মেলার মাঠে আড্ডায় মশগুল উজ্জ্বল, জিতেন্দ্র। — নিজস্ব চিত্র।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রাজনীতির ময়দানে বিরল সৌজন্য। পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি বিধানসভা এলাকায় প্রচারে বেরিয়ে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে আচমকা দেখা তৃণমূলের প্রবীণ নেতা উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের। কিছু ক্ষণের জন্য রাজনীতি ভুলে দুই পুরনো বন্ধু মজলেন অতীতের সুখস্মৃতি রোমন্থনে।
দু’জনের পথ চলা একই দলের হাত ধরে। সেই অর্থে বলতে গেলে, উজ্জ্বলের হাত ধরেই কংগ্রেসি রাজনীতিতে প্রবেশ জিতেন্দ্রের। পরবর্তী কালে দু’জনেই পাশাপাশি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু তার পর আসানসোলের দুই নেতার ‘দু’টি পথ দু’টি দিকে বেঁকে’ গেলেও সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়নি। তারই ঝলক মিলল শনিবার। কুলটি বিধানসভা এলাকার মধ্যে মিঠানি গ্রামে বসেছে মেলা। সেখানে জনসংযোগ করতে এসে তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমানের চেয়ারম্যান তথা স্থানীয় কাউন্সিলর উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির দেখা। জিতেন্দ্রকে দেখতে পেয়ে দু’হাত বাড়িয়ে উজ্জ্বল বলে ওঠেন, ‘‘আয় জিতেন, বোস এখানে!’’ তার পর দু’জনেই মেতে উঠলেন আড্ডায়। আন্তরিক ভাবে খবরাখবর নিলেন একে অন্যের বাড়ির। মেলায় বসে দু’জনের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষণ সৌজন্য বিনিময় চলে। তার পর জিতেন্দ্র চলে যান অন্যত্র প্রচারে। তার ঠিক আগে জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা আসানসোলের মানুষ। উজ্জ্বলদা আমার নেতা ছিলেন। ওঁর কাছে রাজনীতি করা শিখেছি। আজ দেখা হয়ে গেল। দাদার পরিবারের খবর জিজ্ঞেস করলাম। বৌদির খবর নিলাম।’’ আর উজ্জ্বল বললেন, ‘‘পরিচিতিটা তো আজকের নয়, অনেক দিনের। উনি এসেছিলেন, দেখা হল। ভাল লাগল। আমার শরীরের কথা জিজ্ঞেস করলেন। রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।’’
মিঠানি গ্রামে চলছে মেলা। সেই মেলায় জনসংযোগের সুযোগ হাতছাড়া করছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। ঠিক যেমন, শনিবার মেলায় প্রচার করতে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। তখনই তাঁর সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর উজ্জ্বলের দেখা হয়ে যায়। জিতেন্দ্রের দাবি, উজ্জ্বল তাঁকে বাড়িতে যেতে বলেছেন। খুব শীঘ্রই তিনি উজ্জ্বলের বাড়িতে দেখা করতে যাবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন জিতেন্দ্র।
রাজনীতির নাছোড় লড়াইয়ের যুগে রাজনৈতিক সৌজন্য ক্রমশ বিরল হয়ে উঠেছে। সেই দুনিয়ায় শনিবারের মিঠানি গ্রামের ঘটনা একমুঠো মিঠে বাতাসই বটে। যেখানে রাজনীতি ভুলে দুই শিবিরের দুই নেতা মেতে উঠলেন নিখাদ আড্ডায়। তবে, আসানসোলের পুরনো বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এই এলাকায় এমন রাজনৈতিক সৌজন্যের নজির নতুন নয়, বিরল তো নয়ই। তাঁরা বলছেন, পশ্চিম বর্ধমানের এই এলাকাগুলিতে এমন দৃশ্যেরও দেখা মেলে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা প্রচার সেরে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবার খাচ্ছেন। কোনও বিবাদ ছাড়াই একটি দণ্ডে দুই দলের পতাকা উড়ছে— এমন ছবিরও আকছার দেখা মেলে। উজ্জ্বল-জিতেন্দ্রের সাক্ষাৎ যেন সেই ঐতিহ্যই বহন করল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy