Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
TMC

সদিচ্ছা

রাজ্যজোড়া দুর্নীতির মহাপ্লাবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভাবমূর্তি শোধরানোর এই চেষ্টাটির কারণ বোঝা তাই কঠিন নয়। কঠিন হল ছবিটিকে পাল্টানো।

Subrata Bakshi.

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৫৫
Share: Save:

আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে যদি কোথাও কোনও বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে না পারেন, তবে তিনি বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা দলের অন্য কোনও শীর্ষনেতা দাঁড়িয়ে থেকে সেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। জনস্মৃতি স্বভাবত দীর্ঘস্থায়ী নয়। তবু ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা পশ্চিমবঙ্গ ভোলেনি। শ্রীবক্সী নিজেও স্বীকার করেছেন যে, ২০১৮-র গা-জোয়ারির কুপ্রভাব পড়েছিল পরের বছর লোকসভা নির্বাচনের ফলে। রাজ্যজোড়া দুর্নীতির মহাপ্লাবনের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভাবমূর্তি শোধরানোর এই চেষ্টাটির কারণ বোঝা তাই কঠিন নয়। কঠিন হল ছবিটিকে পাল্টানো। এ কথা সত্য যে, গত দফার তুলনায় এই বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যে হিংসার স্রোত ক্ষীণতর। তা যদি নেহাত কাকতালীয় না হয়, যদি সত্যিই গত বারের ভয়াবহতা থেকে রাজ্যের শাসক দল আত্মসংশোধনের কথা ভেবে থাকে, তবে তা স্বাগত। কিন্তু, রাজনীতিতে প্রতিশ্রুতি এবং তার বাস্তবায়নের মধ্যে ফারাক এমনই দুস্তর যে, নেহাত মুখের কথায় ভরসা করা মুশকিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও যেমন বলেছেন যে, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করবেন না— ‘করে খাওয়ার মানসিকতা’-কে তাঁরা বরদাস্ত করবেন না বলেই জানিয়েছেন। এই কথাটিও রাখতে পারলে ভাল, কিন্তু আদৌ সেই সদিচ্ছা আছে কি না, রাজ্য রাজনীতি সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। তবে, রাজনৈতিক হিংসা এবং দুর্নীতি, এই দুই যে একই মুদ্রার দু’টি পিঠ, তা নিয়ে সংশয় নেই।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সুব্রত বক্সীর কথায় যে ‘উদ্বেগ’ ধরা পড়েছে, এক অর্থে তা স্বাভাবিক। ২০১৮-র তুমুল হিংসা থেকে দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের লাভ হয়েছিল কতটুকু? পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী ইতিহাস দেখলে স্পষ্ট হয় যে, এই রাজ্যের ভোটারদের মধ্যে আশ্চর্য স্থিতিজাড্য রয়েছে— যে দল রাজ্যে ক্ষমতাসীন, তার হারার সম্ভাবনা অতি প্রকট না হওয়া অবধি পঞ্চায়েত নির্বাচনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসক দলই জিতেছে। ইতিহাসকে সাক্ষী মানলে বলতে হয়, হিংসা না হলেও হয়তো ২০১৮-তে অধিকাংশ পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলেই থাকত। যে ক’টি হাতছাড়া হত, তাতে বৃহত্তর অর্থে ক্ষতি হত না। তা হলে এই হিংসা কেন? দুর্জনে বলবে, তার কারণ হল, খাজনা আদায় করার জন্য সব পঞ্চায়েতের দখল হাতে থাকা দরকার। খাজনা আদায়, অর্থাৎ রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন পথে অর্থোপার্জন। যাঁরা আক্ষরিক অর্থেই ‘তৃণমূল’ স্তরে— অর্থাৎ গ্রাম, পঞ্চায়েত বা ব্লক স্তরে— খাজনা আদায় করে থাকেন, তাঁদের কাছে ওই পঞ্চায়েতটুকুই দুনিয়া। দল রাজ্যজয় করলেও যদি নিজের পঞ্চায়েতটুকু হাতছাড়া হয়, তবে সর্বনাশ। সেই ক্ষুদ্রের দখল রাখার জন্য যা করার, তাঁরা করেছেন। হিংসার স্রোত তারই পরিণাম। উল্লেখ্য যে, বাম আমলেও পঞ্চায়েত নির্বাচন হিংসাত্মকই হত। এবং, একই কারণে।

দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আর তৃণমূল স্তরের স্বার্থ স্পষ্টতই সমানুবর্তী নয়। দলের শীর্ষ নেতারা যা-ই বলুন, যে হুমকিই দিন, নিজস্ব আর্থিক স্বার্থকে ছাপিয়ে সে দিকে কান দেওয়ার মতো লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয় বলেই আশঙ্কা হয়। অতএব, হিংসা যদি ঠেকাতে হয়, তবে খাজনা আদায়ের সংস্কৃতির মূলোচ্ছেদ করা প্রয়োজন। ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের টিকিট দেব না’— এই কথাটি কার্যত অর্থহীন। কারণ, শোনা যায়, শিল্পহীন পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের রাজনীতিই নাকি এখন কর্মসংস্থানের সর্ববৃহৎ ক্ষেত্র। সেই কর্মসংস্থানের ধারা বজায় রাখতে গেলে খাজনা আদায় বিনা গতি কী? প্রশ্নটি আসলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের চেয়ে অনেক বড় মাপের— কোন পথে হাঁটলে খাজনা আদায়ে মৌন সম্মতি না দিয়েও দলীয় রাজনীতি পরিচালনা করা সম্ভব, শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সে কথা ভাবতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC West Bengal Panchayat Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy