Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: জাতির অগ্নিপরীক্ষা

গণঅভ্যুত্থানে জেরবার বাংলাদেশে মৌলবাদ ফের প্রবল। পাকিস্তানের উস্কানিতে তার রূপ ভয়াবহ। ইজ়রায়েলের বুকে প্যালেস্টাইনের জঙ্গিগোষ্ঠীর আক্রমণের অভিঘাতের জেরে, প্রতিশোধস্পৃহায় আজ একটা দেশ তথা জাতি ছারখার হতে চলেছে।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৪২
Share
Save

পর্যটনের অতি পরিচিত ঠিকানা কাশ্মীরের পহেলগাম ও পার্শ্ববর্তী বৈসরন উপত্যকা। সন্ত্রাসের ভয়াবহতায় কাশ্মীরের স্বাভাবিক জনজীবন ক্ষতবিক্ষত দীর্ঘ দিনই। সময়ের চাকা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টেছিল। বিগত প্রায় এক দশক ধরে ভূস্বর্গে ফের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের আনাগোনা চলছে। নিরাপত্তাজনিত সংশয়ের মেঘ যে অনেকটাই সরেছে, ট্রেন-উড়ানের টিকিট ও হোটেলের চড়া মূল্য আর সমাজমাধ্যমে চোখ বোলালে তা সহজেই অনুমেয়। পর্যটন-শিল্পকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোয়ার এসেছে। কিন্তু তার পরই মর্মান্তিক জঙ্গি হানা। অকালে প্রাণ হারালেন ২৬ জন সাধারণ মানুষ। নজিরবিহীন সন্ত্রাস দেশে কম হয়নি। তবে, বেছে বেছে পর্যটকদের পরিচয় জেনে তাঁদের পরিজনদের চোখের সামনেই ঠান্ডা মাথায় খুন করা— শুধু নৃশংসই নয়, সুপরিকল্পিত বার্তাও বহন করে। ঘটনাটির সময়কাল এমন একটি সন্ধিক্ষণ যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল। গণঅভ্যুত্থানে জেরবার বাংলাদেশে মৌলবাদ ফের প্রবল। পাকিস্তানের উস্কানিতে তার রূপ ভয়াবহ। ইজ়রায়েলের বুকে প্যালেস্টাইনের জঙ্গিগোষ্ঠীর আক্রমণের অভিঘাতের জেরে, প্রতিশোধস্পৃহায় আজ একটা দেশ তথা জাতি ছারখার হতে চলেছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান তো বটেই, ইরাক, ইরান, সিরিয়া-সহ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতেও সন্ত্রাস প্রায় দৈনন্দিন ব্যাপার। জঙ্গি হানায় কিন্তু প্রাণ যায় সকলেরই। ধ্বংসস্তূপে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় জাতপাত, ধর্ম-নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের রক্ত।

বর্তমান শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতিতে প্রকট হয়ে উঠছে রাগ আর হতাশা। আর সেই সুযোগেই শুরু হয়েছে রাজনীতির খেলা। আজ কৃত্রিম মেধার জাদুকাঠিতে বিদ্বেষের স্ফুলিঙ্গ গোটা দেশকে জ্বালিয়ে রাখারও ক্ষমতা রাখে। ঘটনার অব্যবহিত পরেই সমাজমাধ্যমে লাগাতার কদর্য ভাষায় আক্রমণ চালানো হচ্ছে দেশের সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে। বিদ্বেষের বিষবাষ্প স্মার্টফোনের মুঠিতেই সীমাবদ্ধ নয়, হিংসার আঁচ পৌঁছে যাচ্ছে মনের ভিতরেও। সমাজমাধ্যম আজ রণক্ষেত্রে পরিণত। বিভাজনকামী স্বার্থান্বেষী রাজনীতির জন্য মোক্ষম রসদ। অথচ, ঘটনার দিনই মুসলমান গাড়িচালক নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পরম যত্নে ভিন ধর্মী পর্যটকদের পৌঁছে দেন হোটেলের নিরাপদ আস্তানায়। তীব্র নিন্দায় শামিল হয়ে মোমবাতি মিছিলে পথে নামেন সেই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষগুলোই। রব ওঠে, আমরা প্রথমে ভারতীয় তার পরে কাশ্মীরি। জঙ্গিবাহিনীর পাল্টা ‘সবক’ শেখানোর ভয় উপেক্ষা করেই ‘শেম শেম’ রবে মুখরিত হয় ভূস্বর্গের অলিগলি। আচমকা হানায় পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে বেঘোরে প্রাণ হারান টাট্টুঘোড়ার সহিস সইদ আদিল হুসেন শাহ। ঘটনার পরের দিন এক অভূতপূর্ব শোক ও ক্ষোভের মধ্য দিয়ে বন্‌ধ পালন করেছে কাশ্মীর। হামলার খবর পাওয়া মাত্রই মসজিদগুলি প্রতিবাদ ও সংহতির স্লোগানে ফেটে পড়ে। অপরাধীদের শাস্তির প্রতিবাদে মুখরিত হয় উপত্যকার গলিঘুঁজি।

প্রশাসনের অভূতপূর্ব কড়া পদক্ষেপে জঙ্গিগোষ্ঠী সমূলে উৎপাটিত হোক। এটাই কাম্য। কিন্তু তা বলে, চরম সঙ্কটকালে একটা গোটা সম্প্রদায়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো কি সত্যিই সমীচীন? জাতি-ধর্ম-ভাষা-সংস্কৃতির বহুত্ব ও ভিন্নতাই ভারতের বৈশিষ্ট্য। তা রক্ষার দায়িত্ব কি শুধু সরকারের? একে অন্যকে দোষারোপে সমস্যার সমাধান মিলবে? দেশের গভীর সঙ্কট। প্রতিটি সংবেদনশীল মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপই এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইন্ধন-উস্কানির পিচ্ছিল পথে হারিয়ে না গিয়ে সংযম অনুশীলনের এ যেন এক চরম অগ্নিপরীক্ষা।

শঙ্খদীপ কর্মকার, কলকাতা-১১৫

ফের দুর্বিপাকে

পর্যটকদের হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। তার সঙ্গে এই জঙ্গিগোষ্ঠী এবং এদের পৃষ্ঠপোষকদের কঠিনতম শাস্তি দাবি করছি। তবে এটা বলতেই হবে এই পরিকল্পনার আঁচ করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে আমাদের দেশের গোয়েন্দা বিভাগ।

জঙ্গিরা বেশ কিছু দিন আগেই আস্তানা গড়েছিল, তার খবর রাখতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রের সরকার। মৌলবাদীদের পাতা ফাঁদে পড়তে চলেছে এ বার তারা। সন্ত্রাসের জন্য কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবসা বন্ধ হবে, সেখানে মানুষ অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়বেন। তখনই আবার মৌলবাদীরা নামমাত্র মাসোহারা দিয়ে যুবশক্তিকে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাতে উদ্বুদ্ধ করবে। পেটের টানে হয়তো তাঁদের অনেকেই সেই পথ বেছে নেবেন। আর তাতেই তাদের পৃষ্ঠপোষকদের উদ্দেশ্যটি সফল হবে।

আর ভারত যদি পাকিস্তানে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা চিন্তা করে, তাতেও ওই দেশটিরই সুবিধা হবে। দেশটি আরব ইরান-সহ অন্যান্য ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশের সহানুভূতি পাবে। আর রাষ্ট্রপুঞ্জে চিনের সমর্থন পেলে ভারতকে আক্রমণকারী দেশ বলে দাগিয়ে কড়া সমালোচনাও করবে। এর মধ্যে কি সহজ কোনও অঙ্কের ছবি দেখা যায় না? আর শান্তি রক্ষায় তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরণ নিতে হলে? আমাদের দেশ কি তখন বিপাকে পড়বে না? এই সব কিছুর জন্য দায়ী কিন্তু ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির অকর্মণ্যতা, বিদেশ মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতা।

বদ্রিনাথ দাস, কলকাতা-২৮

আত্মতুষ্টির ফল?

‘ভয়ঙ্কর’ (২৪-৪) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পর্যালোচনার সঙ্গে সহমত। ভূস্বর্গ স্বাভাবিক, সন্ত্রাসবাদীদের দমন করা হয়েছে— এই রকম বাণীতে আশ্বস্ত হয়েই গত তিন-চার বছর দেশ তথা বিদেশের মানুষ আবার নতুন করে কাশ্মীরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কী ভয়ঙ্কর এক আঘাতে সব স্তব্ধ হয়ে গেল!

২০২২ সালের কাশ্মীর পর্যটনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি কিছু দূর অন্তর সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ও তৎপরতা! এ বারে এত বড় কাণ্ড ঘটানোর সুযোগ কী ভাবে পেল সন্ত্রাসবাদীরা? রাজ্য বা কেন্দ্র কারও কাছেই কি আগাম বার্তা ছিল না? এ কি ব্যর্থতা না কি আত্মতুষ্টি? যার ফল ভোগ করতে হল সাধারণ মানুষদের!

যাঁদের সংসার তছনছ হয়ে গেল, তাঁদের কী দোষ ছিল? স্বজনহারা প্রত্যেক পরিবারের সঙ্গে সারা দেশবাসী সমব্যথী, ক্ষমাপ্রার্থী। আগামী দিনে যাতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে, প্রশাসনের কাছে তার দাবি তুলছি।

সুকুমার মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১৪৯

সুযোগসন্ধানী

ভূস্বর্গে জঙ্গি হানার পরপরই পর্যটকরা উপত্যকা ছাড়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তখনই আচমকা পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বগামী হল ফেরার বিমানের ভাড়া। বেসরকারি সংস্থা শ্রীনগর থেকে কলকাতা বিমানে নিয়ে যেতে ভাড়া হেঁকেছে ১৫ থেকে ২৬ হাজার! একেবারে মওকা বুঝে কোপ। দেশ যেখানে বিপন্ন, সহনাগরিকরা আক্রান্ত ও মৃত, সেখানে কি এই বেসরকারি সংস্থাগুলোর তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কোনও দায় নেই?

যে মানুষগুলো প্রাণভয়ে কাঁপছেন, তাঁদের থেকে এ রকম ভাড়া দাবি করে কী ভাবে! এই নিপীড়নও কি সন্ত্রাস নয়? শুধুমাত্র বিমানভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে বলাই নয়, পর্যটকদের নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করাও সরকারেরই দায়িত্ব।

অরিত্র মুখোপাধ্যায়, শ্রীরামপুর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Terrorist Politics

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}