কামদার নয়, নামদার
ডাকনাম ‘জয়ী’। কিন্তু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোট ছাড়া এখনও কোনও ভোটে জয়ী হননি। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে হাওড়ার বালিতে দাঁড়িয়ে হেরেছিলেন। তা-ও যে-সে হার নয়। তিন জনের মধ্যে তৃতীয়। জিতেছিলেন তৃণমূলের রানা চট্টোপাধ্যায়। দু’নম্বরে বিজেপির বৈশালী ডালমিয়া। দীপ্সিতা ‘বেচারি’ তৃতীয়। কিন্তু ভোটের ভবি কি সহজে ভোলে! দলের নির্দেশে লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে নেমে পড়েছেন। শ্রীরামপুর লোকসভায় একটা নয়, সাত-সাতটা বিধানসভা জুড়ে তাঁর লড়াই। মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির কবীরশঙ্কর বসু। এ বার কি তিনি নামদার থেকে কামদার হবেন?
লালেই মোহন
দাদু পদ্মনিধি ধর ডোমজুড়ের তিন বারের সিপিএম বিধায়ক। দীপ্সিতাদের বালি ঘোষপাড়ার বাড়িটিও ডোমজুড় বিধানসভা এলাকায়। বাবা পীযূষ ধর সিপিএমের শিশুফ্রন্ট ‘কিশোরবাহিনী’র রাজ্য সম্পাদক। মা দীপিকা ঠাকুর চক্রবর্তীও রাজনীতিতে আছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিএমের টিকিটে। জেতেননি। তবে পঞ্চায়েত ভোটে মায়ের জন্য মাটি কামড়ে লড়েছিলেন মেয়ে। সেটাই নাকি তাঁর লোকসভায় টিকিট পাওয়ার নেপথ্য কারণ।
টোটো কোম্পানি
দীপ্সিতার প্রচারে এ বার সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে হুডখোলা টোটো। সরু সরু রাস্তায় তার উপরেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রচার করছেন তিনি। পায়ে ক্রকসের জুতো। প্রচার শুরুর দিকে পায়ে ব্যথা হচ্ছিল। এখন সয়ে গিয়েছে। দীপ্সিতার মতোই কালো ক্রকস পরে প্রচারে বেরোচ্ছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও।
সিঙ্গাপুরাণ
শ্রীরামপুরের জন্য মাঠে মারা গিয়েছে সিঙ্গাপুর সফর। জানুয়ারিতে ঠিক হয়েছিল, একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে বক্তৃতা করতে সিঙ্গাপুর যাবেন দীপ্সিতা। কিন্তু দল লোকসভা ভোটের প্রার্থী করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। ২৯ এপ্রিল ছিল সেই আলোচনা সভা। প্রচার ঠেঙিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে অনলাইনে ‘পেপার প্রেজ়েন্টেশন’ করেছেন সিপিএমের তরুণী প্রার্থী।
ডফ্লিওয়ালি
তবে নাচতে পারেন। গাইতেও পারেন। সবচেয়ে ভাল পারেন তালে-তালে ডফ্লি বাজিয়ে স্লোগান দিতে। ডফ্লি বাজিয়ে তাঁর ‘আজ়াদি’ স্লোগান দেওয়ার একাধিক ভিডিয়ো বিভিন্ন সময়ে ভাইরালও হয়েছে। এখনও অনুরোধের আসরে তাঁকে সে সব শোনাতে হয়। প্লাস বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি— তিনটে ভাষাতেই সাবলীল বক্তৃতা করতে পারেন। ব্যক্তিপ্রচারে নাক সিঁটকোনো অনেক সিপিএম নেতাই মানছেন, দীপ্সিতার কারণে ভিড় বাড়ছে প্রচারে।
মহিলামহল
আগামী সম্মেলনে এসএফআই কি প্রথম মহিলা সাধারণ সম্পাদক পাবে? সিপিএমে গুঞ্জন একটা রয়েছে। যা ক্রমে জোরালোও হচ্ছে। ভূগোল নিয়ে আশুতোষ কলেজে পড়ার সময়ে এসএফআইয়ে প্রবেশ দীপ্সিতার। ছিলেন ইউনিট সভাপতি। তার পরে জেএনইউয়ে চলে যান। সেখানে এমএ, এমফিল করে আপাতত পিএইচডি করছেন। ২০১৪ সালে এসএফআইয়ের হয়ে জেএনইউয়ে ‘কাউন্সিলর’ নির্বাচিত হন। এসএফআইয়ের জেএনইউ ইউনিটের সভাপতিও ছিলেন (যে দায়িত্বে একদা ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি)। অতঃপর এসএফআইয়ের দিল্লি রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি। তার পরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এখন সর্বভারতীয় আধা-বস্। তবে যুগ্ম। পরের সম্মেলনে কি এসএফআই প্রথম মহিলা বস্ পাবে? দীপ্সিতার সিপিএম-সুলভ জবাব, “সংগঠন চাইলে পাবে।”
ঈশ্বরের আপন দেশ
রাজধানীতে ছাত্র আন্দোলনের কারণে দীপ্সিতার সিপিএমের সদস্যপদ দিল্লিতে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির পর সেই সদস্যপদ কোথায় যাবে? বাংলা না কেরল? কেরলকে নিজের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলেন। খানিক গর্ব নিয়েই জানান, কেরলের প্রতি জেলায় অন্তত ১০-১৫ জন তাঁর এমন পরিচিত রয়েছেন, যাঁদের বাড়িতে তিনি গিয়ে থাকতে পারেন। তবে পার্টি সদস্যপদ বাংলাতেই আনতে চান। কেন? জবাবে তৃণমূলের স্লোগান ভেসে এল, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়।’
বি-বি
পছন্দের বিষয় দু’টি। দুই ‘বি’। বি এবং বি। বিড়াল এবং বিরিয়ানি। মাঝেমাঝেই তাঁর হোয়াট্সঅ্যাপ স্টেটাসে জায়গা করে নেয় বিড়ালের ছবি। বিরিয়ানি খেতে ভালবাসলেও রাঁধতে পারেন না। রান্না বলতে টেনেটুনে ভাত আর ওমলেট।
তুমিও ভাল-আমিও ভাল
দীপ্সিতা গায়ক শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের মাসতুতো বোন। যাঁর সঙ্গে একটা সময়ে গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর সম্পর্ক ছিল। এখন শোভনের সম্পর্ক নায়িকা সোহিনী সরকারের সঙ্গে। সোহিনীকে নিয়ে দীপ্সিতাদের বাড়িতেও গিয়েছেন শোভন। তবে তখন দীপ্সিতা বাড়িতে ছিলেন না। কিন্তু দীপ্সিতার কাকে ভাল লাগে? ইমন না সোহিনী? সিপিএম-সুলভ ভারসাম্যে জবাব আসে, “ইমনদি দারুণ গায়িকা। এসএফআইয়ের প্রাক্তনীও। আর সোহিনীদি দারুণ অভিনেত্রী।” অর্থাৎ, সস্তা ভাল-দামিও ভাল। তুমি ভাল-আমিও ভাল।
কিন্তু সবার চাইতে ভাল?
পাউরুটি আর ঝোলাগুড়। অর্থাৎ, ঝোলাগুড়ের মতো আঠালো প্রেম! দীপ্সিতা সম্পর্কে আছেন। প্রেমে আছেন। কিন্তু প্রেমিকের পরিচয়টি গোপন রাখেন। বলবেন না। বলছেন না। কারণ, যাঁর সঙ্গে তিনি প্রেম করেন, তিনিই বিষয়টি আপাতত গোপন রাখতে চান। এখনই সর্বসমক্ষে আনতে চান না।
কৃষ্ণকলি তারেই বলি
শ্যামবর্ণ নিয়ে তাঁর খেদ রয়েছে। অকপটেই সে কথা বলেন। মাঝেমাঝে হতাশও হন। ছোটবেলায় শুনতে হয়েছে, ‘‘বাবা-মা এত কালো নয়! মেয়েটা এত কালো হল কী করে!’’ তবে রঙে কী যায়-আসে? বছর ষাটেকের এক প্রৌঢ় সম্প্রতি ডানকুনি সিপিএম পার্টি অফিসে পৌঁছে সরাসরি দীপ্সিতাকে বলেন, ৩০ বছর বয়সি দীপ্সিতার জন্য অনেক কবিতা লিখেছেন। তবে তা প্রেমালু না বিপ্লবাত্মক, জানা যায়নি। দীপ্সিতা প্রার্থী হওয়ার পর কেউ এক জন তাঁকে ‘কৃষ্ণকলি’ আখ্যা দিয়ে একটি কবিতা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। ডানকুনির প্রৌঢ়ই কি সেই কবি? কে জানে!
রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy