—প্রতীকী ছবি।
জিহ্বার উচ্চারণে শান্তির অঙ্গীকার। আগ্নেয়াস্ত্রের উচ্চারণে অপরিসীম আক্রোশ। এই দুই উচ্চারণ হাতে হাত রেখে চলতে পারে না কিছুতেই। কিন্তু ভারতের প্রতিবেশী সেই অদ্ভুত এবং দুর্বোধ্য দ্বিচারিতাই চালিয়ে যাচ্ছে অবিশ্রান্ত!
সাম্প্রতিক অতীতে ভারতে যত বার সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে, তত বারই বিশ্বের এক বড় অংশের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। উরি হামলার পরে তা বেনজির পর্যায়ে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রকদের অধিকাংশই খুব স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে আর কোনও আলোচনাতেই যে আগ্রহ নেই, ভারতও সে কথা বেশ সোজাসাপটা জানিয়েছে।
এ হেন পরিস্থিতিতে হঠাৎই ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সন্ত্রাসের সড়ক থেকে কূটনীতির সড়কে আনার বার্তা দিতে শুরু করল ইসলামাবাদ। নওয়াজের সরকার কখনও মার্কিন কখনও ব্রিটিশ রাষ্ট্রের দ্বারস্থ হল, ভারতকে আলোচনায় ফেরাতে উদ্যোগী হওয়ার আর্জি নিয়ে। সরতাজ আজিজ আগ বাড়িয়ে জানিয়ে দিলেন, ডিসেম্বরে অমৃতসরে অনুষ্ঠিতব্য আফগানিস্তান বিষয়ক সম্মেলনেও পাকিস্তান যোগ দেবে।
মুদ্রার এক পৃষ্ঠে যখন সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ফেরানোর এত তাগিদ, তখন অন্য পৃষ্ঠে অপরিমেয় গোলা-বারুদ, রক্তপাত, চরম হিংসা। নিয়ন্ত্রণ রেখায় রোজ সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামে জনজীবন রোজ একটু একটু করে ধসে পড়ছে। মাঝে মাঝেই মৃত্যুর খবর আসছে। জঙ্গি অনুপ্রবেশের আশঙ্কা জাগছে। আর ভূস্বর্গে জঙ্গি ঢোকানোর লক্ষ্যে পাক সেনা আর সন্ত্রাসবাদীদের যৌথ প্রয়াস ব্যর্থ হওয়ার পর, পলায়নোদ্যত দুর্বৃত্তেরা কোনও জওয়ানকে একা পেয়ে দেহটা ছিন্নভিন্ন করে ফেলে রেখে যাচ্ছে!
ঠিক কী চায় পাকিস্তান? শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান? মৈত্রী? নাকি চরম শত্রুতা? পাকিস্তানের মুখ দেখে আঁচ করা যাচ্ছে না সে কথা।
ভয়ঙ্কর, বীভৎস এবং নৃশংস যে মুখাবয়বটা পশ্চিম দিগন্তে মাঝেমধ্যেই আবির্ভূত হচ্ছে, তার ছায়ায় আপাতত ঢাকা পড়ে গিয়েছে সহাবস্থানের যাবতীয় বার্তা। কেন এমন দ্বিধাদ্বন্দ ইসলামাবাদের, তা স্পষ্ট নয়। সরকার আর সেনায় কি বিভাজন রয়েছে? নওয়াজ শরিফের চিন্তাভাবনা যে দিশায় প্রবাহিত, রাহিল শরিফের পরিকল্পনার গতি কি তার উজানে? জল্পনা অনেক, কিন্তু স্পষ্ট জবাব নেই। আর যত ক্ষণ এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাবটা নেই, তত ক্ষণ ইসলামাবাদের ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো ইচ্ছাটাও বোধ হয় দিল্লির তরফে নেই।
ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কে এই প্রবল টানাপড়েন গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থির রাখবে। নিয়ন্ত্রণ রেখা সাক্ষী, দায়ী থাকবে ইসলামাবাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy