Advertisement
Back to
Anupam Roy

এই রাজনীতি শুধু গবেটদের আকর্ষণ করছে, ভুলতে চাই ‘সব পেলে নষ্ট জীবন!’

এক জন রাজনীতিককে আমি সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে দেখতে চাই না। এমন তো নয় যে, তাঁরা অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন! তাঁরা আমাদেরই মতো। আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ। নির্লোভ মানুষ যদি পৃথিবীতে কম থাকে, তা হলে নির্লোভ রাজনীতিকও কমই পাওয়া যাবে।

Bengali Singer Anupam Roy writes on the upcoming Lok Sabha Election 2024
অনুপম রায়
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০০
Share: Save:

‘ভাল’ একটি ভীষণ কঠিন শব্দ। সেই সঙ্গে আপেক্ষিকও। আমার কাছে যেটা ভাল, সেটা আপনার কাছে ভাল না-ও হতে পারে। আমার মনে হতেই পারে, লাউডস্পিকারে ফুল ভলিউমে সকাল-সন্ধ্যা আজান খুবই ভাল। কিন্তু সেই পাড়ায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের সেটা ভাল না-ও লাগতে পারে। তাঁদের মনে হতেই পারে, আজান চলুক। কিন্তু লাউডস্পিকারে পুরো এলাকা কাঁপানো মোটেই ভাল নয়। এখানে কোনটা ভাল? কে ঠিক করে দেবেন? আমার তো মনে হতেই পারে, ভাসানে মদ্যপান করে রাস্তায় নৃত্য করা খুব ভাল। অন্য দিকে, আমার প্রতিবেশীর সেটা ভাল না-ই লাগতে পারে।

তা হলে ‘ভাল’ কী?

নবীন বাড়ি যাওয়ার সময় ভুবনকে গালি দিয়েছিল। বিদ্যাসাগর মনে করেছেন, কাজটি ভাল নয়। সবাই কি তাই মনে করছেন? তা হলে রাস্তায়, বাসে, টিভিতে, ওটিটি-তে এত গালাগাল কেন? না কি কেউ ভাল হতে চায় না? না কি গালি দেওয়া খুব একটা খারাপ কাজ নয়? সে জন্য দেশের রাজনীতিকেরা আইটি সেল পুষেছেন? মানুষকে অশ্রাব্য গালাগাল করার জন্য? গোটা বিষয়টা বড় জটিল।

এসে গিয়েছি রাজনীতিকদের কথায়। এ ক্ষেত্রে, ‘ভাল’ মানে আমরা ধরে নিচ্ছি, শুধুমাত্র কিছু নৈতিক মূল্যবোধের কথা। যেমন, সত্যের পথে থাকা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, সম্মান, কৃতজ্ঞতা, দায়িত্ববোধ এবং আরও এ রকম বহু ভারী ভারী শব্দ। এক জন রাজনীতিককে আমি সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে দেখতে চাই না। এমন তো নয় যে, তাঁরা অন্য গ্রহ থেকে এসেছেন! তাঁরা আমাদেরই মতো। আমাদের মতোই রক্তমাংসের মানুষ। আমাদের মধ্যে যদি এই নৈতিক মূল্যবোধ কম থাকে তা হলে তাঁদের মধ্যে সেগুলো হঠাৎ একটু বেশি পরিমাণে থাকার কোনও কারণ আমি দেখি না। নির্লোভ মানুষ যদি পৃথিবীতে কম থাকে, তা হলে নির্লোভ রাজনীতিকও কমই পাওয়া যাবে।

মানুষ যদি এমন ধর্মান্ধ না হত, তা হলে কোনও রাজনীতিকের ক্ষমতা হত না রাজনীতিতে ধর্মকে এ ভাবে ব্যবহার করার। মানুষের পাশে থাকার জন্য রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই। চাইলে এমনিই থাকা যায়। তবু কারও যদি কোনও ‘ভিশন’ থাকে তা হলে তাঁর সক্রিয় রাজনীতি করাই ভাল। নেতা-মন্ত্রী হতে পারলে তবেই দেশের আইনকানুন বদলে ফেলা যায়। এটা ক্ষমতা। কিন্তু সেই ক্ষমতাই ‘নষ্ট’ করে। তাই ক্ষমতার লোভে প্রচুর বেনোজল ঢুকে পড়ে আমাদের সিস্টেমে। চলতে থাকে স্বজনপোষণ।

এই সমস্যা শুধু রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ, তা একদমই নয়। খেলার মাঠ থেকে কর্পোরেট দুনিয়া, বিনোদন জগৎ— সর্বত্র এক ছবি। অতএব, রাজনীতিকের সমস্যা এটা নয়। এটা মানুষের সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান একটাই— মানুষের প্রতিস্থাপন (রিপ্লেসমেন্ট)। কিন্তু তা কী করে সম্ভব! মানুষের ভাল আর এক মানুষ ছাড়া কে বুঝতে পারে? এ আই?

ভাল মানুষ, খারাপ মানুষ যেমন এক কথায় বিচার করা যায় না, তেমনই একজন রাজনীতিক ভাল না মন্দ, এত সহজে বলা যায় না। ভাল বক্তৃতা করেন কিন্তু চরম ঘুষখোর, তা হলে কি তিনি ভাল? দারুণ সৎ কিন্তু সাংগঠনিক কোনও ক্ষমতা নেই, তিনি কি ভাল? তা হলে তো এক এক জন মানুষের বিভিন্ন চারিত্রিক দিক ধরে ধরে ‘গ্রেড কার্ড’ তৈরি করতে হবে। সব মিলিয়ে ‘টোটাল’ করে ‘র‍্যাঙ্কিং’ করতে হবে। কিন্তু আমি তো বিচারক নই। আর এটা ‘জাজমেন্ট ডে’ও নয়। তাই কী দিয়ে মাপব ভাল-খারাপ? কেউ বলতেই পারেন, ‘‘আরে ধুর বাবা, একটা জেনেরিক ভাল-খারাপ ধরে নিয়ে কথা বললেই তো হয়!”

বেশ, চেষ্টা করে দেখি।

ধরা যাক, চুরি করা ভাল নয়। আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি শুধুমাত্র (কেন্দ্রের) বিরোধীদল চুরি করলে সেখানে ইডি, সিবিআই, হ্যান ত্যান…। কিন্তু (কেন্দ্রের) শাসকদলে নাম লেখাতে পারলে সে চুরি আর ‘অন্যায়’ নয়। অর্থাৎ চুরি করাও ‘ভাল’ যদি আপনি ক্ষমতার দিকে থাকতে পারেন। এ তো অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ। সবাই জানে। সারদা-নারদ-নেরুদা যা খুশি করে ক্ষমতার সঙ্গে হাত মেলালেই সব ভাল। তাই যতই নিয়ম থাকুক, নিয়ম ভাঙার কায়দাও রয়েছে। ভাল না খারাপ, তাই নিয়ে এত ভাবতে যাব কেন?

এ বার আসি কার ভাল, সে প্রসঙ্গে। ভাল তো কারও একটা হচ্ছেই। কিন্তু সেটা আমার-আপনার নয়। আমাদের সমস্যা হল, আমরা একটা অদ্ভুত ভাল চাই। একটা সামগ্রিক ভাল। গরিব, বড়লোক, মধ্যবিত্ত— সকলের ভাল। কিন্তু তা তো হতে পারে না। বিজ্ঞানেও এখনও চাঁদ, তারা, গ্রহদের জন্য আলাদা সমীকরণ। আর অণু-পরমাণুর ভিতরে আলাদা সমীকরণ। আলাদা হিসাব। আমাদের সমাজেও একই ব্যাপার। ‘ক’-এর ভাল করতে গেলে ‘খ’-এর ভাল হতে পারে না। ধরা যাক, বিত্তবানদের কাছ থেকে কর আদায় করা। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্তেরা আসলে কেউ আয়কর দিতে চায় না। প্রতি বার ভাবে, এ বার বাজেটে তাদের কথা ভাবা হবে। কর-এ যদি কিছু ছাড় পাওয়া যায়! ওই যে ৪ শতাংশ স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সেস, আয়করের উপর কেটে নিচ্ছে। ওটা যদি কমিয়ে ২ শতাংশ করে। যদি সারচার্জের ঊর্ধ্বসীমা এবং হার একটু পাল্টায়। কিন্তু কিচ্ছু হওয়ার নয়। কারণ, এই শ্রেণির জনসংখ্যা খুব বেশি নয়। অর্থাৎ, এই মানুষগুলোর ভোট অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদি গুরুত্ব পেত, তা হলে কালই আইন তৈরি করে এই শ্রেণিকে খুশি করা হত। তখন অবশ্য অন্য রকম কোনও কর বসিয়ে সেই টাকা ঠিক তুলে নেওয়া হত।

আমাদের দেশ গরিব। গরিবের সংখ্যা বেশি। তাই তাদের হাতে টাকা, বিরিয়ানি, কম্বল গুঁজে গুঁজে ভোট তোলা হয়। আর দেশের সবচেয়ে ধনীরা, রাজনীতিকদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ করে ফেলে— কী ভাবে, কে সরকারে থাকলে কার কী সুবিধা হতে পারে। চুপচাপ সব সহ্য করে কর দিয়ে যাওয়া হল আমরা যারা মাঝামাঝি জায়গায় আছি, তাদের মতো লোকের কাজ। এত টাকা যে আইনি বা বেআইনি ভাবে তোলা হয়, সকলের প্রশ্ন, সে সব যাচ্ছে কোথায়?

এখানেই যদি সেই প্রশ্নটা আর এক বার আসে— রাজনীতিকরা যদি ‘একটু ভাল’ হয়ে যান, তা হলে? তা হলে ওই টাকার হিসাব একটু হলেও মিলবে। নিশ্চিত ভাবেই দুর্নীতি একটু কমবে! তা হলে নিশ্চয়ই দেশের ঠিকঠাক উন্নতি হবে। তা হলে গুন্ডামি, তোলাবাজি, নির্বাচনী বন্ড— এগুলো কমবে।

আমরা সবাই জানি, এক শ্রেণির রাজনীতিক গুন্ডা পোষেন। দল চালাতে গেলে শুনেছি ‘বাহুবলী’ লাগে। গায়ের জোর ছাড়া শাসন করা যায় না। তাই সমাজবিরোধী বলে আমরা যাদের চিহ্নিত করি, তাদেরই দরকার হয় অনেক রাজনীতিকের। আগে এটা সীমিত ছিল শুধু ‘রিয়্যাল’ দুনিয়াতে। এখন সমাজমাধ্যমেও আইটি সেল চলে এসেছে। রাজনীতিকদের ‘ভার্চুয়াল’ ভাড়াটে গুন্ডা। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেখলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ‘লুম্পেন’ এসে গালাগাল দিয়ে চলে যাবে। এই ‘টক্সিক গবেট’গুলো কি আর কিছু পারে না? রাজনীতিকরা কি এদের ভাল পথে চালিত করতে পারেন না? তা না করে এদের বেতন দিয়ে বিরোধীদের গালাগাল দিতে পুষছেন? এটা একটা সিস্টেম? এই অলসগুলোকে খাটাতে পারলে দেশের জিডিপি নিশ্চিত ভাবে বাড়ত। গোঁজামিল দিতে হত না।

দুঃখের বিষয়, সত্যি সত্যি সমাজ বা দেশের ভাল করতে সকলে রাজনীতিতে আসেন না। বস্তুত, বেশির ভাগই আসেন না। মূলত ধান্দা এবং আখের গোছাতে আসেন। মানুষ মাত্রেই স্বার্থান্বেষী। রাজনীতিকরাও মানুষ। তাই আমরা এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করতে পারি না। এক দিকে দেশের বিশাল জনসংখ্যা। অন্য দিকে, অর্থসংগ্রহের উপায় বা সুযোগ খুব সীমিত। বিবাদ তো বাধবেই। মানুষের মধ্যে দক্ষতা নিয়েও ফারাক রয়েছে। সকলের মেধা সমান নয়। কিন্তু স্বপ্ন বেশির ভাগেরই বহুতল। তাই মেধার নিরিখে যিনি বেরিয়ে গেলেন তো গেলেন। যাঁরা পড়ে থাকলেন, তাঁদেরও তো সকলের ভাল কাজ চাই।

সেখানেই আসে রাজনীতি। আসে দল। যারা বলে, আমাদের ভোট দাও, আমাদের হয়ে গলা ফাটাও। আমরা তোমাদের ভাল করব!

ব্যস, একদল স্যাট করে ঢুকে যায়। ক্ষমতায় থাকলে অনেক কিছু সম্ভব। দাদা-দিদিদের খুশি রেখে বেশ কিছু ঢ্যাঁড়শ কাজ বাগিয়ে নেয়। রাজনীতিকরাও খুশি। দফতর ঢ্যাঁড়শে ভরে গেলে কী হবে, বছর বছর ভোট তো আসছে! ক্ষমতা থাকছে!

কিন্তু এই সিস্টেমটাই পচা। এই ঢ্যাঁড়শদের দেখে এদের চাইতেও পচা ঢ্যাঁড়শরা ভাবতে শুরু করে, আমরা কেন পাব না? অমুকের বৌয়ের ডিগ্রি নেই, এ দিকে সে স্কুলে পড়াচ্ছে! আমারও ডিগ্রি নেই, আমি কেন পারব না? আমিও পার্টি করি, আমাকে কেন দেখা হবে না? রাজনীতিক পড়ে মুশকিলে। কী করে সবাইকে খুশি রাখবে? এরাই তখন অন্য দল করে। জীবনে আদর্শ নিয়ে খুব কম মানুষই চলেন। রাজনীতিকই বা কেন চলতে যাবেন! অন্য দল এসে প্রমিস করে, এই লুম্পেনগুলোর ব্যবস্থাও তারা করে দেবে, যদি তারা ভোটে জেতে। ভোটে দেখা গেল, সেই লুম্পেনদের সংখ্যাই বেশি। ক্ষমতায় এসে গেল অন্য দল। এ বার প্রথম ব্যাচের ঢ্যাঁড়শদের সময় আর ভাল যাবে না, যদি না তারা রং পাল্টায়। কিন্তু নতুন লুম্পেনগুলোর এখন ভাল সময়। তাই আপনার-আমার না হলেও কারও না কারও একটা ভাল তো হচ্ছে!

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা যে এত দূর এসেছি, এটা কিন্তু কম কথা নয়। কেউ ভাবেনি ভারত পারবে। এক বারও কিন্তু ভারতীয় সেনাকে নামতে হয়নি আমাদের সামলাতে। এত প্রচার, এত মিথ্যা, এত দুর্নীতির পরেও যে আমরা টিকে আছি, সেটাই বা মন্দ কী! সব রাজনীতিক খারাপ বা অপদার্থ এমন তো নয়। কিছু বিচক্ষণ রাজনীতিক দেশের মানুষের কথা সত্যিই ভেবেছেন। তাই হয়েছে। তাঁরা হয়তো সংখ্যায় কম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। বহু দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক কিছু ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার কিছু ভাল রাজনীতিক ভুল করেছেন। সব মিলিয়ে তালেগোলে ভারত এগিয়েছে।

আমার বাবা সরকারি স্কুলে পড়েছেন। মা সরকারি স্কুলে পড়েছেন। আমি নিজে মাত্র ১৮ টাকা বেতন দিয়ে চার বছর কলেজে পড়েছি। আমি তো নিজেই উপকৃত! দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনীতিকেরা যে সিস্টেম বানিয়ে গিয়েছেন, তার কিছু ফল তো আমরাও পেয়েছি। একদম অকৃতজ্ঞ ঠিক নই। কিন্তু সেখানেই সব শেষ নয়। আমাদের কিছু ভাল না লাগলে সেটা ব্যক্ত করারও অধিকার আছে। কোনও এক রাজনীতিকের সমালোচনা করলে আমি রাতারাতি ‘দেশদ্রোহী’ হয়ে যাই না! শাসকদলের বিপরীত মত পোষণ করলেও আমি ভারতীয়ই থাকব। এই সামান্য বাক্‌স্বাধীনতার জায়গাটুকু কি রাজনীতিকেরা আমাদের দিতে পারেন না? দেশের রাজনীতি যে দিকে এগোচ্ছে, তা মূলত বাহুবলী, মাফিয়া, চোর এবং গবেটদের আকর্ষণ করছে। সেখানে দাঁড়িয়ে সিস্টেমটা একটু ভাল হয়ে গেলে বিচক্ষণতা পেতে পারি। পেতে পারি অর্থনীতির প্রকৃত উন্নতি। পেতে পারি গণতন্ত্র এবং সংবিধানের সুরক্ষা। নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম। পেতে পারি উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা, উন্নত সরকারি স্কুল ও কলেজ। কেউ যেখানে রাতারাতি আমাদের ইতিহাস বদলে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।

আমাদের মধ্যে থেকেই তো উঠে আসেন রাজনীতিকরা। আমাদেরই প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা। তাই যা করার আমাদেরই করতে হবে। পারব কি না জানা নেই। আসলে ওই লাইনটাই ঠিক— সব পেলে নষ্ট জীবন!

(লেখক গায়ক এবং সুরকার। মতামত নিজস্ব)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy