Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bidipta Chakraborty

Bidipta Chakraborty: না, বোন সুদীপ্তার সঙ্গে আমার কোনও রেষারেষি নেই, কেন যে লোকে এটা ভেবে নেয়: বিদীপ্তা

"আমি তো অভিনেত্রী। অভিনয় করতে আমি ভালবাসি। নানা রকমের, বিভিন্ন মেজাজের চরিত্রে আমার কাজ করতে ভাল লাগে। বউমা, দিদি, বন্ধু, প্রতিবাদী, ডাক্তার, যৌনকর্মী— যে কোনও ধরনের চরিত্রই নিজের সবটুকু দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি আমি," বললেন বিদীপ্তা চক্রবর্তী। 

মঞ্চ থেকে পর্দায় সমান সাবলীল বিদীপ্তা চক্রবর্তী

মঞ্চ থেকে পর্দায় সমান সাবলীল বিদীপ্তা চক্রবর্তী

পরমা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৫২
Share: Save:

একটানা ধারাবাহিক করছিলেন। এ বার পরপর ছবি। নতুন ছবি ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’ মুক্তি পাওয়ার পরে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি। ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দা, কেরিয়ার থেকে সংসার, সব নিয়েই অনর্গল বিদীপ্তা চক্রবর্তী।

প্রশ্ন: ইদানীং নানা ধরনের চরিত্র করছেন। পরিকল্পনামাফিক?

বিদীপ্তা: হ্যাঁ, বাড়ির ‘সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা’ বড়বউমা সাজতে সাজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম! একটানা ওই ধরনের চরিত্রেই আমাকে ভাবা হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল একটু বদল দরকার। তাই ইদানীং বিভিন্ন রকম চরিত্র করছি। ‘ড্রাকুলা স্যর’, ‘রসগোল্লা’, ‘বাবা, বেবি ও…’ কিংবা ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’— সবক’টা চরিত্রই একে অন্যের চেয়ে অন্যরকম।

প্রশ্ন: ‘আবার কাঞ্চনজঙ্ঘাতেও তো বাড়ির বড়বউ-ই?

বিদীপ্তা: হ্যাঁ, তবে চরিত্রের গঠনটা আলাদা। এখানে বাড়ির বউয়ের নিজস্ব একটা লড়াই আছে। তার পাশাপাশি একটা যৌথ পরিবারের ভিতরে নানা ধরনের অশান্তি, টানাপড়েনের চোরা স্রোত আছে। তার মধ্যেও এই চরিত্রটা সবাইকে নিয়ে বাঁচে, তাদের আগলে পথ হাঁটে। আবার নিজের লড়াইটাও লড়ে আলাদা করে।

প্রশ্ন: ‘বাবা, বেবি ও…’ কিংবা আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা’— দুটোয় দু’রকম চরিত্র। কোনটা পছন্দের?

বিদীপ্তা: আমি তো অভিনেত্রী। অভিনয় করতে আমি ভালবাসি। নানা রকমের চরিত্রে, বিভিন্ন রকম মেজাজে সেটা করতে ভাল লাগে। বউমা, দিদি, বন্ধু, প্রতিবাদী, ডাক্তার, যৌনকর্মী— যে কোনও চরিত্রেই আমার কাজ করতে ভাল লাগে। যেমন চরিত্র দেওয়া হবে, আমি নিজের সবটুকু দিয়ে সেটাকেই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করব। আমার কোনও বাছবিচারও নেই। ‘রসগোল্লা’য় যেমন নবীনচন্দ্র দাসের আমলের খালি গায়ে শাড়ি পরা সেকেলে চরিত্রে কাজ করেছি। ‘ড্রাকুলা স্যর’ আবার তার থেকে একেবারে অন্য রকম।

প্রশ্ন: বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কি আলাদা প্রস্তুতি নেন?

বিদীপ্তা: একেবারেই না। এটা একদমই আমার ধাতে নেই। শ্যুটিং শুরুর আগে আলাদা করে চরিত্রটাকে আত্মস্থ করা, প্রচুর গবেষণা করা— এটা অনেকেই করে থাকেন। আমি সেটা পারি না। যেটা যেমন, শ্যুটিংয়ের সময়ে নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলি। কোনও বিশেষ চরিত্রের জন্য আলাদা করে কিছু পড়াশোনার প্রয়োজন পড়লে আলাদা কথা।

প্রশ্ন: প্রস্তুতি ছাড়া অভিনয় কি সম্ভব হয়েছে ধারাবাহিকের কারণে?

বিদীপ্তা: ঠিক তা নয়। ধারাবাহিকের শ্যুটিং একেবারে অন্যরকম। ফ্লোরে যাওয়ার আগে স্ক্রিপ্ট হাতে আসে। সংলাপ পড়ে তাৎক্ষণিক প্রস্তুতি নিয়েই অভিনয় করে ফেলতে হয়। আসলে ধারাবাহিকের কোনও চরিত্র সম্পর্কে নির্দিষ্ট একটা রূপরেখা ধারাবাহিক শুরুর সময়েই দেওয়া থাকে। সে কেমন, কী ভাবে কথা বলে, কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দেয়, কী ভাবে সাজে, সবটাই আগে থেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সেই গতে বেঁধেই প্রতিটা পর্বের শ্যুট হয়। যত দিন সেই ধারাবাহিক চলে, দৃশ্য অনুযায়ী অভিনয়ের ধরনটা ভেবে নিই। ছবির ক্ষেত্রে হাতে আগেভাগে চিত্রনাট্য, রূপরেখা এসে যায়। ফলে মানসিক ভাবে চরিত্রটাকে চিনে নেওয়ার সুযোগ থাকে।

স্বামী বিরসার সঙ্গে বিদীপ্তা।

স্বামী বিরসার সঙ্গে বিদীপ্তা।

প্রশ্ন: এক ছবিতে অনেক তারকার ভিড়ে আলাদা করে দর্শকের প্রশংসা। তৃপ্তি দেয়?

বিদীপ্তা: অভিনয়টা আমার কাজ। তার বাইরে খুব একটা কিছু সাধারণত মাথায় রাখি না। পঁয়ত্রিশ বছর তো হল অভিনয়ের দুনিয়ায়। দর্শক নিশ্চয়ই আমায় একটু হলেও পছন্দ করেন, সে জন্যই এত বছর টিকে রয়েছে। তবে প্রশংসা পেতে কার না ভাল লাগে? প্রশংসা বা সমালোচনা, দুটোই আমার কাছে জরুরি। সাধারণ দর্শক যাঁরা টিকিট কেটে আমার অভিনয় দেখেন, তাঁদের মতামত খুব প্রয়োজনীয়। কারণ তাঁরা সত্যি কথাই বলবেন। ভাল লাগলে ভাল, খারাপ লাগলে খারাপ।

প্রশ্ন: অনেক দিন আপনাকে ধারাবাহিকে দেখা যাচ্ছে না?

বিদীপ্তা: হ্যাঁ, একটানা ধারাবাহিকে কাজ করছিলাম এই কিছু দিন আগে পর্যন্ত। এখন যেমন আবার পরপর ছবি করছি। তবে ধারাবাহিকে আবার ভাল চরিত্র পেলে কেন করব না? এই মুহূর্তে কিছুটা ব্যস্ত। টানা শ্যুটিং আছে। একাধিক ছবির কাজ। তার পরে নিশ্চয়ই আবার ধারাবাহিক, ছবি দুটোই করব।

প্রশ্ন: আপনার স্বামী বিরসা দাশগুপ্তের ছবিতে আপনাকে দেখা যায় না কেন?

বিদীপ্তা: (হাসি) এই প্রথম বলতে পারছি, এ বার দেখা যাবে। বিরসার আগামী ছবি ‘হাওয়া বন্দুক’-এ আমি আর আমার মেয়ে মেঘলা দু’জনেই থাকছি। যাকে বলে, সপরিবার ছবিতে।

প্রশ্ন: বড় মেয়ে মেঘলাও এখন আপনার মতোই অভিনয়ে। কেমন লাগছে?

বিদীপ্তা: ভাল লাগবে না কেন? তবে মেঘলা কিন্তু শুধু অভিনয় নয়, ক্যামেরার পিছনের কাজ শিখতেও খুব আগ্রহী। ও বাবার সহকারী হিসেবে কাজ করেছে আগে। এখনও মন দিয়ে ক্যামেরা, পরিচালনার সব খুঁটিনাটি ভাল করে শিখতে চায়। আর অভিনয় তো করবেই।

প্রশ্ন: আর ছোট মেয়ে ইদা?

বিদীপ্তা: (হাসি) ও তো বড্ড ছোট এখনও। স্কুলে পড়ে। একেই এত দিন কোভিডের কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। দু’বছর বাদে আবার স্কুলে যাচ্ছে। আপাতত মন দিয়ে পড়াশোনাটাই করুক। তবে আর একটু বড় হয়ে ও যদি অভিনয়ে আসতে চায়, নিশ্চয়ই বাধা দেব না।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনি নিজে তো ছোটবেলাতেই অভিনয়ে এসেছিলেন?

বিদীপ্তা: হ্যাঁ, থিয়েটারে। বাবা বিপ্লবকেতন চক্রবর্তীর সঙ্গে আমরা তিন বোনই ছোটবেলা থেকে মঞ্চে অভিনয় করেছি। তার পরে খবর পড়েছি টেলিভিশনে। সেখান থেকে আমি আর সুদীপ্তা পুরোপুরি পর্দার অভিনয়ে চলে এসেছি।

প্রশ্ন: আপনি এবং সুদীপ্তা দুজনেই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তুলনা হয় না?

বিদীপ্তা: (হা হা হাসি) রেষারেষি আছে কি না, জানতে চাইছেন তো? একেবারেই নেই। হিংসে, খারাপ লাগা, কিচ্ছু নেই। কেন যে লোকে এ সব ভাবে! আমার আর সুদীপ্তার কিন্তু ভীষণ ভাল সম্পর্ক। সেই ছোটবেলা থেকেই। একই পেশায় আছি। দু’জনেই নিজেদের নতুন কাজ নিয়ে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করি, একে-অন্যকে পরামর্শ দিই। কোনও রকম শত্রুতার প্রশ্নই নেই। বরং বোনেদের ভালবাসাই আছে।

প্রশ্ন: আপনার পরিবারের প্রায় সকলেই বিনোদন দুনিয়ায়। সুবিধা হয় তাতে?

বিদীপ্তা: নিশ্চয়ই। আমার মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি রাজা দাশগুপ্ত এবং চৈতালী দাশগুপ্ত, স্বামী বিরসা, এখন মেয়েও বিনোদন জগতেরই মানুষ। ফলে প্রত্যেকেই জানে এই পেশাটায় কতখানি সময় দিতে হয়, কিংবা কতটা ব্যস্ততা থাকে। আমি এত বছর টানা অভিনয় করছি, তার আগে খবর পড়তাম বা তারও আগে চাকরি করতাম। এই পুরোটার মধ্যেই সংসারটাও কিন্তু অনেকখানি সময় নিত। বিশেষত আমার দুই মেয়ে যখন একদম ছোট ছিল। তখন মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে ওদের রেখে নিশ্চিন্ত হয়ে কাজ করতে পেরেছি। যখনই শ্যুটিংয়ে বাইরে যেতে হয়েছে, ওঁরাই আমার সংসারটা সামলে দিয়েছেন। এই তো এখন ছবির শ্যুটিংয়ে বিদেশে যেতে হবে। ওঁরাই আমার দুই মেয়েকে দেখেশুনে রাখবেন।

প্রশ্ন: টিভি চ্যানেলে খবর পড়তেন। কেমন লাগত?

বিদীপ্তা: একেবারে অন্য রকম। তখন সবে দূরদর্শনের পাশাপাশি এক-দুটো বেসরকারি চ্যানেল শুরু হয়েছে। তাতে খবর পড়ার ধরনটাও ছিল দূরদর্শনের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। ফলে বেশ উপভোগ করেছিলাম সে সময়টা।

প্রশ্ন: থিয়েটারে আপনার শুরু। এখনও করেন?

বিদীপ্তা: সত্যি বলতে কী, এখন বেশ কিছু দিন হল নাটকে আর অভিনয় করা হয়নি। এমনিতেও কোভিডের ধাক্কায় কত দিন বেসামাল হয়ে পড়েছিল থিয়েটার জগৎ। এখন তো সবে ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে সবটা। নিশ্চয়ই পরে কখনও আবার সুযোগ হলে মঞ্চেও ফিরব।

অন্য বিষয়গুলি:

Bidipta Chakraborty Tollywood Actress Interview
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy