স্বপনচারিণী
প্রথম হিন্দি ছবি রাজ কপূরের বিপরীতে। নাম ‘সপনো কা সওদাগর’। ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবির পোস্টারে তাঁর ‘ড্রিম গার্ল’ খেতাবপ্রাপ্তি। সেই থেকেই তিনি বলিউডের ‘স্বপনচারিণী’। সারা দেশ সেই থেকে তাঁকে দেখে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর মনে মনে রবি ঠাকুর আওড়ায়, ‘যে ছিল আমার স্বপনচারিণী, তারে বুঝিতে পারিনি, দিন চলে গেছে খুঁজিতে খুঁজিতে’!
নাম-টাম
খুঁজে পেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। ‘শোলে’ ছবির জয়। রামগড় স্টেশনে নেমে দোস্ত বীরুরূপী ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে যখন হেমার টাঙায় উঠলেন, তত ক্ষণে টাঙাওয়ালি একঝুড়ি বকমবকম করে ফেলেছে। তার মধ্যে বার দশেক নিজের ‘বসন্তী’ নামটাও বলে ফেলেছে। তাকে থামাতে অবিস্মরণীয় প্রশ্ন করেছিল জয়, তুমহারা নাম কেয়া হ্যায় বসন্তী?
টাম-ব্রাম
‘টাম’ অর্থাৎ ‘তামিল’। ‘ব্রাম’ অর্থাৎ ‘ব্রাহ্মণ’। রক্ষণশীল তামিল আয়েঙ্গার ব্রাহ্মণ (পরিভাষায় টাম-ব্রাম) পরিবারে জন্ম হেমা মালিনীর। ইস্কুলে প্রিয় বিষয় ছিল ইতিহাস। তবে ক্লাস ইলেভেনের পর লেখাপড়া হয়ে ওঠেনি। তামিল ছবিতে অভিনয়জীবন শুরু করে দিয়েছিলেন তো।
গ্রাম-ট্রাম
অন্য অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মতো ইনস্টাগ্রামে অহরহ নিজের ‘আপডেট’ দিতে পছন্দ করেন না। তিনি সাবেক ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী যে, ভক্তেরা রোজ তাঁকে দেখলে উৎসাহ কমে যাবে। দুই কন্যা এষা-অহনা তাঁদের তারকা মাকে ইনস্টায় আনার জন্য প্রায় সালিশি সভা বসিয়েছিলেন। অবশেষে হেমা রাজি হন। আপাতত ইনস্টাগ্রামে তাঁর ‘ফলোয়ার’ প্রায় ১০ লক্ষ। পোস্টের সংখ্যা অবশ্য মাত্রই ৬০০ পেরিয়েছে।
গরম-ধরম
১৯৭০ সালে ধর্মেন্দ্র-হেমা জুটির প্রথম ছবি ‘তু হাসিন, ম্যায় জওয়ান’। ছবির সেটেই তাঁদের পরিচয়। ক্রমে মন দেওয়া-নেওয়া। ধর্মেন্দ্র তখন ঘোরতর বিবাহিত। সন্তানের পিতা। কিন্তু প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথা ধরা পড়ে কে জানে! অতএব, হেমা-ধর্মেন্দ্র এগিয়ে যেতে থাকেন। গোটা বলিউড জেনে যায়। ‘ড্রিম গার্ল’ এবং ‘গরম ধরম’— দু’জনের মোহমুগ্ধেরাই বুঝে যান, বাঁশি বেজে গিয়েছে।
পরিচয়-পরিণয়
যতটা সহজে পরিচয়, ততটাই কঠিন ছিল পরিণয়। ১৯৮০ সালে হেমা সিদ্ধান্ত নেন, ধর্মেন্দ্রকেই বিয়ে করবেন। কিন্তু বেঁকে বসেন হেমার বাবা। দক্ষিণ ভারতীয় রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হেমা। আর হরিয়ানার জাঠসন্তান ধর্মেন্দ্র বিবাহিত। স্ত্রী এবং চার সন্তান রয়েছে তাঁর। এ বিয়ে কী করে মানবেন তিনি! কিন্তু হেমা অনড়, অটল। সাফ জানিয়ে দেন, হয় তিনি তখনই ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করবেন। নয়তো সারাজীবন অবিবাহিতাই থেকে যাবেন। পিতার হৃদয় গলনাঙ্ক ছুঁল। মধুরেণ সমাপয়েৎ।
ইস্কন-টিস্কন
শ্রীকৃষ্ণের শহর মথুরার সাংসদ তিনি। তার কিছু দূরে শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন। এ কি আদৌ আশ্চর্যের যে, ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস’ বা ‘ইস্কন’-এর আজীবন সদস্য হবেন হেমা?
পদ্মশ্রী থেকে শ্রীপদ্মে
ভারত সরকার পদ্মশ্রী খেতাব দিয়েছিল ২০০০ সালে। তার তিন বছরের মাথায় তিনি রাজ্যসভার মনোনীত সাংসদ হন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সেই পদে। ২০১১ সালে এক বছরের জন্য কর্ণাটক থেকে রাজ্যসভায় ছিলেন হেমা। ২০১৪ সালে সরাসরি মথুরা থেকে লোকসভায়। মথুরায় ১৯৯১-১৯৯৯ পর্যন্ত জিতত বিজেপি। পরের ১০ বছর পদ্ম-হীন মথুরা। ২০০৪ সালে জিতেছিল কংগ্রেস। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় লোকদলের জয়ন্ত চৌধুরী। অবশেষে ২০১৪ সালে মথুরায় পদ্ম ফোটালেন ‘পদ্মশ্রী’।
বোঝে না সে বোঝে না
লোকসভার সাংসদ হয়ে গোড়ায় বেজায় বিপাকে পড়েছিলেন। কাজটা কী, সেটাই বুঝতে পারতেন না। প্রথম পাঁচ বছর কেটে গিয়েছিল প্রশাসনের সঙ্গে তাল রেখে সাংসদ তহবিলের টাকা খরচ করা আর হিসেব দেওয়া বুঝতেই। তবে পরের পাঁচ বছর চুটিয়ে কাজ করেছেন। কৃষ্ণপ্রেমী মথুরা এবং মালিনীপ্রেমেও নাকি বিভোর।
নাচো তো দেখি
ছবিতে অভিনয় প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। কিন্তু ভরতনাট্যম ছাড়তে পারেননি এখনও। তাঁর কাছে অভিনয়ের আগে নাচ। ভরতনাট্যমই তাঁর প্রথম প্রেম। থুড়ি, দ্বিতীয়। ধর্মেন্দ্রর পরেই। নাচ না থাকলে অভিনয়ে আসতেন কি না, তা নিয়ে তাঁর নিজেরও সন্দেহ আছে। দুই কন্যাকে পাশে নিয়েও মঞ্চে নেচেছেন।
জল-হাওয়া
বয়স পঁচাত্তর। কিন্তু সময়ের মরচে পড়েনি। ‘পাতলি কোমর, তিরছি নজ়র’-এর হেমাকে এখনও স্বচ্ছন্দে মধ্য পঞ্চাশের বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। সাধে কি আর মিনারেল ওয়াটার এবং সিলিং ফ্যান প্রস্তুতকারী সংস্থা তাঁকে দিয়ে নিজেদের বিজ্ঞাপন করিয়েছে! হেমা মালিনী পানীয় জল এবং হাওয়ার মতো উপকারী। আবশ্যিক। কালোত্তীর্ণ।
রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy