প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছবি সংগৃহীত।
শুক্রবার সন্ধ্যায় আরামবাগের সভা থেকে এসে সোজা কলকাতার রাজভবনে ঢুকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পর থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে একজনেরই আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়েছিল— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের দলের প্রধানমন্ত্রী রাজভবনে রাত্রিবাস করলে সাধারণত দলের উচ্চমার্গের নেতারা গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কংগ্রেস আমলে এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে। কিন্তু শুক্রবার বিজেপি নেতাদের কারও সঙ্গেই দেখা করেননি মোদী।
ফলে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই রাজ্য বিজেপি মহলে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে— কী কথা হল মোদীর সঙ্গে দিদির।
ঘটনাচক্রে, বামপন্থীদের পাশাপাশি বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও ‘মোদী-দিদি সেটিং’ তত্ত্ব ঘুরপাক খায়। নিচুতলার অনেক কর্মী আবার সেটা প্রকাশ্যেই বলে থাকেন। শুক্রবার আরামবাগের সভায় মোদী একবারও তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেননি। সবমিলিয়ে বিজেপির অন্দরে জল্পনা এবং আলোচনা শুরু হয় যে, মোদী-মমতা সাক্ষাতে ঠিক কী কথা হয়েছিল শুক্রবার সন্ধ্যায়?
সেই কৌতূহল নিয়ে শনিবার কৃষ্ণনগরের সভার পরে সরাসরি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সভার শেষে মোদী মঞ্চ থেকে নেমে পিছনে তাঁর বিশ্রামের জন্য তৈরি ঘরে যান। সেখানেই সুকান্ত-শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর প্রায় ১৫ মিনিট বৈঠক হয়। সেখানে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা হওয়ার আগেই সুকান্তরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজভবনে মমতার সঙ্গে তাঁর কী কথা হয়েছে?
বিজেপি সূত্রের খবর, মমতার সঙ্গে তাঁর রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি বলেই সুকান্ত-শুভেন্দুকে জানিয়েছেন মোদী। প্রসঙ্গত, শুক্রবার সাক্ষাৎ সেরে বেরিয়ে একই কথা বলেছিলেন মমতাও। তিনি বলেছিলেন, ‘‘রাজনীতি কম, গল্প হয়েছে বেশি।’’ একই কথা মোদীও শনিবার তাঁর দলের রাজ্য স্তরের দুই শীর্ষনেতাকে জানিয়েছেন। তিনিও বলেছেন, রাজনীতির চেয়ে তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর খোশগল্পই হয়েছে বেশি। যা জেনে খানিক ‘আশ্বস্ত’ই হয়েছেন সুকান্ত-শুভেন্দু।
তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী-মমতা সাক্ষাৎ নিয়ে যে বিজেপি নেতারা কিছুটা ‘অস্বস্তি’তে থাকবেন, তা স্বাভাবিক। এ নিয়ে দলের নীচু স্তরের কর্মীদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাই কৌতূহল নিরসনে সরাসরি মোদীকেই প্রশ্ন করেন সুকান্ত-শুভেন্দুরা। তবে মোদী যা জবাব দিয়েছেন, তাতে তাঁদের কৌতূহল মিটলেও কর্মীদের তাঁরা বিশ্বাস করাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে কিন্তু খানিকটা সংশয় রয়েই যাচ্ছে।
শুক্রবার আরামবাগের সভায় তেমন বড় জমায়েত হয়নি বলে একান্ত আলোচনায় বিজেপি নেতাদের একাংশও মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণনগরে আশাতীত জনসমাগম হয়েছে বলেই দাবি বিজেপির। সেটা মঞ্চ থেকে মোদী নিজেও উল্লেখ করেছেন। ভিড় সামলাতে তিনিও বক্তৃতা থামিয়ে শান্ত হওয়ার জন্য আর্জি জানিয়েছেন জনতার কাছে। জমায়েত নিয়ে তিনি যে খুশি, সেটা সভার পরে রাজ্যের নেতাদেরও জানিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর পরেই শুরু হয় সুকান্ত-শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক। মিনিট পনেরোর ওই বৈঠকে মমতার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও কিছু আর্জি জানান সুকান্তেরা। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, শুধু তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা নন, রাজ্যের বেশ কয়েকজন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। এঁদের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রের তরফে পদক্ষেপ চাই। রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসনের কয়েকজনের নাম করেই অভিযোগ জানানো হয়। বলা হয়, ওই আমলারা তৃণমূলের ক্যাডারের মতো কাজ করছেন। আইএএস এবং আইপিএসরা যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চাকরি করেন, তাই বিভিন্ন দুর্নীতিতে তাঁদের যোগের বিষয়ে তদন্ত করানোর দাবিও জানানো হয়। তবে সেই আর্জি সম্পর্কে মোদী কী বলেছেন, তা জানা যায়নি। আলোচনা নিয়ে রাজ্য বিজেপি অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবেও কিছু জানায়নি। তবে মোদী বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছেন তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে। সেখানে বাংলার বিজেপি কর্মীদের সাহসের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি অবশ্য নতুন নয় রাজ্য বিজেপি নেতাদের তরফে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অনেক বার এমন দাবি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে সমাজমাধ্যমেও নির্দিষ্ট করে অভিযোগ তুলেছেন। ইদানীং রাজ্য সভাপতি সুকান্তও একই রকমের কথা বলছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছেও নালিশ করেছেন। এ বার হাতের কাছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে পেয়ে সরাসরি তাঁর কাছেও সেই অভিযোগ করেন সুকান্ত-শুভেন্দু। পাশাপশিই তাঁরা বলেন, রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে গোটা রাজ্য জুড়েই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫টি লোকসভা কেন্দ্রে ওই পরিবেশ রয়েছে।
সুকান্ত-শুভেন্দু বৈঠক শেষে ঘর ছাড়তেই মোদী ডেকে নেন বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরকে। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাও বটে। লোকসভা নির্বাচনের আগে মতুয়াদের নিয়ে বিজেপির চিন্তা রয়েছে। কারণ, ভোটের আগে হয়ে যাবে বলে কথা দিলেও এখনও কেন্দ্র সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত অধিনিয়মের বি়জ্ঞপ্তি জারি করেনি। এর উপর সম্প্রতি আধার কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে রাজ্যে। সেই সমস্যা সমাধানের দায়িত্বও রয়েছে শান্তনুর উপরে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সে সব নিয়েই মোদীর সঙ্গে কথা হয়েছে শান্তনুর।
তবে মোদী যে কৃষ্ণনগরের সমাবেশের আড়ে-বহরে খুশি, তা বিলক্ষণ বুঝেছেন সদ্য রাজ্যসভা ভোটে জয়ী বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। তিনি মোদীর মঞ্চেই ছিলেন। মঞ্চ ছাড়ার আগে শমীকের পিঠে হাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শমীককে বলেন, ‘‘একটু হাসুন। আপনি এত গম্ভীর কেন?’’ শমীক কিছুটা অভিভূত হয়ে হেসে ফেলে বলেন, ‘‘না, না। আমি ঠিকই আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy