আতঙ্ক
বীরভূম সে অর্থে ‘বীর’দেরই ভূমি ছিল। বীরশ্রেষ্ঠ আপাতত কারাগারে। তবে তাঁর আমলে ভোটের সময় বীরভূমের বাতাসে শোনা যেত চড়াম-চড়াম শব্দ। বীরভূমের ভোটের পথ্যতালিকায় থাকত গুড়-বাতাসা। বীরভূমের নিদান ছিল, পুলিশকে বম্ মারুন! কবির সাবধানতাসূচক শঙ্খধ্বনি শোনা গেলে বীরভূমের পাল্টা বচন ছিল, এ কবি কেমন কবি? বীরভূমের সাংসদ শতাব্দীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে গুড় বা বাতাসার মিষ্টতা ছিল না। তবে ভোটের সময় তিনি বীরভূমের হাওয়ায় আতঙ্ক মিশিয়ে দিতেন বলেই চিলচিৎকার জুড়তেন বিরোধীরা। আতঙ্ক। ঘটনাচক্রে, শতাব্দীর প্রথম ছবির নাম। পরিচালক তপন সিংহ।
পরশমণি
বীর কেষ্টর অনুপস্থিতিতে এই প্রথম ভোটে লড়তে নামছেন শতাব্দী। কেষ্ট মণ্ডলের সঙ্গে গোড়ায় তাঁর বনিবনা না-থাকলেও ক্রমে শতাব্দী বুঝে যান, কেষ্ট ছাড়া দিদি বীরভূমে কিছু করবেন না। কেষ্টই দিদির ‘পরশমণি’। সেই কেষ্টকে ছাড়া কি সমস্যা হচ্ছে তাঁর? একটু বেশি চেষ্টা করতে হচ্ছে? শতাব্দী বলছেন, ‘‘ওই রকম এক জন সংগঠক না থাকা তো ক্ষতি বটেই। উনিই তো অনেকটা দেখতেন। তবে আশা করি সবাই মিলে সবটা করে নিতে পারব।’’ ঠিকই। ভোটের বীরভূমে কেষ্টই তৃণমূলের পরশমণি। ঘটনাচক্রে, এটি শতাব্দী অভিনীত ছবির নামও বটে। পরিচালক তরুণ মজুমদার।
আবিষ্কার
২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে আমচকাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম লোকসভা আসনের প্রার্থী হিসেবে অভিনেত্রী শতাব্দীর নাম ঘোষণা করেন। তার আগে পর্যন্ত রাজনীতির সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না টলিউডের এই প্রথম সারির অভিনেত্রীর। রাজনীতিতে গিয়ে সফল হবেন, এমন কোনও আত্মবিশ্বাসও ছিল না। কিন্তু প্রথম বার ভোটে লড়েই জেতেন শতাব্দী। বাংলা ছবির নায়িকাদের মধ্যে শতাব্দীই প্রথম, যিনি নির্বাচনী রাজনীতিতে এসেছিলেন। সে অর্থে তিনি মমতার ‘আবিষ্কার’। আবিষ্কার। ঘটনাচক্রে শতাব্দী অভিনীত একটি ছবির নাম। পরিচালক সলিল দত্ত।
আপন আমার আপন
সেই ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল। গত দেড় দশকে বীরভূমই তাঁর আপন ঘর। ছিলেন অভিনেত্রী। এখন তিনি পুরোদস্তুর নেত্রী হয়ে উঠেছেন। আগে বীরভূমের কোনও অচেনা এলাকার নাম শুনলে অবাক হয়ে বলতেন, ‘‘এটা কি পৃথিবীতে?’’ এখন তিনি গভীরে গিয়ে প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা মুরারইয়ের কোন ব্লকে যেন?’’ প্রথম প্রথম এপ্রিল-মে মাসে বেজায় গরম লাগত। এখন সে সব সয়ে গিয়েছে। বীরভূম এখন তাঁর ‘আপন আমার আপন’। ঘটনাচক্রে, এই নামের ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন। পরিচালক ছিলেন তরুণ মজুমদার।
গুরুদক্ষিণা
তাপস পালের সঙ্গে জুটিতে তাঁর অভিনীত ছবি ‘গুরুদক্ষিণা’ সুপারহিট হয়েছিল। এখন অবশ্য তাঁর ‘রাজনৈতিক গুরু’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ২০০৯ সাল থেকে বীরভূম জিতে তিনি দলের সর্বোচ্চ নেত্রীকে ‘গুরুদক্ষিণা’ দিয়ে আসছেন। পর পর ভোটে মমতা তাঁর এই শিষ্যার উপরে আস্থা রেখেছেন। শতাব্দী হতাশ করেননি। এ বারও বলছেন, ‘‘আইপিএল কে জিতবে জানি না। তবে বিপিএল (বীরভূম প্রিমিয়ার লিগ) আমিই জিতব। নিশ্চিন্তে জিতব।’’ অর্থাৎ, ‘গুরুদক্ষিণা’ এ বারেও জমা পড়বে কালীঘাটের ঠিকানায়। অর্থাৎ, অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত ছবির মতো শতাব্দীর এই ‘গুরুদক্ষিণা’ও সুপারহিট হবে।
সংসার সংগ্রাম
২০০১ সালে শতাব্দীর পাণিগ্রহণ করেন মৃগাঙ্ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দেখাশোনার বিয়ে’। তখনও শতাব্দী পুরোদস্তুর নায়িকা। অভিনেত্রী। আর ২০০৯ সাল থেকে নেত্রী। তত দিনে জন্মেছে শতাব্দী-মৃগাঙ্কর পুত্র সাম্যরাজ (তোজো)। তারও পরে শতাব্দী দত্তক নেন কন্যা শামিয়ানাকে (জ়ুমি)। সপ্তাহান্তে নিজের কেন্দ্র বীরভূমে যাতায়াত। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় কই! যেমন এ বারেও। বীরভূমের ভোট হওয়া পর্যন্ত কলকাতামুখো হবেন না শতাব্দী। সেখানে তাঁর জোড়া বাসা (আসলে ভোটের ঘাঁটি)। রামপুরহাট আর সিউড়িতে। রাজনীতির লড়াই তো আছেই। সংসার করতেও সংগ্রাম করতে হয় নেত্রী-অভিনেত্রীকে। কাকতালীয় হতে পারে। কিন্তু ‘সংসার সংগ্রাম’ নামের ছবিতে একদা অভিনয় করেছিলেন তিনি। পরিচালক চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী।
একান্ত আপন
ভোটের ঠেলায় ওয়েব সিরিজ় দেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু সবচেয়ে ভালবাসেন পাকিস্তানি সিরিয়াল দেখতে। সীমান্তের ও পারের সিরিয়ালই তাঁর একান্ত আপন। এখন অবশ্য প্রচার, মিটিং, রোড-শো সংক্রান্ত বিবিধ ব্যস্ততায় সে সব শিকেয় উঠেছে। বলেন, ‘‘আমি অস্থিরতার মধ্যে এ সব দেখতে পারি না! অনেকে বলেন, সিরিজ় দেখলে অস্থিরতা কাটে। কিন্তু আমার ও সব হয় না।’’ একান্ত আপন পাক সিরিয়ালের কাছে আপাতত যাওয়া হচ্ছে না তাঁর। একান্ত আপন। যে নামের একটি ছবিতে শতাব্দী অভিনয় করেছিলেন। পরিচালক ছিলেন বীরেশ চট্টোপাধ্যায়।
ন্যায় অধিকার
লোকসভা ভোটে বাংলার ‘ন্যায় এবং অধিকার’-কে সামনে রেখে লড়তে নেমেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া টাকা থেকে বাংলাকে ‘বঞ্চিত’ করে রাখার প্রতিবাদ করে চলতি লোকসভা ভোটের জন্য নতুন রাজনৈতিক আখ্যান রচনা করেছে বিরোধী তৃণমূল। সেই ‘অন্যায়’-কে জনসমক্ষে তুলে ধরে নিজেদের ‘অধিকার’ ছিনিয়ে আনতে নির্বাচনী প্রচারের ময়দানে নেমেছেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি নির্বাচনী সভায় তাঁরা বলছেন সেই ন্যায় অধিকারের কথা। ন্যায় অধিকার। যে নামের ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শতাব্দী। পরিচালক ছিলেন অঞ্জন মুখোপাধ্যায়।
লাল পান বিবি
প্রচারে বেরোনোর সময় শতাব্দী পুরোদস্তুর মেক-আপে। ছোট ছোট সভায় গিয়ে জমায়েতকে বলেন, ‘‘এই যে! সামনে থেকে দেখে নিলেন! ভোটটা দেবেন কিন্তু!’’ আর জটলা থেকে হুল্লোড়ের হররা ওঠে। পরনে ঝলমলে শাড়ি। লম্বা হাতা ব্লাউজ়। এককালে কোঁকড়ানো চুল ছিল তাঁর। এখন স্ট্রেট করিয়েছেন। চওড়া কপালে টিপ। চোখে বিভিন্ন শেপ এবং সাইজ়ের রোদচশমা। ফ্যাশনদুরস্ত। ঠোঁটে গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক। এক ঝলকে ‘লাল পান বিবি’। তাঁর সুপারহিট ছবি। পরিচালক প্রশান্ত নন্দ।
রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy