—ছবি রয়টার্স।
টেরেসা মে কাঁটার মুকুটখানি নামাইয়া রাখিতে পারিলেন না, এবং মুকুট আরও কণ্টকময় হইল। তাঁহার গদি আপাতত বাঁচিল বটে, কিন্তু তাঁহার ব্রেক্সিট সূত্র বাঁচে নাই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হইতে ব্রিটেনের বাহির হইয়া যাইবার জন্য প্রয়োজনীয় ‘ডিল’ বা চুক্তিপত্রটি ৩১ মার্চের মধ্যে আইনসভায় পাশ করানো দরকার। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মে-র প্রস্তাবিত চুক্তিপত্রটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কার্যত অভূতপূর্ব ভোটের ব্যবধানে পরাজিত। তাঁহার কনজ়ার্ভেটিভ দলের অনেক সদস্যও বিপক্ষে ভোট দিয়াছেন। ইহার পরেই প্রধানমন্ত্রী অনাস্থা ভোটের পরীক্ষায় কোনও ক্রমে উত্তীর্ণ। তবে তাহার পরিণাম— আরও অনেক বিনিদ্র রজনী। এখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে নিজের দল এবং অন্যান্য দলের নেতানেত্রীদের স্বমতে টানিবার জন্য দৌড়াদৌড়ি করিতে হইতেছে। চুক্তিপত্র না বদলাইলে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাওয়া অসম্ভব। আবার চুক্তিপত্র বদলাইতে হইলে ইইউ-এর পরোক্ষ অনুমোদন আবশ্যক। হয়তো শেষ অবধি একটি গোঁজামিল প্রধানমন্ত্রী খুঁজিয়া পাইবেন। হয়তো বা কোনও চুক্তি ছাড়াই সর্বব্যাপী অনিশ্চিতির মধ্যে ব্রিটেনের মহানিষ্ক্রমণ ঘটিবে— লেবার নেতা জেরেমি করবিন ‘চুক্তি চাই’ বলিয়া ধনুর্ভঙ্গ পণ করিয়া বসিয়া আছেন বটে, কিন্তু তাঁহার দলের একটি বড় অংশ তাঁহার সহিত একমত নহেন। ব্রেক্সিটের প্রশ্নে দ্বিতীয় বার গণভোটের কথাও হাওয়ায় ভাসিতেছে, কিন্তু তাহার বাস্তব সম্ভাবনা, অন্তত এই মুহূর্তের পরিস্থিতি বিচারে, প্রবল নহে। আরও একটি অনাস্থা ভোটের ছায়াও টেরেসা মে-র মাথার উপরে আছে, তবে আপাতত তাহাও ছায়ামাত্র। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই যে, টেরেসা মে ফাঁদে পড়িয়াছেন!
ব্রেক্সিট নামক উভয়সঙ্কটটির চরিত্র এক অর্থে জটিল, অন্য অর্থে সরল। জটিল, কারণ ব্রিটেন এবং ইউরোপের পারস্পরিক সম্পর্কের অনেকগুলি সমস্যা রহিয়াছে, যাহার কোনও সরল সমাধান নাই। তাহার সহিত যুক্ত আয়ারল্যান্ড প্রশ্ন, যাহা ব্রিটেনের ইতিহাসের এক কণ্টকিত উত্তরাধিকার। সেই জটিলতার আলোচনা অন্যত্র। কিন্তু সঙ্কটের মূলে আছে একটি সরল সত্য: ব্রিটেন নামক দেশটি আজও আপন ইতিহাসের সহিত একটি বাস্তবসম্মত বোঝাপড়ায় আসিতে পারে নাই। যে যুগে মহাদেশের এই ‘প্রান্তিক’ দ্বীপরাষ্ট্রটির সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যাইত না, তাহা এখন সুদূর অতীত— কেবল সময়ের বিচারে নহে, অর্থনীতির বিচারেও। ব্রিটেন আজও দুনিয়ার ‘পঞ্চম’ বৃহৎ অর্থনীতি, কিন্তু কেবল অর্থনীতির আয়তন দিয়া অর্থনৈতিক গুরুত্বের পরিমাপ হয় না। বাস্তবকে স্বীকার করিতে চাহিলে ব্রিটেনকে মানিতে হইবে— একা নহে, ইউরোপের অংশী হিসাবেই সে গুরুত্বপূর্ণ থাকিতে পারে। বস্তুত, ইইউ-এর রাষ্ট্রগুলি তাহাকে এ বিষয়ে অনেক দূর অবধি সহযোগিতায় প্রস্তুত। কিন্তু অনেকের মধ্যে এক হইয়াই তাহাকে আপন ভবিষ্যৎ রচনা করিতে হইবে, ‘একলা চলো রে’ বলিয়া অগ্রসর হইতে চাহিলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ব্রেক্সিট নামক প্রস্তাবনাটি এই বাস্তববোধের পরিচয় দেয় না। ডেভিড ক্যামেরন তাহা জানিতেন, কিন্তু কট্টর ইউরোপ-বিচ্ছেদপন্থীদের কোণঠাসা করিবার অতিচতুর কৌশল হিসাবে তিনি গণভোট ডাকিয়া দেন। তিন বছর আগেকার সেই বিচিত্র সিদ্ধান্ত আজ বুমেরাং হইয়া তাঁহার উত্তরসূরিকে তাড়া করিতেছে, দেশকেও। নিজের সহিত বোঝাপড়া না করিয়া ব্রিটেনের নিস্তার নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy