খ্যাতনামী অভিনেত্রী জানিয়েছেন, ‘পারমিতার একদিন’-এর সোহিনী সেনগুপ্তকে মনে পড়িয়ে দিয়েছেন তানিকা!

‘চালচিত্র’ ছবির ‘পুতুল’ তানিকা বসু।

‘চালচিত্র’ ছবির ‘পুতুল’ তানিকা বসু। ছবি: সংগৃহীত।

উপালি মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২০:৩০
Share: Save:

‘পুতুল’ খেলার দিন অনেক দিন ফুরিয়েছে। তবু সেই ‘পুতুল’ই তাঁকে বছরের শেষে খ্যাতি এনে দিল। তানিকা ‘পুতুল’ বসু। অডিশনে পাশ করার পর দর্শক-সমালোচকদের মাপকাঠিতেও উত্তীর্ণ। ‘চালচিত্র’ অভিনেত্রীর জীবনে ‘সান্তাক্লজ়’ হয়ে এসে আর কী কী দিল? একান্ত আড্ডায় জানার চেষ্টায় আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: ‘পুতুল’ না তানিকা বসু, কার সঙ্গে কথা বলছি?

তানিকা: (ফোনেই জোরে হাসি), এই মুহূর্তে তানিকার সঙ্গে।

প্রশ্ন: ‘চালচিত্র’ ছবি আর তার অন্যতম চরিত্র ‘পুতুল’, দু’জনেই তো হিট?

তানিকা: খুব প্রশংসা পেয়েছি। বর্ষীয়ানরা এসে গাল ধরে আদর করছেন, গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এত সাড়া পাব, ভাবতে পারিনি।

প্রশ্ন: প্রচুর প্রস্ততি নিয়েছিলেন?

তানিকা: প্রচুর প্রশিক্ষণ নিইনি। আমি অভিনেত্রী দামিনী বেণী বসুর ছাত্রী। সারা বছরই প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকি। অভিনয় করতে গিয়ে বুঝলাম, চরিত্রটি প্রবল ভাবে ‘ফিজ়িক্যালি চ্যালেঞ্জড’। চোখ, মুখের ভঙ্গি, হুইলচেয়ারে বসে হাত-পা নাড়িয়ে অভিনয়— খুব শক্ত। জানেন, ওই চেয়ারে বসে অভিনয় করতে করতে হাতে কালশিটে পড়ে গিয়েছিল! সমানে হাত নেড়ে অভিনয় করতাম। চেয়ারের ধারে হাতগুলো লাগত। তবে হাতে কালশিটে পড়লেও এই চরিত্রে অভিনয় সত্যিই খুব ভাল অভিজ্ঞতা। খুব মজা পেয়েছি করে। বাংলায় এই ধরনের চরিত্র চট করে কোথায় পাওয়া যায়?

প্রশ্ন: ‘পুতুল’ চরিত্রের জন্য অনেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন?

তানিকা: আমি যে দিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছি, সে দিন শ্রেয়া ভট্টাচার্যও ছিলেন। আমরাই সম্ভবত সবশেষে পরীক্ষা দিয়েছি। শুনেছি, আরও অনেক সমসাময়িক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্তদা এটা সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন।

প্রশ্ন: তাঁদের টপকে আপনি নির্বাচিত হলেন...

তানিকা: শুনেছি, ওঁদের পরীক্ষাও খুবই ভাল হয়েছে। আমার দিক থেকে বাড়তি দেওয়া যেটা ছিল, সেটা টেকনিক্যাল দিক থেকে অভিনয়। মানে, আমায় ডাকার পর প্রতিমদার কাছ থেকে কোন ধাপের সেরিব্রাল পলসিতে ‘পুতুল’ আক্রান্ত, জেনে নিয়েছিলাম। ফোর্থ স্টেজ শুনে ওই রোগীদের কথা গুগল করে পড়ে নিয়েছিলাম। বেশ কিছু ভিডিয়ো দেখেছিলাম। আর একটি জিনিসও করেছিলাম...

প্রশ্ন: কী সেটা?

তানিকা: অডিশন দেওয়ার আগে শুনেছিলাম, কারা ছবিতে অভিনয় করছেন। নামগুলো শোনার পর ডাক পাওয়ার আশাই রাখিনি! বরং জানতাম, পারব না। ফলে, পরীক্ষাকে নিজেকে তৈরি করার একটি ধাপ হিসেবে ধরেছিলাম। মন খুলে তাই অভিনয় করতে পেরেছিলাম। কোনও চাপ ছিল না আমার।

প্রশ্ন: ডাক পাওয়ার পরে আনন্দে মেঘমুলুকে?

তানিকা: প্রথমে মনে হল, যাক! তা হলে ঠিক পথেই হাঁটছি। তার পরেই ভয়। গুরুদায়িত্ব এসে পড়ল কাঁধে। তাবড় অভিনেতাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করতে হবে। পর্দায় একটি বিশেষ ধরনের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করব। সামান্যতম ভুলচুকও তাই কাম্য নয়। হলে প্রচণ্ড কটাক্ষের শিকার হব। শেষে প্রতিমদাকেই ধরে বলেছিলাম, ও দাদা! পারব তো?

প্রশ্ন: পর্দায় আপনি অনির্বাণ চক্রবর্তীর মেয়ে...

তানিকা: সেটাই তো! আমার খুবই প্রিয় অভিনেতা। তাই ভয়ে ছিলাম, ছড়িয়ে না ফেলি! তার উপরে আমার ছেলেবেলার ‘ক্রাশ’ টোটা রায়চৌধুরী। ওঁর সঙ্গে যদিও বেশি দৃশ্য নেই। শারীরিক-মানসিক দিক থেকে নিখুঁত থেকে চরিত্রকে জীবন্ত করা, ওঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয়— সহজ কথা?

প্রশ্ন: পর্দার বাবা খুন হওয়ার খবর জানার পর কান্নার দৃশ্যে ‘পুতুল’কে গ্লিসারিন নিতে হয়েছিল?

তানিকা: (হেসে ফেলে) আমার চোখে সংক্রমণের সমস্যা রয়েছে। রাসায়নিক কোনও কিছুই ব্যবহার করতে পারি না। কোনও আই ড্রপও ব্যবহার করতে পারি না। আর আমি খুবই ছিঁচকাদুনি। চট করে কাঁদতে পারি। তার পরেও কখনও চোখে জল না এলে পরিচালকের থেকে একটু সময় চেয়ে নিই। দৃশ্যের গভীরে ঢুকতে পারলেই কান্না এসে যায়।

প্রশ্ন: ও ভাবে মুখভঙ্গি করে অভিনয় করতে করতে চোয়ালে ব্যথা হয়নি?

তানিকা: চোখে ব্যথা হত খুব। এক দিন বেণীকে ফোন করে বলেছিলাম। আমি এই ধরনের চরিত্র পাওয়ায় বেণী অবশ্য খুব খুশি। সে সব অবশ্য পরে চাপা পড়ে গিয়েছে। আমার চরিত্র, আমার সাজ— অনেকটাই সাহায্য করেছিল। অনিরুদ্ধ চাকলাদারদার রূপসজ্জা আর হেনা মুন্সিদির কেশসজ্জা, দুর্দান্ত। হেনাদি ওই যে দু’দিকে দুটো ঝুঁটি করে দিয়েছিলেন, দারুণ। মনে আছে, লুক সেটের দিন ওই সাজ দেখে প্রতিমদা খুব খুশি। বলেছিলেন, “বেশ মিকি মাউসের মতো লাগছে। পর্দায় ভাল লাগবে।” এই সমস্ত আমায় সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছিল।

প্রশ্ন: এত দিন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন চরিত্র মানেই অপরাজিতা আঢ্য অভিনীত ‘পারি’। অন্যান্য অভিনেত্রীও ওঁর অভিনয় নিজেদের মতো করে করার চেষ্টা করেন। আপনার ‘পুতুল’ কি সেই মিথ ভাঙল?

তানিকা: (স্বীকার করে নিয়ে), না, অপাদির সঙ্গে তুলনা কেউ করেননি। একজন খ্যাতনামী জানিয়েছেন, আমাকে দেখে ওঁর ‘পারমিতার একদিন’-এর সোহিনী সেনগুপ্তের কথা মনে পড়েছে! শুনে আপ্লুত। যদিও আমি মানতে পারিনি। সোহিনীদির সঙ্গে তুলনা করার মতো অভিনয় আমি করতেই পারি না! তবে, গত ১১ দিন ধরে যে পরিমাণে ভালবাসা পাচ্ছি, এক এক সময় বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। দর্শকেরা আমায় ছুঁয়ে দেখছেন। তাঁরা ভেবেছিলেন, বুঝি এই রোগে আক্রান্ত কেউ অভিনয় করেছেন। আমি যে সুস্থ, সেটা বিশ্বাস করতে তাঁদের কষ্ট হয়েছে।

‘চালচিত্র’ ছবিতে তানিকা আর অনির্বাণ চক্রবর্তী।

‘চালচিত্র’ ছবিতে তানিকা আর অনির্বাণ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এই ধরনের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে ফেলাটাও তো বিপদ! আগামী দিনে কেবল এই ধারার চরিত্রই এক সময় আসতে থাকে... নায়িকা হয়ে ওঠা আর হয় না।

তানিকা: কোনও অভিনেতা যদি সত্যিই অভিনয় ভালবাসেন, তাঁরা কিন্তু এই চরিত্রের জন্য হাপিত্যেশ করে অপেক্ষা করেন। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করা তাঁদের কাছে সম্মানের। একটা উদাহরণ দিই। একটি নাটকে আমি এক ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ ব্যক্তির চরিত্রে। তা হলে তো ধারাবাহিক ভাবে আমার সেই চরিত্রই পাওয়ার কথা। আপনার আশঙ্কা অস্বীকার করছি না। কিন্তু ভাল অভিনেতা সেই ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন না। বরং, অভিনয়ের আগে ভয় পান, সঠিক ভাবে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারবেন তো? তা ছাড়া, আমি তো নায়িকাসুলভ চরিত্র পাই না! বরং নায়ক বা নায়িকার বোনের চরিত্রেই বেশি অভিনয় করেছি। একটা সময় ওই চরিত্রে টাইপকাস্ট হয়ে যাচ্ছিলাম। যা একেবারেই কাম্য নয়। সেই দিক থেকে এই ধারার চরিত্রে অভিনয় অনেক বেশি সৌভাগ্যের। অন্তত আমি তা-ই মনে করি। এখানে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন: আপনার ‘ক্রাশ’ টোটা রায়চৌধুরীকে নিয়ে কিছু বলবেন?

তানিকা: ঠিক ‘ক্রাশ’ নন! ওঁর অভিনয় ভীষণ ভাল লাগে। আমার মা-ও ওঁর অন্ধ ভক্ত। ‘চোখের বালি’, ‘শ্রীময়ী’ দেখেছেন গোগ্রাসে। ফলে, আমিও ওঁর কাজ ছোট থেকে দেখেছি। টোটাদা, যিশু সেনগুপ্তদাকে দেখে মনে হত, ওঁরা এত ভাল অভিনেতা। কেন এত কম কাজ করেন? সেই পছন্দের অভিনেতার সঙ্গে কাজ। বুঝতেই পারছেন, স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

প্রশ্ন: শান্তনু মাহেশ্বরী, ‘গঙ্গুবাঈ কাথিয়াবাড়ি’তে আলিয়া ভট্টের প্রেমিক?

তানিকা: শান্তনুকে কার ভাল লাগে না বলুন তো? বলেই লাজুক হাসি। প্রত্যেকটা চরিত্রে অসাধারণ। তার পরেও মাটির কাছাকাছি। প্রথম বাংলা ছবিতেও দুরন্ত। আফসোস, শান্তনুর সঙ্গে কোনও দৃশ্যই ছিল না! টোটাদা, রাইমা সেন আর অনির্বাণদা ছাড়া বাকি কারও সঙ্গে আমার পর্দাভাগের সুযোগ ছিল না।

প্রশ্ন: দুঃখ কিসের, সিক্যুয়েল আসছে তো...

তানিকা: সেটাই আশার কথা! ভগবানের কাছে খুব প্রার্থনা করছি। আশাও করছি, প্রতিমদা আমায় হয়তো বাদ দেবে না। সিক্যুয়েল, প্রিক্যুয়েল— দুই পর্বই দেখানো হবে। একটি ভাগে নিশ্চয়ই থাকব। অন্তত গল্প যে ভাবে শেষ হয়েছে।

প্রশ্ন: এই ছবির পর আর ক’টা ছবিতে ডাক পেলেন?

তানিকা: আপাতত সকলের প্রশংসা কুড়োচ্ছি। ছবি দেখে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় দুর্দান্ত একটা কথা বলেছেন, “তুই একটা আলমারি কেন। পুরস্কার রাখার জায়গা পাবি না!” শুনে কান-মন দুটোই ভরে গিয়েছে।

প্রশ্ন: মা-বাবা কী বলছেন?

তানিকা: (একটু থেমে) আমার মা-বাবা বিচ্ছিন্ন। মা খুবই গর্বিত। সকলে প্রশংসা করছেন। মায়ের চোখের কোণ চিকচিক করে উঠেছে। বাবার সঙ্গে সে ভাবে যোগাযোগ নেই। তা ছাড়া, অভিনয়ে আসা নিয়ে বাবার ঘোর আপত্তি ছিল। আসলে, বাবার দিকের সকলে পড়াশোনায় খুব ভাল। আমিও পড়াশোনায় খুবই ভাল ফল করে অভিনয় করব জানানোয় খুব বকাবকি করেছিল। যাই হোক, কাগজে আমায় নিয়ে লেখালিখি হচ্ছে। দর্শকের প্রশংসাও সমাজমাধ্যমের মারফত ছড়িয়ে যাচ্ছে। সে সব দেখে বাবা যদি ছবি দেখে, দেখার পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে— সেটাই হবে সব থেকে বড় পাওনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Chaalchitra movie Tanika Basu Pratim D Gupta Firdausul Hasan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy