পাতার ঝক্কি পোহাতে না হয়, তাই টি-ব্যাগ দিয়ে চা বানিয়ে পান করেন? নন-স্টিক বাসনে রান্নায় অনেক সুবিধা? কিন্তু সুখের জন্য শান্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না তো? আপনার হেঁশেলের কিছু জিনিস আপনার শরীরের ক্ষতি করছে, জানেন কি?
খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার উপর আপনার হরমোনের ভারসাম্য নির্ভর করে। হরমোনজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে আপনার অজান্তেই। সম্প্রতি গুরুগ্রামের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অঞ্জলি কুমার রান্নাঘরের এমন কিছু জিনিসের তালিকা দিয়েছেন, যা মহিলাদের হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
হেঁশেলের এমন কিছু জিনিসের তালিকা দিয়ে চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব, সেই জিনিসগুলি সরিয়ে ফেলতে হবে। কী সেগুলি?
১. প্লাস্টিকের পাত্র
বেশির ভাগ প্লাস্টিকের পাত্রে বিপিএ বা বিসোফেনল এ নামে এক রাসায়নিক থাকে, যা হরমোনের নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই, প্লাস্টিক সরিয়ে কাচ বা স্টেনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা উচিত।
২. নন-স্টিক বাসন
নন-স্টিক প্যানগুলি থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক নির্গত হয়, যা থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নন-স্টিক পাত্রগুলি ক্ষয়ে যেতে থাকে। আর সেখান থেকেই খাবারের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থ মিশে যায়। এগুলির পরিবর্তে তাই ঢালাই লোহা বা স্টেনলেস স্টিল ব্যবহার করা উচিত।

প্লাস্টিকের পাত্রের মতোই প্লাস্টিকের মোড়কও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
৩. পরিশোধিত রান্নার তেল (রিফাইন্ড অয়েল)
পরিশোধিত রান্নার তেল হরমোনের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, কারণ এগুলি প্রক্রিয়াজাত। শরীরে প্রদাহজনিত রোগের সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, রিফাইন্ড অয়েলের বদলে ঘি, নারকেল তেল বা কোল্ড প্রেসড তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. টি-ব্যাগ
টি-ব্যাগ অবশ্যই সুবিধাজনক। কিন্তু জানেন কি, অধিকাংশ টি ব্যাগ তৈরি হয় মাইক্রোপ্লাস্টিক দিয়ে? ফলে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া আরামদায়ক হলেও, তা ক্ষতি করছে শরীরের। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে টি-ব্যাগ। তাই টি-ব্যাগ ছেড়ে চা পাতার উপর ভরসা রাখা উচিত।
৫. টিনজাত খাবার
বেশির ভাগ টিনজাত খাবারে বিপিএ-র আস্তরণ থাকে। খাবারের মধ্যে সেগুলি প্রবেশ করতে পারে। ফলে হরমোনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া আরামদায়ক হলেও, তা ক্ষতি করছে শরীরের। ছবি: সংগৃহীত।
৬. অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে খাবার মুড়িয়ে রাখার অভ্যাস রয়েছে? কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম যে খাবারে মিশে যেতে পারে, তা জানতেন? বিশেষ করে গরম খাবার বা অ্যাসিডিক খাবারের ক্ষেত্রে এই ভাবেই বিষক্রিয়া ঘটে।
৭. প্লাস্টিকের মোড়ক
প্লাস্টিকের পাত্রের মতোই প্লাস্টিকের মোড়কও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এগুলিতে এমন রাসায়নিক থাকে, যা খাবারের সংস্পর্শে এলে হরমোনজনিত সমস্যা হতে পারে। বরং কাচের পাত্র ব্যবহার করা নিরাপদ।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন প্রয়োজন, যেমন খাদ্যাভ্যাস ঠিক করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ইত্যাদি। সামগ্রিক সুস্থতার জন্য হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। আর তাই চিকিৎসকের পরামর্শ, প্রাত্যহিকের ব্যবহার্য জিনিসপত্রগুলি সম্পর্কে ভাল ভাবে জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে রান্নাঘর থেকে সেগুলি সরিয়ে ফেলতে হবে চিরতরে।