Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

দিদির ‘লক্ষ্মীভান্ডার’ মোদী ভাঙতে চান! সন্দেশখালির ‘দুর্গাবাহিনীর সাফল্য’ তুলে ধরে আক্রমণ মমতাকে

মহিলা ভোট যে মমতার বড় ভান্ডার গত বিধানসভা নির্বাচন তা বুঝিয়ে দিয়েছে। সেই ভোট ভান্ডারকে অক্ষত রাখতে ও মজবুত করতে এ বার লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পেও বরাদ্দ বেড়েছে। মোদীর লক্ষ্য ওই ভোটব্যঙ্ক।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদী। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৭:২১
Share: Save:

গত বিধানসভা ভোট বুঝিয়ে দিয়েছিল, বাংলায় মহিলা ভোট তৃণমূলকে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আনতে বড় ভূমিকা নিয়েছে। দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ভোটব্যাঙ্কে ধাক্কা দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার কৃষ্ণনগরের সভায় নিজের বক্তৃতার অনেকটা অংশ জুড়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার আরামবাগের সভায় মোদীর আবেদন ছিল মমতার মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের প্রতি। শনিবার সন্দেশখালির প্রসঙ্গে তুলে তিনি রাজ্যের মহিলাদের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড় করাতে চেয়েছেন রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে।

গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। মাসে মাসে মহিলাদের ৫০০ টাকা করে দেওয়া শুরু হয়েছিল ভোটের পরে। লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের মোট মহিলা ভোটারের সিংভাগই সেই প্রকল্পের আওতায়। আবার ভাতা দ্বিগুণ করার ঘোষণাও হয়ে গিয়েছে রাজ্য বাজেটে। এই অবস্থায় তৃণমূলের ভাল ফলের জন্য অঙ্কে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব মহিলা ভোটেই। সেটা বোঝেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। শুক্রবারের সভায় ততটা না হলেও, শনিবার তাঁর বক্তৃতার অনেকটা সময় তিনি দিয়েছেন মহিলা ভোটের দিকে তাকিয়ে। সেই লক্ষ্য স্পষ্ট করেই মোদী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে ভোট নিয়েছে। কিন্তু আজ মা মাটি মানুষ সবাই কাঁদছে। সন্দেশখালির মানুষ বিচার চেয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার ওদের কথা শোনেনি।’’

সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখের নাম না-নিয়েও মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় পুলিশ নয়, অপরাধী ঠিক করে তাকে কখন গ্রেফতার করা হবে, কখন সে সারেন্ডার করবে। তৃণমূল সরকার কখনও চায়নি ও শাস্তি পাক। কিন্তু বাংলার নারী শক্তি মা দুর্গার রূপ ধারণ করেন। তাদের পাশে আমরা দাঁড়াই। তখন সরকার বাধ্য হয় গ্রেফতার করতে।’’ একই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে মোদী বলেন, ‘‘মহিলাদের জন্য কোনও প্রকল্প এখানে রাজ্য সরকার চালু হতে দেয় না। পুরো দেশে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও চলছে। এখানে চালু হতে দিচ্ছে না। মহিলা হেল্প লাইন চালু হয়েছে। তৃণমূল সেটা নিয়েও উদাসীন। দেশ জুড়ে ১০ কোটি উজ্জ্বলা যোজনা দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৩ লাখ অ্যাপ্লিকেশন এসেছে। কিন্তু উজ্জ্বলা কমিটি বানানো হয়নি এখানে। এরা চাইছে কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবে সেটা তৃণমূলের তোলাবাজরা ঠিক করবে।’’

মোদীর এই বক্তব্য নিয়ে অবশ্য পাল্টা আঙুল তুলেছে তৃণমূলও। শশী পাঁজা থেকে কুণাল ঘোষ প্রায় এক সুরে বলছেন— মণিপুর, মধ্যপ্রদেশ বা উত্তরপ্রদেশে পর পর নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা নিয়ে চুপ থেকে বাংলার সন্দেশখালি নিয়ে প্রচার থেকেই বোঝা যায়, এর পিছনে আসল উদ্দেশ্য কী। মোদীর চলতি মাসের বাংলা সফর নিয়েও তাঁকে ইতিমধ্যেই ‘নারী বিরোধী’ তকমা দিয়েছে তৃণমূল। আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের কথায়, ‘‘পর পর যে তিনটে জায়গায় প্রধানমন্ত্রী সভা করতে আসছেন, সেই তিনটে লোকসভা কেন্দ্রেই মহিলা সাংসদ। এতেই স্পষ্ট, মোদীর প্রথম টার্গেট সংসদে সরব থাকা মহিলারাই।’’ ঘটনাচক্রে, শুক্রবার আরামবাগের পর শনিবার মোদী সভা করলেন কৃষ্ণনগরে, যার সাংসদ ছিলেন (বর্তমানে বহিষ্কৃত) মহুয়া মৈত্র। আগামী বুধবার তিনি সভা করবেন বারাসতে, যেখানকার সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার।

মোদী তাঁর শনিবারের বক্তৃতায় ১০০ দিনের কাজ নিয়েও অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘এখানে ২৫ লাখ ভুয়ো জবকার্ড রয়েছে। যে জন্মায়নি তার নামেও কার্ড হয়েছে। যে টাকা গরিব মানুষের পাওয়ার কথা ছিল সেটা তোলাবাজরা পেয়েছে। ওদের একটাই লক্ষ্য, কেন্দ্রের প্রকল্পকে রাজ্য সরকারের স্টিকার লাগিয়ে চালানো। স্কিমকে স্ক্যামে বদলে দিয়েছে তৃণমূল।’’

রাজ্যের জন্য মোদী সরকার অনেক কাজ করছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আজ ২২ হাজার কোটির বেশি প্রজেক্ট আপনাদের দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এই প্রজেক্ট পশ্চিমবঙ্গে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, পোর্ট, পেট্রোলিয়ামের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য। এতে যুব সমাজের কর্মসংস্থান হবে, উন্নতি হবে। কিন্তু এখানে যে ভাবে সরকার চলছে তাতে মানুষ হতাশ।’’ একই সঙ্গে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমূলকে বারবার জনাদেশ দিয়েছে। কিন্তু তৃণমূল অত্যাচার আর দুঃশাসনের অপর নাম হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের জন্য বাংলার উন্নতি নয়, দুর্নীতি আর পরিবারবাদ সবার আগে। তৃণমূল মানে ভ্রষ্টাচার, পরিবারবাদ। তৃণমূল বাংলার মানুষকে গরিব বানিয়ে রাখতে চায় যাতে ওদের খেলা চলতে থাকে।’’

গত ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী কল্যাণী এমস হাসপাতালের উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু সেই সময়েই রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দাবি করে তাদের ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই উদ্বোধন হচ্ছে এমসের। শনিবার কৃষ্ণনগরের সভা থেকে পাশের লোকসভা আসন রাণঘাটের কল্যাণীর কথাও টেনে আনেন মোদী। আর সেই সূত্রেও আক্রমণ করেন রাজ্যকে। তিনি বলেন, ‘‘পুরো রাজ্যে তোলাবাজি, দুর্নীতি, গুন্ডামি পুরো পারমিশন রয়েছে। কিন্তু এত বৃহৎ একটা কাজে তৃণমূল পরিবেশের দোহাই দিয়ে পারমিশন না-দেওয়ার কথা বলছে। তৃণমূলে আগে কমিশন তার পর পারমিশন। কমিশন না দিলে পারমিশন নেই।’’ তবে মোদী যে বাংলার মহিলা ভোটে ভাগ বসাতে চাইছেন তার আরও একটি প্রমাণ মিলতে চলেছে চলতি সপ্তাহেই। সন্দেশখালির জেলাতেই, বারাসতের কাছাড়ি মাঠে আগামী বৃহস্পতিবার আবার সভা রয়েছে মোদীর। সেটি মহিলা সম্মেলন হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Narendra Modi Mamata Banerjee BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy