সামাজিক মাধ্যম যেন এক উদ্বেগজনক প্রবণতার চারণভূমি হয়ে উঠছে দিনে দিনে। খোলা জানালা দিয়ে খোলা হাওয়া চারিয়ে যাবে আশা ছিল। কিন্তু বিষ বাতাসের আনাগোনাও সমান তালে।
‘বেপর্দা’ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার দায়ে কখনও তুমুল ঝড়ের মুখে পড়ে যান সানিয়া মির্জা বা মহম্মদ শামির স্ত্রী। কখনও সূর্য নমস্কারের ‘অপরাধে’ প্রবল সমালোচনার বিদ্ধ হন, রক্তাক্ত হন মহম্মদ কাইফ।
আবার নিজেদের রাজনৈতিক মত বা সামাজিক মত ব্যক্ত করে দেশদ্রোহী, ভারতবিদ্বেষী, জাতির শত্রু আখ্যা পান ওম পুরী, কানহাইয়া কুমাররা। অশ্রাব্য ভাষার বান ডাকে।
বিদ্বেষের কারবারিদের তুমুল দাপট আজ সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশ জুড়ে, দেশের বাইরেও। সমাজের একটা আদ্যন্ত নেতিবাচক মুখ যেন দৈত্যাকার হয়ে ফুটে উঠছে সামাজিক মাধ্যমে। বিদ্বেষে বিহ্বল এক সমাজ, কট্টরবাদে ন্যূব্জ এক সমাজ, অসহিষ্ণুতায় ছটফট করতে থাকা এক সমাজের মুখচ্ছবি স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলতে কারা যেন উদ্দাম, উন্মত্ত! মুক্তচিন্তার সব উৎসকে নিশ্চিহ্ন করতে এরা সদা তৎপর। মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা কেউ বললেই, এরা তাঁর কণ্ঠরোধ করতে তৎক্ষণাৎ রণমূর্তি।
এই বিদ্বেষের কারবারটা চলছে আবার ধর্মের মোড়কে, দেশভক্তির মোড়কে, কিয়ৎ জাতীয়তাবাদের মোড়কে। উগ্রবাদী, কট্টরবাদী জিগির উঠছে ঘন ঘন। সেই তুমুল কোলাহলের মাঝে ধর্ম, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদের ধারণাগুলোকে গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
উগ্রতায় আসলে এক অদ্ভুত নেশা রয়েছে। সে নেশায় বুঁদ হতে পারলে এবং বুঁদ করতে পারলে বেকারত্ব, অনুন্নয়ন, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা, রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা দুর্নীতি-সহ অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়, ভুলিয়ে রাখা যায়। আর সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেই সবচেয়ে দ্রুত নেশাটাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। তাই গোঁড়ামির উর্বর জমি তৈরির চেষ্টা সোশ্যাল মিডিয়াতেই।
পরস্পরের বিপ্রতীপ শিবিরে অবস্থানকারী গোঁড়়া মানুষদের মধ্যে বিরোধ প্রবল। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিষয়ে তাঁদের মধ্যে মিলও বিস্তর। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব গোঁড়া মানুষের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হল পরমতের প্রতি তীব্র অসহিষ্ণুতা, অন্ধত্ব, আগ্রাসন, বিদ্বেষ পোষণ। এই সমুদ্র পরিমাণ বিদ্বেষ নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়ছেন উগ্রতার সাধকরা। মাঝখানে যিনি আটকে পড়েছেন, তিনি উলুখাগড়া। তাঁর নাম রামা কৈবর্তও হতে পারে, হতে পারে রহিম শেখও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy